Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Durga Puja 2022

অধিকার বুঝে নিতেই পুজো শুরু হয় বস্তিতে

দিলদারনগরের কংক্রিটের চওড়া রাস্তা। সেখান থেকেই বাঁ দিকে চলে গিয়েছে একটি সঙ্কীর্ণ রাস্তা। সে রাস্তা ধরে কিছুটা গেলেই হরিজন বস্তি। সেখানে বসবাস চারশোটি পরিবারের।

তৈরি হচ্ছে পুজোর প্যান্ডেল। দিলদারনগরে। নিজস্ব চিত্র

তৈরি হচ্ছে পুজোর প্যান্ডেল। দিলদারনগরে। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৫৮
Share: Save:

দূর থেকে বাড়ির মেয়েরা সিঁদুর খেলা দেখতেন। আশপাশের মণ্ডপগুলিতে ঢোকার বিষয়েও যেন ‘অলিখিত সামাজিক বাধা’ ছিল। কারণ, তাঁদের ‘হরিজন’ পরিচয়, জানাচ্ছেন আসানসোলের সাফাইকর্মীদের একাংশ। এই ‘বাধা’র জন্য নিজেদের অধিকার বুঝে নিতেই যেন পুজো শুরু করেছিলেন দিলদারনগরের হরিজন বস্তির বাসিন্দারা। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘হরিজন সোসাইটি সর্বজনীন দুর্গোৎসব’। সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে বাধা হয়তো কমেছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ‘হরিজন সোসাইটি’র পুজোর জাঁকজমকও।

দিলদারনগরের কংক্রিটের চওড়া রাস্তা। সেখান থেকেই বাঁ দিকে চলে গিয়েছে একটি সঙ্কীর্ণ রাস্তা। সে রাস্তা ধরে কিছুটা গেলেই হরিজন বস্তি। সেখানে বসবাস চারশোটি পরিবারের। সম্প্রতি পুরসভা ১৫৭টি পরিবারের থাকার জন্য তিনতলা আবাসন তৈরি করেছে। বাকি পরিবারগুলি এখনও থাকে ঝুপড়িতে। কাঁচা-পাকা নর্দমা। প্রায় সর্বত্রই ছড়িয়ে আবর্জনার স্তূপ। সেখানে এখন প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছে। তদারকিতে ব্যস্ত, পেশায় আসানসোল পুরসভার অস্থায়ী সাফাইকর্মী কপিল হাড়ি জানালেন, ১৯৯২-এ বস্তির বাসিন্দারাই শুরু করেছিলেন এই পুজো। আয়োজকদের অন্যতম গৌতম হাড়ি ভাঙলেন পুজো শুরুর কারণটি। গৌতমের কথায়, “আমাদের বাড়ির মেয়েরা সিঁদুর খেলতে পারতেন না। আমাদেরও প্রবেশাধিকার ছিল না বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে। কেউ কিছু বলতেন না। কিন্তু সামাজিক বাধা ছিল। কারণ আমরা হরিজন। তাই বস্তির প্রবীণরা এই পুজো শুরু করেছিলেন।” এ বার পুজোর বাজেট প্রায় দু’লক্ষ টাকা। চারশোটি পরিবারের সম্মিলিত চেষ্টাতেই উঠেছে টাকা। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথার মধ্যেই দেখা গেল, প্যান্ডেল কত দূর তৈরি হয়েছে, তা দেখতে এলেন সন্ধ্যা হাড়ি নামে এক মহিলা। তিনি জানান, বস্তিতেই জন্ম। বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ি বহরমপুরে চলে গিয়েছেন। কিন্তু তিনি বলেন, “প্রতি বছর পুজোর পনেরো দিন আগে বাপের বাড়ি আসি। শুধু এই বস্তির পুজোর টানে।” প্রায় ছ’দশক আগে এই বস্তিতে এসেছিলেন ৭৫ বছরের পূর্ণিমা হাড়ি। তাঁর স্বামী ছিলেন সাফাইকর্মী। গত হয়েছেন। পূর্ণিমা বলে চলেন, “এই পুজোটা আমাদের। পুজোর আয়োজনে যোগ দিতে কেউ বাধা দেয় না। এটা আমাদের অধিকারের মতো। মায়ের কাছে প্রার্থনা, এই অধিকারটা যেন আমাদের থাকে।” পাড়ার অবস্থাটা যাতে একটু ফেরে, চুঁইয়ে পড়া অভাবের কষ্টটা যাতে একটু কমে, এটাই চাইবেন ঠাকুরের কাছে, জানালেন বস্তির বাসিন্দা, সাফাইকর্মী গৌতম হাড়ি।

অধিকার বুঝে নিতে-নিতেই যেন অভাবের সঙ্গে লড়ছেন বস্তির বাসিন্দা মণীশ শর্মা। ভূগোল নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা করছেন। বলছেন, “পড়া শেষে যাতে একটা চাকরি পাই, ঠাকুরের কাছে এটাই প্রার্থনা।”

এ দিকে, আসানসোল পুরসভার মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, “ওই এলাকায় বাড়ি তৈরি-সহ বেশ কিছু পরিকাঠামোগত কাজ হয়েছে। যা বাকি আছে, সেগুলিও দ্রুত করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2022 Asansol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE