ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনকে (এসআইআর) কেন্দ্র করে মৃত্যু, বুথ লেভল অফিসারদের (বিএলও) অসুস্থতার অভিযোগ অব্যাহত। এই আবহে এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে নাগরিক-সহায়তার পাশাপাশি প্রতিবাদ-কর্মসূচিও চালাচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এরই মধ্যে ‘অনিয়মে’র অভিযোগ তুলে পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর-এর ‘সাফল্য’ নিয়ে বৃহস্পতিবার ফের সংশয় প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এসআইআর-‘আতঙ্কে’ মেদিনীপুরের বাসিন্দা শ্যামল বসু (৭২) নামে এক জনের বুধবার হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। একদা তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী শ্যামল বাম আমলে ‘সন্ত্রাসে’র আবহে তাঁর আদি-বাড়ি কেশপুর ছেড়ে মেদিনীপুরে এসেছিলেন। শ্যামলের ছেলে সনতের দাবি, ২০০২-এর ভোটার তালিকায় নাম না-থাকায় চিন্তায় ছিলেন বাবা। একই দাবি তৃণমূল কংগ্রেসেরও। বিজেপির দাবি, তৃণমূল মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছে।
এসআইআর-এর ‘কাজের চাপে’ বাঁকুড়ার বড়জোড়ার কমলকুমার বিশ্বাস ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানার দেবাশিস দাস নামে দুই বিএলও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে পরিবারের অভিযোগ। কমলের হৃদ্যন্ত্রে অস্ত্রোপচার হয়েছে। বিডিও (বড়জোড়া) চিরঞ্জিত বাগালি বলেছেন, “ওই বিএলও ৯৫% কাজ করেছেন। বাকি কাজ সুপারভাইজ়ার করবেন।” এসএসকেএম-এ চিকিৎসা চলছে দেবাশিসের। তাঁর বাড়িতে এ দিন গিয়েছিলেন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা। উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে এসআইআর-এর কাজ করার সময়ে ‘চাপে’ মাথা ঘুরে পড়ে জখম হয়েছেন বিএলও চিরঞ্জীব মজুমদার।
এই পরিস্থিতিতে এসআইআর-প্রক্রিয়ার ‘সাফল্য’ নিয়ে সন্দিহান বিরোধী নেতা শুভেন্দু। নন্দীগ্রামে তাঁর দাবি, “রাজ্যে এসআইআর সফল না-ও হতে পারে। যা শুনছি, ইআরও, এইআরও-দের একাংশ অমুকের বাবার সঙ্গে অন্য জনের ‘লিঙ্ক’ করিয়ে এসআইআর দেখানোর চেষ্টা করছেন! তবে আমরাও ছাড়ার লোক নই!”
এসআইআর-কে কেন্দ্র করে নাগরিক-সহায়তা ও প্রতিবাদ, দুই-ই অব্যাহত। তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, “কমিশন কী চায়, তা আমরা জানি। নতুন করে পর্যালোচনায় যেতে চাই না। আমাদের লক্ষ্য, গণনা-পত্র ১০০% জমা করা। খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে মানুষকে সহায়তার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।” গণনা-পত্র পূরণ পর্বের মতো খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে আবেদন-পর্বেও দলের তরফে সহায়তার কাজ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী আত্মপ্রচারে ব্যস্ত। ৯ ডিসেম্বর খসড়া তালিকার পরে আবেদন, শুনানি-পর্বে কর্মীরা মানুষকে সহযোগিতা করতে তৈরি।” ধর্ম বা অন্য পরিচয় নির্বিশেষে, নথি না-থাকা লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে বলে অভিযোগ তুলে সেলিমের দাবি, “এসআইআর-এর দরকার ছিল না। প্রতি বছর সংশোধনের সময়ে মৃত ও ভুয়ো নাম বাদ দেওয়া যেত। এখন তৃণমূল, বিজেপি ভয় ছড়াচ্ছে।”
‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ এসআইআর ও রাজ্যে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগে বহরমপুরে এ দিন মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের ডাকে প্রতিবাদ-সভায় যোগ দিয়েছিলেন দলের নেতা অধীর চৌধুরী, মনোজ চক্রবর্তী প্রমুখ। অধীরের তোপ, “ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে প্রথম মানুষকে সচেতন করেছেন রাহুল গান্ধী। কেরল, তামিলনাড়ুতে এসআইআর-এর বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ হয়েছে। কিন্তু আপনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) এখানে এসআইআর করার অনুমতি দিলেন কেন? রাজ্যের আধিকারিক, কর্মীরাই এসআইআর করছেন।” এসআইআর বন্ধ ও আতঙ্কে মৃতদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরের সামনে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ মিছিল করেছে এসইউসি। দেওয়া হয়েছে দাবিপত্রও।
এরই মধ্যে মালদহের হরিশচন্দ্রপুরে নির্দেশ মতো গণনা-পত্র পূরণ না-করায় বিএলও নিবেদিতা মণ্ডলকে হুমকি দেওয়া এবং তাঁর স্বামী কমলকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে এলাকায় ‘জমি-মাফিয়া’ হিসাবে পরিচিত, স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রাক্তন কংগ্রেস সদস্য মহম্মদ কসিমুদ্দিনের বিরুদ্ধে। কমল হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কংগ্রেসের দাবি, অভিযুক্ত এখন তৃণমূলে আছেন। তৃণমূল তা মানেনি। কসিমুদ্দিন পলাতক।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)