Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বৌ থাকতেও স্নেহাশিসের অপেক্ষায় দুই কনে

এক ‘স্ত্রী’ আছে স্নেহাশিসের। তা সত্ত্বেও তাকে দ্বিতীয় বিয়েতে উৎসাহ দিচ্ছেন তার অভিভাবকেরা। কেননা সৎ পাত্রের বড়ই অভাব!

পায়েল। ফাইল চিত্র

পায়েল। ফাইল চিত্র

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯ ০২:১৬
Share: Save:

এক ‘স্ত্রী’ আছে স্নেহাশিসের। তা সত্ত্বেও তাকে দ্বিতীয় বিয়েতে উৎসাহ দিচ্ছেন তার অভিভাবকেরা। কেননা সৎ পাত্রের বড়ই অভাব!

স্নেহাশিস মানুষ হলে এই দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে তার কপালে নিন্দেমন্দ জুটত। আটকাত আইনেও। কিন্তু কেঁদো রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে এই নিয়ে খোঁটা দেয় সাধ্য কার! তাকে আইনটাইনই বা দেখাতে যাবে কে?

রাজ্য জু অথরিটির খবর, শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে শীলা নামে এক বাঘিনির সঙ্গে রীতিমতো গুছিয়ে সংসার করছে বছর সাতেকের বাঘ স্নেহাশিস। ছানাও হয়েছে। এ-হেন স্নেহাশিসকেই আলিপুর চিড়িয়াখানার দুই বাঘিনি পায়েল ও রূপার সম্ভাব্য পাত্র হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। জু অথরিটির সদস্য-সচিব বিনোদকুমার যাদব বলেন, ‘‘চিড়িয়াখানার অন্দরে বাঘের প্রজননের জন্যই এই সিদ্ধান্ত। আগামী রবিবার আলিপুর চিড়িয়াখানার এক দল প্রতিনিধি বেঙ্গল সাফারি পার্কে যাবেন। আগামী সপ্তাহেই স্নেহাশিস আলিপুরে আসতে পারে।’’

আলিপুরে কি তবে পাত্র কম পড়ল? চিড়িয়াখানার কর্তারা বলছেন, পাত্র কম পড়েনি। তবে যে-চারটি বাঘ রয়েছে, তাদের কেউই সৎ পাত্র নয়। চিড়িয়াখানাতেই জন্ম সাদা বাঘ বিশাল এবং বাঘিনি রূপার। হলদে-কালো ডোরাকাটা বাঘিনিদের কোনও দিনই মনে ধরেনি বিশালের। রূপার কাছেপিঠেই ঘুরঘুর করত সে।

কিন্তু পরিবারে জিনগত বৈচিত্রের কথা মাথায় রেখেই দু’জনের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে দেন চিড়িয়াখানা-কর্তৃপক্ষ। সেই ইস্তক তার মধ্যে কেমন যেন বৈরাগ্য এসে গিয়েছে! খাওয়াদাওয়া ঠিকই আছে। ঘুমেও ঘাটতি নেই। আড়মোড়া ভাঙা-টাঙা সবই ঠিকঠাক চলছে। কিন্তু প্রেমে মোটেই আগ্রহ নেই তার। ২০১৬ সালে রূপার পাত্র হিসেবে ওড়িশার নন্দনকানন থেকে সাদা বাঘ ঋষিকে আনা হয়েছিল। সে শ্বশুরবাড়িতে জাঁকিয়ে বসেছে বটে, কিন্তু রূপার সঙ্গে ভাব জমেনি।

রয়েছে সুন্দরবনের উদ্ধার হওয়া বাঘ রাজাও। কিন্তু সে মেজাজেই ‘রাজা’। রানি নামে বাঘিনিকে তার মনে ধরেনি। সুন্দরবনের অন্য একটি বাঘও প্রেমরসে মজতে নারাজ।

ঋষির সঙ্গেই আলিপুরে এসেছিল স্নেহাশিস, শীলা, পায়েল। পায়েল থেকে গেলেও ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শিলিগুড়ি পাড়ি দেয় স্নেহাশিস ও শীলা। গত বছরের মাঝামাঝি তিনটি সন্তান হয় তাদের। আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত বলছেন, ‘‘স্নেহাশিস এখন তাগড়া জোয়ান। প্রজননের ক্ষেত্রে ওর সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পায়েলের বয়স ন’বছর। রূপার বয়স তুলনায় একটু বেশি। তবে শারীরিক ভাবে সে-ও সুস্থ।’’

চিড়িয়াখানার খবর, ২০০৫ সালে রূপা জন্মেছিল সাদা বাঘ অনির্বাণ এবং হলদে-কালো ডোরাকাটা বাঘ কৃষ্ণার সংসারে। ২০০৬ সালে জন্মায় বিশাল। আশিসবাবু জানান, তার পরে আর কোনও বাঘ জন্মায়নি আলিপুরে। অনির্বাণ মারা গিয়েছে। বুড়িয়ে যাওয়া কৃষ্ণা এখনও রয়েছে। সব মিলিয়ে ন’টি বাঘ রয়েছে চিড়িয়াখানায়।

চিড়িয়াখানার কর্তারা জানান, বাঘের বিয়ে দেওয়াও যেমন-তেমন ব্যাপার নয়। বাঘ-বাঘিনিকে পাশাপাশি খাঁচায় রাখতে হয়। পারস্পরিক ভাব বিনিময় হলে তবেই দু’জনকে পাঠানো হয় এক খাঁচায়। মধুচন্দ্রিমা পর্ব মিটলে ফের দু’জনকে আলাদা খাঁচায় সরিয়ে দেওয়াটাও কম ঝক্কির নয়! এই সব ব্যাপারে অবশ্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তবু নিশ্চিত হতে পারছেন না তাঁরা।

দুর্ভাবনা থাকছে, নাকউঁচু পাত্রীদের এই পাত্র পছন্দ হবে তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE