E-Paper

আগমনীর সুরে বাবা-মাকে খুঁজছে ভাইবোন

পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের উদয়কৃষ্ণপুরের পশ্চিমপাড়ার ওই দুই নাবালক-নাবালিকার বাবা কৃষ্ণপদ মিস্ত্রি ও মা সন্ধ্যার মৃত্যু হয়েছে এক মাসও হয়নি।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৩৮
কাটোয়ার জাজিগ্রাম নবোদয় সঙ্ঘের প্রতিমা।

কাটোয়ার জাজিগ্রাম নবোদয় সঙ্ঘের প্রতিমা। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

খালি গা, হাফ প্যান্ট পরে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া ছেলেটি। আলপথের রাস্তায় ছুটছে ঘুড়ির পিছনে। কখনও এ-মাঠ তো কখনও ও-মাঠ। কেউ কিছু বললেই সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে সে। বলছে, ‘মা-বাবা তো মাঠেই থাকত। এই মাঠেই কাজ করত। ধান জমির উপরে ঘুড়ি উড়ে এসে পড়ত। বাবা-মাকেই খুঁজছি।”

ওই মাঠ থেকেই দেখা যায় একতলা ঘরটি। সামনে বারান্দা। তার সামনে শৌচালয় ও টিউবওয়েল। বারান্দায় ছোট উনুনে ভাত বসিয়েছে ওই ছেলেটির সপ্তম শ্রেণিতে পড়া বোন। গরম ফ্যান হাতে পড়লেই মায়ের কথা মনে পড়ছে। চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। দাদার জন্য ভাত নিয়ে বারান্দায় বসে থাকে সে। ছোট্ট মেয়েটি বলে, “আমি সাইকেল নিয়ে স্কুলে যেতাম। বাড়ি ফিরে পড়তে বসতাম। সন্ধ্যায় বাবা-মায়ের সঙ্গে গল্প করতাম। এখন আমি রান্না করি। মায়ের মতো ভাত নিয়ে বসে থাকি।”

পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের উদয়কৃষ্ণপুরের পশ্চিমপাড়ার ওই দুই নাবালক-নাবালিকার বাবা কৃষ্ণপদ মিস্ত্রি ও মা সন্ধ্যার মৃত্যু হয়েছে এক মাসও হয়নি। খুদে ভাইবোন এখনও চোখ বুজলেই দেখতে পায়, বারান্দায় দাউ দাউ করে জ্বলছেন বাবা-মা। কানে বাজে ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার। ঘটনার সময়ে তারা দু’জন খাটের উপরে মশারির ভিতরে শুয়েছিল। বাবা-মায়ের চিৎকারে তাদের ঘুম ভেঙে যায়। আগুন দেখে দু’জনেই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তারাও জখম হয়। দু’জনের শরীরে পোড়ার ক্ষত রয়েছে। মনের গভীরেও ক্ষত। এই আগুন লাগানোর পিছনে যাঁর হাত ছিল বলে পুলিশের ধারণা, কৃষ্ণপদের সেই প্রথম পক্ষের ছেলে বাউলও অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন।

পুলিশের অনুমান, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদেই আগুন লাগান বাউল। ভাইবোন যদিও জানায়, কে আগুন লাগিয়েছে, তারা দেখেনি। ঘটনার পরে বাড়িটি কালো হয়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। সূর্য ডুবলে তারা পাশের বাড়িতে এক ঠাকুমার কাছে চলে যায়। ওই পাড়াতেই থাকেন তাদের পিসি আশালতা মণ্ডল। তাঁর কথায়, “ওরা এক মাসের মধ্যেই কত বড় হয়ে গেল! চোখে-চোখে রাখি। পড়ায় মন দিতে বলেছি। রান্না করতে না পারলে আমার কাছে খেয়ে নেয়।”

মেয়েটি বলে, “পুজোয় নতুন জামা পরতাম। বাবা-মায়ের সঙ্গে পুজো দেখতে যেতাম।’’ ঘরে সাদা টিনের বাক্স দেখিয়ে বলে, “ওখানে অনেক জামা, চুড়িদার আছে। কিন্তু পরার ইচ্ছা নেই। সব সময় বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ছে, কান্না পাচ্ছে।” তার দাদার কথায়, “পুজোয় ভাল খাবার খেতাম। বাজি ফাটাতাম। এখন চোখে শুধু আগুনের দৃশ্য ভাসে।’’ জলের ধারা নামে কিশোরের গালে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja 2025

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy