জনবহুল রাস্তায় দিনে দুপুরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এক যুবককে কুপিয়ে খুন করা হল পূর্ব বর্ধমানের কালনায়। পুলিশ রক্তাক্ত অবস্থায় ওই যুবককে উদ্ধার করে কালনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার দুপুরে কালনার জনবহুল রাস্তায় এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত যুবকের নাম শামিম মণ্ডল (৩১)। তাঁর বাড়ি কালনা-১ ব্লকের বেগপুর পঞ্চায়েতের কর্পূরডাঙা গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্মসূত্রে একটা সময়ে ভিন্রাজ্যে থাকতেন শামিম। কিন্তু বর্তমানে তিনি কালনায় নিজের বাড়িতে থাকতেন। চাষের কাজকর্মই করতেন। তবে শামিমের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ছিল স্থানীয়দের। তাঁদের অভিযোগ, গ্রামে অশান্তি পাকানো, বিভিন্ন জনকে ধরে মারধর ও অত্যাচার করতেন তিনি। এর আগে শামিমকে বেশ কয়েক বার গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় নয়ন ক্ষেত্রপাল, তাঁর বাবা ভজন ক্ষেত্রপাল ও মা চন্দনা ক্ষেত্রপালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, টাকা লেনদেন সংক্রান্ত বিবাদের জেরে এই খুনের ঘটনা।
কালনার এসডিপিও রাকেশ চৌধুরী বলেন, “এই ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে ধৃতদের বৃহস্পতিবার কালনা আদালতে হাজির করানো হবে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নয়নের স্বামী কর্মসূত্রে ভিন্রাজ্যে থাকেন। শ্বশুরবাড়ির কাছেই নয়নের বাপের বাড়ি। নয়ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী চালানোর পাশাপাশি স্কুলে রান্নার কাজ করেন। গ্রামের বাসিন্দাদের থেকে জানা গিয়েছে, স্বামীর অনুপস্থিতিতে শামিমের সঙ্গে নয়নের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। পরে সেই সম্পর্কের খাতিরে দু’জনের মধ্যে আর্থিক লেনদেন বাড়ে। পুলিশের অনুমান, টাকাপয়সা নিয়েই তাঁদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়।
যদিও নিহত যুবকের পরিবার কোনও সম্পর্কের কথা মানতে চায়নি। উল্টে তারা দাবি করে, নয়নের সঙ্গে পাতানো বোনের সম্পর্ক ছিল শামিমের। তাই নয়ন নির্দ্বিধায় শামিমকে টাকা ধার দেন। সেই টাকা শামিম শোধ করতে পারেননি। সেই কারণেই নয়ন ও শামিমের সম্পর্কের অবনতি হয় ।
নিহতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, নয়ন গত মঙ্গলবার শামিমের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এর পরেই বুধবার সকালে নয়ন নিজের বাপের বাড়ি রানিবন্ধ গ্রামে শামিমকে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে রাস্তায় নয়ন অ্যাসিড ছুড়ে মেরেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে শামিমকে এলোপাথাড়ি কোপ মারেন বলে অভিযোগ। তাতেই শামিমের মৃত্যু হয়। ওই যুবককে কুপিয়ে খুনের আগে তাঁর গায়ে অ্যাসিড ছুড়ে মারা হয়েছিল কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।