করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নাজেহাল পশ্চিম বর্ধমান জেলাবাসীও। তবে সংক্রমণের পারদ যে হারে চড়ছিল, তা সামান্য হলেও কমেছে বলে দাবি জেলা প্রশাসনিক কর্তাদের। সে সঙ্গে এ নিয়ে এখনই আত্মতুষ্টি হওয়ার মতো কিছু নেই বলে মনে করছেন তাঁরা। কারণ, মানুষ নিয়মের হেরফের করলেই ফের সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
পশ্চিম বর্ধমান জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) অশ্বিনীকুমার মাজি জানান, ৯ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত জেলায় সংক্রমণের হার ছিল ৪২ শতাংশ। বুধবার সে হার নেমে এসেছে ২৯ শতাংশে। মৃত্যুর হার ১ শতাংশের নীচেই রয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা জুড়ে সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল ও ‘সেফ হোম’গুলিতে এক হাজারের বেশি কোভিড-শয্যা আছে। বর্তমানে পাঁচটি সেফ হোমে পরিষেবা প্রদান চলছে। সিএমওএইচ বলেন, ‘‘প্রতিটি ব্লকে একটি করে সেফ হোম তৈরির পরিকল্পনা দ্রুত কার্যকর করা হবে। এ পর্যন্ত তিন লক্ষের বেশি টিকাকরণ হয়েছে। এখনও প্রায় কুড়ি হাজার টিকা মজুত আছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়লে করোনাকে জয় করা সহজ হবে। তা না হলে প্রশাসনের সব চেষ্টা বিফলে যাবে।’’ সংক্রমণের হার কম হওয়া প্রসঙ্গে রাজ্য কোভিড ম্যানেজমেন্টের পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার কো-অর্ডিনেটর সমরেন্দ্রকুমার বসু বলেন, ‘‘আশার আলো দেখা যাচ্ছে। মানুষজন কোভিড-বিধি মেনে চলছেন বলেই তা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যেরা সচেতনতা বাড়ানো-সহ রোগীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তাতেও কাজ হচ্ছে’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘পরিবহণ বন্ধ থাকায় আন্তঃজেলা যোগাযোগও বন্ধ। তাতে করোনা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু পরিবহণ ব্যবস্থা সব সময় বন্ধ করে রাখা সম্ভব নয়। তাই নাগরিক সচেতনতায় ঢিলেঢালা মনোভাব আনা যাবে না। তার অভাব দেখা দিলে করোনা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।’’ নাগরিক সচেতনতার প্রসঙ্গ ধরে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের আসানসোল শাখার সভাপতি শ্যামল সান্যাল বলেন, ‘‘যে ভাবে হাটে-বাজারে মানুষের ঢল নামছে তাতে, আশঙ্কা কাটছে না। প্রশাসন ধরপাকড় করলেও খুব একটা লাভ হবে না।’’ জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) বিভু গোয়েল বলেন, ‘‘সংক্রমণ কতটা কমল তা মূল বিষয় নয়। এখনও কঠিন সময় চলছে। তাই নাগরিকদের মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো বিষয়গুলি পালন করা উচিত। তা ছাড়া, করোনা মোকাবিলা কার্যত অসম্ভব হয়ে যাবে।’’