এই ভবনেই তৈরি হয়েছে নতুন কোভিড-হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র।
পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনে কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। তার মধ্যে এ পর্যন্ত কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন দু’হাজারেরও বেশি। রেলের আসানসোল ডিভিশনাল হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে, ১০৮ জন কোভিড আক্রান্তের। এর মধ্যে ৪৪ জনের মৃত্যুই এপ্রিলে। এমনটাই জানা গিয়েছে রেল ও রেলের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলির সূত্রে। এই পরিস্থিতিতে কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতিতে কোভিড হাসপাতাল তৈরির কথা জানিয়েছে ডিভিশন।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরু থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা হু-হু করে বাড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আসানসোল ডিভিশনাল হাসপাতালে দু’টি কোভিড ওয়ার্ড তৈরি করে আক্রান্তদের চিকিৎসা শুরু করা হয়। রেলের চিফ মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট মনোরঞ্জন মাহাতো জানান, এই মুহূর্তে রেলকর্মীদের লাগাতার করোনা টিকাকরণ করা হচ্ছে। বুধবার পর্যন্ত টিকা পেয়েছেন ৫,৩০০ জন রেলকর্মী।
তবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষণ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলির। এই পরিস্থিতিতেই সংগঠনগুলির তরফে একটি পূর্ণমাত্রার কোভিড হাসপাতাল চালু করার দাবি ওঠে। তার পরে, আসানসোলেই রেলের একটি হেরিটেজ ভবনে কোভিড হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে, ‘কোভিড রিকভারি কাম আইসোলেশন ওয়ার্ড’। মঙ্গলবার এটির উদ্বোধন করেন ডিআরএম (আসানসোল) সুমিত সরকার। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ভবনের ১২টি ঘরে ৩০টি শয্যা থাকছে। একটি আইসিইউ ওয়ার্ড করা হয়েছে। সেখানে দু’টি কার্ডিয়াক মনিটর রাখা হয়েছে। চারটি অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর ছাড়াও ১০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার মোতায়েন করা হয়েছে। সুমিতবাবু বলেন, ‘‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়েই, আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ কোভিড হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছি। তাই তৃতীয় ঢেউয়ের আগে এই উদ্যোগ।’’
রেলের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ‘ইস্টার্ন রেলওয়ে মেনস কংগ্রেস’-এর পূর্ব রেল শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রদীপলাল মিত্র বলেন, ‘‘নতুন কোভিড হাসপাতাল তৈরি হওয়ায় রেলকর্মীরা উপকৃত হবেন।’’ তবে প্রদীপবাবুর অভিযোগ, কোভিড আক্রান্ত রেলকর্মীরা এখনও ‘এক্স-গ্রাশিয়া’ বাবদ টাকা পাননি। নতুন হাসপাতালকে স্বাগত জানিয়েও ‘ইস্টার্ণ রেলওয়ে মেনস ইউনিয়ন’-এর কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি সুধীর রায় বলেন, ‘‘ডিভিশনাল হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব আছে। নতুন হাসপাতালেও যদি সেই অভাব থাকে, তা হলে মূল উদ্দেশ্যই মার খাবে।’’ তবে মনোরঞ্জনবাবুর দাবি, ‘‘এখানে সর্বক্ষণের জন্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা থাকবেন।’’
এ দিকে, রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ইস্ট-ইন্ডিয়ান রেল কোম্পানি’ ১৮৬৯-এ রেলকর্মী ও আধিকারিকদের জন্য একটি হাসপাতাল বানিয়েছিল। নাম ছিল ‘বার্লিংটন হাসপাতাল’। প্রায় একশো বছর ধরে এখানে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। পরে, ১৯৬৬ সালে ডিভিশনাল রেল হাসপাতাল তৈরি হওয়ার পরে এটি বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকে বার্লিংটন হাসপাতালের ভবন বন্ধ পড়েছিল। ২০১৯-এ আসানসোল ডিভিশন ভবনটিকে ‘হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষণা করে। কোভিড-পরিস্থিতিতে সেখানেই তৈরি হয়েছে
নতুন হাসপাতাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy