Advertisement
E-Paper

বহরমপুরের কালো ধোঁয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে নদিয়া

কলকাতার আমরি হাসপাতালের সেই দগদগে স্মৃতিটা এখনও ঝাপসা হয়নি। শনিবার, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড উস্কে দিল সেই স্মৃতিই। প্রশ্ন উঠেছে, কতটাই বা নিরাপদ নদিয়ার হাসপাতালগুলো? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। কথাটা শোনার পর থেকেই কপালের ঘাম মুছতে শুরু করেছিলেন বৃত্তিহুদার ইসমাইল মণ্ডলের। শুক্রবার ইসমাইলের দিদির একটি ছেলে হয়েছে। তেমন সুস্থ নয়, তাই ঠাঁই হয়েছে তার ‘কাচের ঘরে’। বছর কয়েক আগে নাকি এই ঘরেই আগুন লেগেছিল। সে দিন শিশুদের তেমন কোনও ক্ষতি না হলেও আশঙ্কাটা মোছেনি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০২:৩১
করিমপুর হাসপাতাল

করিমপুর হাসপাতাল

কথাটা শোনার পর থেকেই কপালের ঘাম মুছতে শুরু করেছিলেন বৃত্তিহুদার ইসমাইল মণ্ডলের।

শুক্রবার ইসমাইলের দিদির একটি ছেলে হয়েছে। তেমন সুস্থ নয়, তাই ঠাঁই হয়েছে তার ‘কাচের ঘরে’।

বছর কয়েক আগে নাকি এই ঘরেই আগুন লেগেছিল। সে দিন শিশুদের তেমন কোনও ক্ষতি না হলেও আশঙ্কাটা মোছেনি। থেয়ে গিয়েছে ভয়ের সেই ছায়াটা। কে জানে, ফের কবে আবার গল গল করে ধোঁয়া বের হবে!

জেলা সদরের সেই হাসপাতালে এখনও আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থাই দড়ে ওঠেনি। আগুন নেভানোর জন্য ভরসা বলতে হাতে গোনা গুটি কয়েক অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার। আর বালতি কয়েক বালি!

কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতাল

অথচ এই হাসপাতালেই প্রতি দিন প্রায় আড়াইশো মা-শিশু ভর্তি থাকেন। তেমন কিছু হয়ে গেলে কি ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবে তা জানা নেই কর্তৃপক্ষের।

বছর কয়েক আগে এসএনসিইউতে এসি থেকে আচমকা আগুন লেগে গিয়েছিল। নিজেদের জীবন বাজি রেখে কোনওরকমে সদ্যোজাত শিশুদের প্রাণ রক্ষা করেছিলেন হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স ও কর্মীরা। ‘‘কিন্তু বার বার কী রক্ষা পাব’’, কপালে হাত ঠেকাচ্ছেন হাসপাতালের এক কর্মী।

চেহারাটা একইরকম শক্তিনগর জেলা হাসপাতালেও। দেওয়ালে টাঙানো ফায়ার এক্সটিংগুইসার বা অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার। তাও মেয়াদ ফুরানো। হাসপাতালের এক কর্তাই বলছেন, ওই লোক দেখানো ভরসা তেই বেঁচে রয়েছি আমরা।’’

সম্প্রতি দুটি ক্যাম্পাস মিলে ৫০টির মত নতুন কার্বনডাই অক্সাইডের সিলিন্ডার কেনা হলেও নেই ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার বা ফোমের সিলিন্ডার।

সবচাইতে বড় কথা দুটো ক্যাম্পাসের কোনটাতেই একটাও ফায়ার অ্যালার্ম নেই। তাহলে?

এই মুহুর্তে আগুন লাগলে কি করবেন হাসপাতালের কর্তারা?

জেলা সদর হাসপাতালের সামনে অবশ্য একটি মাটির নিচে জলাধার তৈরি করা হচ্ছে। আর শক্তিনগরেও তেমন একটা গড়ার চেষ্টা করা হবে বলে জানা গিয়েছে। ভরসা বলতে ওইটুকুই। তবে তা কী করে, কবে হবে, কেউ জানেন না।

অগ্নিনির্বাপক চিন্তা-বাবনা বলতে ওইটুকুই।

শক্তিনগর হাসপাতালের এক কর্তা বলছেন, ‘‘এক বার আগুন লাগলে তার পর হইচই হয়। তার পর আগুন নেভানোর মতোই সেই হট্টগোলও থেমে য়ায়। এটাই সরকারি নিয়ম!’’

রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল

জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল হল নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। নবদ্বীপ ছাড়াও বর্ধমানের বহু মানুষ এই হাসপাতালের উপরে নির্ভর করেন। গোটা পনেরো সিলিন্ডার ছাড়া সেখানেও কিছু নেই। আগুনের সঙ্গে লড়াই করার মত তেমন কিছুই নেই। চেহারাটা প্রায় একই রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালেরও। সেই নাম কাওয়াস্তে সিলিন্ডার আর আধ টিন বালি।

জেলার সীমান্ত সংলগ্ন করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেওয়ালের সঙ্গে সেঁটে আছে বিদ্যুতের তার। শেষ বারও ওয্যারিং হয়েছে ১৬ বছর আগে। সামান্য বর্ষায় ছাদ থেকে দেওয়াল বেয়ে জল পড়ে। তখন কর্মীরাও আতঙ্কে থাকেন এই দেওয়াল চুঁইয়ে পড়া জল তারে সঙ্গে লেগে শর্ট সার্কিট না হয়ে যায়। আর সত্যিই যদি সেই কারণে আগুন লেগে যায় তাহলে কি করবেন হাসপাতাল কতৃপক্ষ?

তবে, কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা বলতে ফায়ার এক্সটিঙ্গুইজার রয়েছে প্রায় সর্বত্রই। কিন্তু, তার মধ্যে বেশ কিছু সিলিন্ডারের মেয়াদ পার হয়ে গিয়েছে। সে তথ্য রয়েছে সিলিন্ডারের গায়েই। আগুন নেভানোর জন্য জলের লাইন হাসপাতালের কিছু জায়গায় থাকলেও, বেশিরভাগ জায়গাতেই নেই। তার ফলে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের মতো কোনও ঘটনা ঘটলে বিপদ ব্যাপক আকার নিতেই পারে। সুপার স্নেহপ্রিয় চৌধুরী বলেন, ‘‘সবরকম ব্যবস্থাই তো করার চেষ্টা করেছি। তবে, আগুনের সঙ্গে সে লড়াই না লাগলেই ভাল!’’

সে কথা বলাই বাহুল্য!

Nadia Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy