E-Paper

ভুয়ো চেকে উধাও কোটি টাকা, বিপাকে পুরসভা

অভিযোগ, ব্যাঙ্কের চেক বই অটুট। অথচ সেই বইয়ের দু’টি নম্বরের চেক ভাঙিয়ে জিটি রোডের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা থেকে বেমালুম ১ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৩০

—প্রতীকী চিত্র।

প্রথম দু’বার সফল। তৃতীয় বারও একই কায়দায় টাকা তুলতে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। কিন্তু তুলতে তো পারেইনি বরং বিষয়টি জানাজানি হয়ে যেতেই ব্যাঙ্কের গাফিলতির অভিযোগ তুলে রবিবার থানায় অভিযোগ জানিয়েছে বর্ধমান পুরসভা।

অভিযোগ, ব্যাঙ্কের চেক বই অটুট। অথচ সেই বইয়ের দু’টি নম্বরের চেক ভাঙিয়ে জিটি রোডের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা থেকে বেমালুম ১ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। যাঁদের সইয়ে টাকা ওঠার কথা, তাঁদের সইও ছিল না। গত শুক্রবার ৯৭ লক্ষ ৫২ হাজার টাকারও একটি চেক জমা পড়ে। সেই টাকা পুরসভা তুলে নিচ্ছে কি না জিজ্ঞাসা করতে গিয়েই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানতে পারে, ভুয়ো চেক জমা দিয়ে পুরসভার টাকা তোলা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেরই জেলখানা মোড়ের শাখা থেকেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা হাপিশ হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। বর্তমানে ওই মামলাটি সিআইডির কাছে আছে। টাকা ফেরত চেয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ওই ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলা করবে বলেও জানা গিয়েছে।

পুরপ্রধান পরেশ সরকার বলেন, “আমরা বর্ধমান থানায় অভিযোগ জানিয়েছি। ওই ব্যাঙ্কের কর্তারা আমাদের কাছে এসেছিলেন। তাঁদের ভুলেই যে টাকা উঠে গিয়েছে, সে কথা তাঁরা জানিয়ে গিয়েছেন।” ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, মহারাষ্ট্রের নাগপুরের একটি শাখায় ভুয়ো চেক দু’টি জমা পড়ে। সেখান থেকে ‘ক্লিয়ারেন্স’-র জন্য বর্ধমানের জিটি রোডের শাখায় পাঠানো হয়েছিল। ব্যাঙ্কের ওই শাখার ম্যানেজার সুদীপ্ত ঘোষ বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, নকল চেক জমা করে টাকা তোলা হয়েছে।” বর্ধমান থানা জানিয়েছে, ওই ব্যাঙ্কের অভিযুক্ত শাখাকে দ্রুত নথি ও তথ্য সহকারে একটি রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পরেই বোঝা যাবে, কোন শাখার মাধ্যমে কার অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছেছে।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬ অগস্ট প্রথম টাকা তোলা হয়। সে বার ৪৮ লক্ষ ২১ হাজার টাকা তোলা হয়েছিল। দ্বিতীয়বার টাকা তোলা হয় ৪ সেপ্টেম্বর। সে বার পুরসভার অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয় ৯৫ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা। দু’টি চেকেই ‘অপারেটর’দের সই ছিল না। স্বাভাবিক ভাবেই, ব্যাঙ্কের গাফিলতিতেই টাকা হাপিশ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে।

পুরভবন লাগোয়া ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় বর্ধমান পুরসভার অনেক পুরনো অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে গেলে পুরসভার এগজ়িকিউটিভ অফিসার (ইও) ও ফিনান্স অফিসার (এফও)-র সই লাগে। পুরপ্রধানের দাবি, “নকল চেকে পুরপ্রধানের সই রয়েছে। যে অ্যাকাউন্টে পুরপ্রধানের কোনও ভূমিকা নেই, সেখানে কী ভাবে টাকা উঠে গেল? আর যে দু’টি চেকে টাকা উঠেছে, সেই চেক দু’টি পুরসভাতেই রয়েছে।” ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, পুরোটাই মহারাষ্ট্রের নাগপুর থেকে হয়েছে। সেখানেই চেক জমা, তোলা হয়েছে। বর্ধমানের শাখার কোনও যোগ নেই। নাগপুরের যেখান থেকে টাকা উঠেছে তারা স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানিয়েছে। তবে যে অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছে, মহারাষ্ট্রের সেই ব্যাঙ্কের শাখায় অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করা হয়েছে দাবি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের।

বছর চারেক আগে কালনা পুরসভার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে পুরপ্রধান এবং এক্সিকিউটিভ অফিসাররের সই নকল করে দু’টি জাল চেক জমা দিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা তুলে নিয়েছিল প্রতারকেরা। তৎকালীন পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বিষয়টি পুরসভার নজরে আনা উচিত ছিল। তবে পরে ওই টাকা ফিরিয়ে দেয়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Financial Fraud Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy