দুর্গা পুজোর অবসরে হিন্দু জাতীয়তাবাদ জাগরণের চেষ্টায় কসুর করছে না বিজেপি। তার পাল্টা সংহতির বার্তাকে সামনে রাখল কংগ্রেস। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় কলকাতায় ‘মুদিয়ালি আমরা ক’জন’ দুর্গা পুজো কমিটির পুজো উদ্বোধন করলেন বাংলায় এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক এবং জম্মু ও কাশ্মীরের কংগ্রেস পরিযদীয় দলনেতা গুলাম আহমেদ মীর। মেটিয়াবুরুজ এলাকায় ওই পুজোর উদ্যোক্তা দক্ষিণ ২৪ পরগনা (১) জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মহম্মদ মুক্তার। পুজোর আয়োজনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্য। বাংলার দুর্গোৎসবে কোনও ধর্মীয় গোঁড়ামি নেই, এই বার্তাই পুজোর মঞ্চ থেকে দিতে চেয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। মীরের বক্তব্য, ‘‘পণ্ডিত নেহরু বলতেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্ম-বিমুখতা নয়। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে রাষ্ট্রের কোনও ধর্ম হবে না। তাই বিভিন্ন ধর্মের আচারে ভিন্নতা থাকলেও, উৎসবে আমরা এক হয়ে যাই।’’ উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, অমিতাভ চক্রবর্তী, তাপস মজুমদার, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, পার্থ ভৌমিক, মিতা চক্রবর্তী প্রমুখ।
কলকাতায় এসে হাওড়া, বেহালা ও নিমতলায় আরও পুজো মণ্ডপেও গিয়েছেন মীর। দু’দিন আগে কলকাতায় পুজো উদ্বোধনে এসলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলেছিলেন, তার পাল্টা বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্থার প্রসঙ্গ তুলেছেন এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক। মীরের মতে, ‘‘শাহ এবং বিজেপির নেতারা আগে উত্তর দিন, যদি তাঁদের বাংলা-বাঙালির সঙ্গে এতই সখ্য থাকে, তা হলে বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বাঙালিদের উপরে অত্যাচার করা হচ্ছে কেন? এটা ওঁদের দ্বৈত চরিত্র। এক দিকে বাংলায় কথা বললে তাঁদের বাংলাদেশী বলে হেনস্থা করবে, অন্য দিকে বাংলায় এসে বিদ্যাসাগরের কথা মনে পড়বে!’’ তাঁর দাবি, ‘‘বাঙালিদের উপরে বিভিন্ন রাজ্যে অত্যাচারের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথমে ক্ষমা চাওয়া উচিত।’’
বীরভূমের রামপুরহাটে এ দিনই ‘অপারেশন সিঁদুর’ থিমের উদ্বোধন করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় এই ‘সিঁদুর’ থিমে দুর্গা পুজোর আয়োজনের মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাফল্য তুলে ধরা হয়েছে। অনেক জায়গাতেই পুলিশ এসে কালো কাপড় দিয়ে মণ্ডপ ঢেকে দিচ্ছে। কিন্তু রামপুরহাটের মহিলাদের পরিচালিত দুর্গা পুজোর কমিটি তাদের থিমের মণ্ডপ রক্ষা করতে পেরেছেন।’’ বাঙালি হেনস্থা প্রসঙ্গে শমীকের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘আগেও এখান থেকে বাইরে যারা কাজ করতে যেত, তাদের অনেকেই দেখা যেত বাংলাদেশী, রোহিঙ্গা। কোথা থেকে আসছে জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিতে পারত না, কিন্তু কোথায় পরিচয়পত্র পেয়েছে, জিজ্ঞেস করলেই বলত বারাসত, মধ্যমগ্রাম, শিলিগুড়ি ইত্যাদি। তখন বাইরের রাজ্যের লোকজন বলত, যারা রোহিঙ্গা, তারাও বাংলায় কথা বলছে। এদের আলাদা করবে কী ভাবে?’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)