Advertisement
E-Paper

ভরসা সেই আসানসোল, ভুগছে ব্লক 

জেলা ভাগ হয়েছে। এই ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা আসানসোল পুরসভার তেরোটি ওয়ার্ডের অন্তর্গত। রয়েছে দশটি পঞ্চায়েতও। কিন্তু সেই জামুড়িয়া ব্লকের স্বাস্থ্য পরিষেবার কোনও উন্নতি ঘটেনি বলেই অভিযোগ নাগরিকদের।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৫
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

জেলা ভাগ হয়েছে। এই ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা আসানসোল পুরসভার তেরোটি ওয়ার্ডের অন্তর্গত। রয়েছে দশটি পঞ্চায়েতও। কিন্তু সেই জামুড়িয়া ব্লকের স্বাস্থ্য পরিষেবার কোনও উন্নতি ঘটেনি বলেই অভিযোগ নাগরিকদের। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের জন্য ভরসা, বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরের আসানসোল, দুর্গাপুর অথবা রানিগঞ্জ।

কয়েকটি ঘটনার কথা জানিয়ে এই ব্লকের স্বাস্থ্য-পরিষেবার বেহাল ছবিটা তুলে ধরছেন নাগরিকেরা। যেমন, মাস তিনেক আগে ডোবরানা গ্রামের বাসিন্দা বিনয় শীল সাইকেলে চ়ড়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথেই একটি গাড়ি তাঁকে ধাক্কা মারে। প্রথমে তাঁকে বাহাদুরপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই একই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছিল বাড়ুল গ্রামের বাসিন্দা রিতা মণ্ডলকেও।

২০১৮-র নভেম্বর। চুরুলিয়ার বাসিন্দা সাথী রজকের পেটে যন্ত্রণা হওয়ায় স্থানীয় একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

শেখপুরের ধীরেন ঘোষ। আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। তাঁকে আখলপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

এই সব ক’টি ঘটনাতেই রোগীদের দ্রুত স্থানান্তরিত করানো হয় আসানসোল জেলা হাসপাতালে। প্রতিটি ক্ষেত্রে হয় হাসপাতালে যাওয়ার পথে কিংবা হাসপাতালে গিয়ে মৃত্যু হয় রোগীদের। এই পরিস্থিতিতে কয়েকটি বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে বলে মনে করছেন নাগরিকেরা।

প্রথমত, স্থানান্তরিত করানোর জন্য একমাত্র আসানসোল জেলা হাসাপাতালই ভরসা। এত দিনেও ব্লকে ভাল পরিকাঠামোর হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র কেন তৈরি হল না, রয়েছে সে প্রশ্নও।

দ্বিতীয়ত, নাগরিকদের দাবি, রাস্তাঘাট ভাল হওয়া সত্ত্বেও অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা প্রায় নেই। ফলে বিপত্তি বাড়ে। বিশেষ করে রাতে গাড়ি পাওয়া সমস্যার হয়ে দাঁড়ায়, জানান নাগরিকেরা।

তৃতীয়ত, ব্লকে যে ক’টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে, সেগুলির পরিকাঠামোও বেহাল বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন রোগীর পরিজনেরাও। যেমন রিতাদেবীর স্বামী কাঞ্চন মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সবসময়ে সাপে কাটার প্রতিষেধকও মেলে না। এলাকায় একটা হাসপাতাল তৈরি করা খুব জরুরি।’’ বিজয়নগরের ছোটন মণ্ডল অসুস্থ হয়ে মারা যান। তাঁর বাবা বিপদবাবুর আক্ষেপ, ‘‘এলাকায় হাসপাতাল থাকলে হয়তো আমার ছেলেটা বেঁচে যেত।’’ আসানসোল জেলা হাসপাতালে সুপার নিখিলচন্দ্র দাসও বলেন, ‘‘দ্রুত রোগীদের হাসপাতালে আনা গেলে দ্রুত স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া সম্ভব। তা না হলে অনেক সময়েই পরিস্থিতি জটিল হয়।’’

জামুড়িয়ার মহিশাবুড়ির বাসিন্দা, পেশায় গাড়ির চালক প্রসিত মাজি, জামুড়িয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা শিল্পদ্যোগী পওন মাউন্ডিয়ারা জানান, এলাকার পরিবহণ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তাঁদের ক্ষোভ, অ্যাম্বুল্যান্স তো দূরঅস্ত, সন্ধ্যে ৭টার পরে জামুড়িয়া থেকে আসানসোল-সহ অন্য সব কটি রুটের বাস চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। রাতের দিকে হাসপাতাল যেতে গিয়ে বিপাকে পড়েন নিম্নবিত্ত পরিবারের বাসিন্দারা। অনেক বেশি টাকা খরচে গাড়ি ভাড়া করে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়। সাধারণ ভাবে বিভিন্ন গ্রাম থেকে জামুড়িয়া শহরে গাড়ি ভাড়া ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা। শহর থেকে আসানসোল, দুর্গাপুর ও রানিগঞ্জের ভাড়া যথাক্রমে পাঁচশো, এক হাজার, চারশো টাকার আশপাশে। রাতে ভাড়া আরও বাড়ে।

কিন্তু এখনও অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা অমিল, এমন অভিযোগ উঠছে কেন? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস হালদার বলেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ পেলেই পদক্ষেপ করা হবে।’’ (চলবে)

Hospital Health Care System Asansol
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy