Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জলাতঙ্কের টিকা চড়া দামে, হয়রান রোগীরা    

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জলাতঙ্কের ওষুধ তৈরি করে কেন্দ্রীয় সরকারের ঠিক করে দেওয়া নির্দিষ্ট কয়েকটি সংস্থা। গত বছর অধিকাংশ সংস্থায় পরিকাঠামো সংস্কারের কাজ চলছিল। সে কারণে উৎপাদন কমেছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:০৯
Share: Save:

সে ক্যানসারের থেকেও বেশি প্রাণঘাতী। এই রোগ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় টিকা নেওয়া। যা সরকারি হাসপাতালে রোগীদের পাওয়ার কথা বিনামূল্যে। কিন্তু, গত ছ’মাস ধরে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে জলাতঙ্কের টিকার চরম সঙ্কট। যার জেরে ত্রাহি রব উঠেছে রোগী ও তাঁদের পরিজনেদের মধ্যে। তাঁদের অভিযোগ, এই সুযোগে বেসরকারি সংস্থাগুলি চড়া দামে জলাতঙ্কের ওষুধ বিক্রি করছে। কোথাও দাম নেওয়া হচ্ছে হাজার টাকা, কোথাও আবার টাকা দিয়েও এই জীবনদায়ী ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞেরা জানান, কুকুরে কামড়ালে পাঁচটি ইঞ্জেকশন নিতে হয়। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে এই ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। বেসরকারি হাসপাতালে অবশ্য ইঞ্জেকশন পিছু খরচ করতে হয় আড়াইশো থেকে তিনশো টাকা। কিন্তু গত বছর থেকেই রাজ্য জুড়ে জলাতঙ্কের টিকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আর তার সুযোগ নিয়ে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ইঞ্জেকশনের দাম। রোগীদের একাংশের অভিযোগ, যে পরিষেবা আদতে নিখরচায় পাওয়ার কথা, তা কিনতে হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে। চিত্রটা আরও করুণ জেলার সরকারি হাসপাতালগুলিতে। অধিকাংশ জেলা হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। কলকাতার যে হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা নেওয়ার জন্য বেশিরভাগ রোগী যান, সেই বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালেও বহু সময় ওষুধ থাকছে না।

কেন এই সঙ্কট? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জলাতঙ্কের ওষুধ তৈরি করে কেন্দ্রীয় সরকারের ঠিক করে দেওয়া নির্দিষ্ট কয়েকটি সংস্থা। গত বছর অধিকাংশ সংস্থায় পরিকাঠামো সংস্কারের কাজ চলছিল। সে কারণে উৎপাদন কমেছে। দফতরের দাবি, এর উপরে রাজ্যের অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল সময় মতো তাদের জলাতঙ্কের ওষুধের চাহিদা সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দিতে পারেনি। যার জেরে টিকার সঙ্কট বেড়েছে। ফলে বেড়েছে দামও।

প্রশ্ন উঠেছে, কেন সরকারি হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে জীবনদায়ী এই ওষুধের জোগান থাকবে না? এ নিয়ে স্বাস্থ্যকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অব রেবিস ‌ইন ইন্ডিয়া’-র সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক সুমিত পোদ্দার বলেন, ‘‘জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে কেউ বাঁচেন না। ওষুধের সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে বেশি দাম নেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। কোনও ওষুধের দোকান বা চিকিৎসক নির্ধারিত দামের বেশি নিলে ড্রাগ কন্ট্রোল ব্যুরো অথবা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা জরুরি। শাস্তি দিলেই এই সমস্যা মিটবে।’’

সরকারি হাসপাতালে জলাতঙ্কের ওষুধের সঙ্কট মেটাতে সরব হয়েছে চিকিৎসক মহল। অবিলম্বে সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়ে স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছে ডাক্তারদের কয়েকটি সংগঠন।

এমনই একটি সংগঠন সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের তরফে চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘কোথায় ওষুধ পাওয়া যাবে, সেটাই কেউ বলতে পারছেন না। হাসপাতালগুলির মধ্যে বিন্দুমাত্র সমন্বয় নেই। হয়রানির সুযোগে ওষুধের চড়া দাম নিচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। কেন্দ্র-রাজ্যের সমন্বয়ের অভাব। তাই রোগীদেরই ভুগতে হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rabies Vaccine Price
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE