Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Burdwan Medical College and Hospital

মেডিক্যাল কলেজে কি সক্রিয় দেহ পাচারের চক্র

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ কৌস্তুভ নায়েক বলেন, ‘‘মৃতদেহ চুরি করা হচ্ছিল বলে খবর পেয়েছি। তবে নিরাপত্তারক্ষীদের তৎপরতায় তা আটকানো গিয়েছে।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ১০:০৪
Share: Save:

কলেজের কাজকর্ম শুরু হতে তখনও খানিকটা দেরি রয়েছে। চত্বরের আশপাশ তখনও ফাঁকা। রয়েছেন শুধু দু’জন নিরাপত্তারক্ষী। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগ থেকে তিনটি মৃতদেহ নিয়ে পালানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠল বুধবার। শববাহী গাড়িতে দেহগুলি তুলে চম্পট দেওয়ার চেষ্টা ভেস্তে যায় নিরাপত্তারক্ষীদের তৎপরতায়। অ্যানাটমি বিভাগ থেকে দেহ পাচার করা হচ্ছে, এই সন্দেহে পুলিশ ছ’জনকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে আটক করেছে। তবে কী উদ্দেশ্যে দেহগুলি নিয়ে পালানোর চেষ্টা হচ্ছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে দাবি পুলিশের। দেহ পাচারের কোনও চক্র এর পিছনে রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ কৌস্তুভ নায়েক বলেন, ‘‘মৃতদেহ চুরি করা হচ্ছিল বলে খবর পেয়েছি। তবে নিরাপত্তারক্ষীদের তৎপরতায় তা আটকানো গিয়েছে। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কী উদ্দেশ্যে অ্যানাটমি বিভাগ থেকে দেহ চুরি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তা পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।’’ জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, ‘‘ছ’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’ এর মধ্যে অ্যানাটমি বিভাগের একশ্রেণির কর্মীদের যোগ রয়েছে বলেও পুলিশের সন্দেহ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এলাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় যে সব দেহ উদ্ধার হয় তা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। অ্যানাটমি বিভাগের দাবি, সপ্তাহের শেষে সেই দেহগুলি পুরসভার হাতে সৎকারের জন্য দেওয়া হয়। তেমন অজ্ঞাতপরিচয় দেহই এ দিন শববাহী গাড়িতে করে পাচারের চেষ্টা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের দাবি, গত কয়েক দিন ধরে সেখানে রাখা এমন দেহের সংখ্যায় গোলমাল হচ্ছিল বলে কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন। তাতেই তাঁদের সন্দেহ হয়েছিল, দেহ কে বা কারা অ্যানাটমি বিভাগ থেকে সরিয়ে ফেলছে। সে কারণে নিরাপত্তারক্ষীদের সতর্ক করা হয়েছিল।

জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ একটি শববাহী গাড়ি মেডিক্যাল কলেজের সামনে এসে দাঁড়ায়। অ্যানাটমি বিভাগের সামনে থেকে তিনটি দেহ সেই গাড়িতে তোলা হয়। এত সকালে কেন ওই বিভাগ থেকে মৃতদেহ শববাহী গাড়িতে কেন তোলা হচ্ছে, সে প্রশ্ন জাগতেই মেডিক্যাল কলেজের মূল দরজাগুলি রক্ষীরা বন্ধ করে দেন। হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে দেখে, শববাহী গাড়ির ভিতরে ‘ড্রয়ার’ রয়েছে। অভিযোগ, সেখানে দু’টি দেহ লুকিয়ে রাখা ছিল। আর একটি দেহ কাচে ঘেরা গাড়ির উপরে ছিল। পুলিশ দেহগুলি ফের অ্যানাটমি বিভাগে ফেরত পাঠায়।

পুলিশের দাবি, আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা জেনেছে, অ্যানাটমি বিভাগের এক শ্রেণির কর্মীদেরই বহিরাগত এক ব্যক্তি দেহ দেওয়ার জন্য ‘বরাত’ দিয়েছিল। সেই মতো ওই কর্মীরা আগেও মেডিক্যাল কলেজ থেকে দেহ পাচার করেছিলেন। শববাহী গাড়িটির চালকের আবার দাবি, দেহগুলি উত্তরাখণ্ডের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। জেলা পুলিশ সূত্রের দাবি, যে ব্যক্তি দেহ সরবরাহের বরাত দিয়েছিল, তার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। তাকে ধরতে পারলেই দেহ পাচার চক্র সম্পর্কে বিশদ তথ্য মিলবে বলে তদন্তকারীদের ধারণা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE