ভিড় এড়াতে পুলিশি টহল কুলটিতে। ছবি: পাপন চৌধুরী।
করোনা সংক্রমণ রুখতে প্রধানমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী সকলেই হাতজোড় করে অনুরোধ করেছেন খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বার হবেন না। কিন্তু জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, অনুরোধ মানার বালাই নেই মানুষজনের মধ্যে। বাধ্য হয়ে বাজার, রাস্তাঘাটে ভিড় ফাঁকা করতে কখনও বুঝিয়ে, কখনও কড়া ভাবে, আবার লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে।
দৃশ্য ১: বুধবার সকাল থেকেই দুর্গাপুরের বিভিন্ন আনাজ ও মুদির দোকানে ভিড় করেছেন ক্রেতারা। সেন মার্কেটে দেখা গেল, আর পাঁচটা দিনের মতোই থিকথিকে ভিড়ের মধ্যেই কেনাকাটা সারেন ক্রেতারা। নানা ভাবে সচেতনতা প্রচার চালানো হলেও ক্রেতা-বিক্রেতা কাউকেই বিধি নিষেধ মানতে দেখা যায়নি। একই ছবি কুলটির নিয়ামতপুর বাজার এলাকায়ও। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে ভিড়ও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে।
অবশ্য মঙ্গলবারের থেকে বুধবার পুলিশি তৎপরতা বেশি দেখা গিয়েছে। দুর্গাপুরের বাজারে ভিড় দেখেই এক পুলিশ কর্মী চিৎকার করে ওঠেন, ‘‘এক জায়গায় ভিড় করে কেন দাঁড়াচ্ছেন আপনারা? কবে বুঝবেন?’’ একটু এগিয়ে আর এক পুলিশকর্মী যুবকদের একটা ভিড় দেখে লাঠি উঁচিয়ে বললেন, ‘‘এখন সব যাও এখান থেকে।’’ পাশ দিয়ে সেই সময়ে টোটোয় চেপে মাইকিং করে চলেছেন সরকারি কর্মী। ঘোষণা করা হয় নিষেধাজ্ঞা না মানলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে প্রশাসন। নিয়ামতপুরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে দেখে পুলিশ রাস্তায় নেমে ভিড় খালি করে দেয়। কিন্তু পুলিশ এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেই ফের মানুষের জটলা শুরু হয়ে যায়। এ দিন সারাদিন এ ভাবেই ‘চোর-পুলিশে’র খেলা চলেছে আসানসোল মহকুমা জুড়ে।
দৃশ্য ২: এ দিন আসানসোল বাজার প্রায় জনমানব শূন্যই ছিল। ঘনঘন পুলিশি টহলদারিতে সাধারণ মানুষজন প্রয়োজন ছাড়া, ঘরের বাইরে বেরোননি। রূপনারায়ণপুরের ডাবর মোড়ের বাজার-দোকানে সকালের দিকে ভিড় থাকলেও বেলার দিকে পুলিশ তৎপর হওয়ায় তা অনেকটাই হালকা হয়ে যায়। ভিড় ছিল না রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া বাজার এলাকায়।
দৃশ্য ৩: তবে আসানসোলের রেলপাড়ে এ দিনও বাসিন্দারা যেখানে সেখানে জটলা করেছেন। পুলিশের দাবি, গত দু’দিন ছবিটা একই রকম থাকলেও এ দিন প্রায় কেউই বাড়ি থেকে বার হননি। পরিস্থিতি তুলনামূলক ভাল চিত্তরঞ্জনে। কারখানার আধিকারিকেরাই রেল নিরাপত্তা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে শহরে নজরদারি চালাচ্ছেন। এলাকার অন্যতম বড় বাজার আমলাদহি মার্কেটেও বাড়তি জটলা করতে দেওয়া হচ্ছে না।
দৃশ্য ৪: দুর্গাপুর, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়ায় বাজার এলাকা ছাড়া, বাকি সব জায়গায় রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল। তবে আসানসোলে রাস্তাঘাটে লোকজন দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘দেখলাম, গায়ে গা লাগিয়ে অনেকে ভিড় করে আছেন।’’ একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা আচার্য বলেন, ‘‘বিশ্বের উন্নত দেশগুলির অবস্থা দেখেও এখানকার বাসিন্দারা বুঝতে চাইছেন না কেন জানি না!’’
পুলিশ কমিশনার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘জেলার সমগ্র পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy