Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
পেঁয়াজে প্যাঁচ (১)

শীতের ফলন পেতে সতর্ক হতে হবে চাষিকে

সম্প্রতি কোনও কোনও বাজারে সেঞ্চুরি পার করেছে পেঁয়াজের দাম। কবে দাম কমবে তার আন্দাজ দিতে পারেনি টাস্ক ফোর্সও। এই পরিস্থিতিতে শীতকালীন পেঁয়াজই একমাত্র ভরসা, জানাচ্ছেন ক্রেতারা।

ছবি পিটিআই।

ছবি পিটিআই।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

ঝালে-ঝোলে তার নিত্য আনাগোনা। দাম কেজিতে একশো ছুঁলেও পাত থেকে বাদ পড়েনি সে। ‘সোশ্যাল মিডিয়া’র ‘মিম’ থেকে দেশের শীর্ষ নেতাদের মন্তব্য, সবেই তার নাম। এ হেন পেঁয়াজের দামের ঝাঁঝে যে এ ভাবে নাকানিচোবানি খেতে হবে ভাবেননি কেউ।

সম্প্রতি কোনও কোনও বাজারে সেঞ্চুরি পার করেছে পেঁয়াজের দাম। কবে দাম কমবে তার আন্দাজ দিতে পারেনি টাস্ক ফোর্সও। এই পরিস্থিতিতে শীতকালীন পেঁয়াজই একমাত্র ভরসা, জানাচ্ছেন ক্রেতারা।

যদিও চাষিদের দাবি, বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ বার পেঁয়াজ চাষ শুরু হয়েছে দেরিতে। এখনও অনেকে পেঁয়াজের চারা জমিতে লাগাতে পারেননি। ফলে, ফলন হয়ে তা বাজারে আসতে এখনও ছয়-সাত মাস।

এই রাজ্যে হুগলির পরেই ভাল পেঁয়াজ উৎপাদন হয় পূর্ব বর্ধমানে। মূলত সুখসাগর প্রজাতির পেঁয়াজের চাষ হয়। চাষিরা জানান, রং এবং ঝাঁঝের কারণে এই জাতীয় পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে খরিদ্দারদের কাছে। উদ্যানপালন দফতরের হিসেবে, এই জেলায় শীতকালীন পেঁয়াজ চাষের এলাকা প্রায় ছ’হাজার হেক্টর। ওই দফতরের দাবি, বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষও শুরু করা হয়েছে। কিন্তু তা তেমন জনপ্রিয় হয়নি। চাষিরা জানান, গত বছর পেঁয়াজ চাষের অভিজ্ঞতা সুখের নয়। পুরো মরসুম জুড়ে ভাল আবহাওয়া থাকলেও ফসল ওঠার আগেই ব্যাপক বৃষ্টিতে জমিতে জল জমে যায়। ফলে, পচে নষ্ট হয় বহু পেঁয়াজ। ফলন মার খায়, ফসলেরও দাম মেলেনি। চাষিদের দাবি দুই থেকে আড়াই টাকা কেজি দরেও বাধ্য হয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়েছে। আর এ বার চাষের শুরুতেই ধাক্কা।

পূর্বস্থলীর এক পেঁয়াজ চাষি গোপাল সরকার বলেন, ‘‘ভারী বৃষ্টি হলে বীজতলায় পেঁয়াজ চারা মরে যায়। দুর্গাপুজো এবং কালীপুজোর সময় ভারী বৃষ্টিতে দু’বার পেঁয়াজের চারা নষ্ট হয়েছে। শেষ ধাক্কা দেয় বুলবুল।’’ তাঁর দাবি, সময়ে চারা তৈরি করতে না পারায় চাষ পিছিয়ে দিতে হয়েছে। আর এক চাষি আব্দুল শেখ জানান, অন্য বার নভেম্বরের মধ্যে চাষ শুরু হয়ে যায়। এ বার যা পরিস্থিতি তাতে পেঁয়াজ জমি থেকে উঠতে জুন-জুলাই হয়ে যাবে। এর সঙ্গেই শেষের দিকে শীত ঠিকঠাক না পেলে রোগপোকার হামলা হতে পারে জমিতে। সে ক্ষেত্রে ফলন নিয়েও দুশ্চিন্তায় চাষিরা।

চাষিদের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, স্বীকার করেছে উদ্যান পালন এবং কৃষি দফতর। উদ্যান পালন দফতরের এক আধিকারিক পলাশ সাঁতরা বলেন, ‘‘বুলবুলের ধাক্কায় প্রচুর বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। আমরা মাঠে মাঠে ঘুরে তা দেখেছি। নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে চাষিদের বেশ কিছুটা সময় লেগে গিয়েছে।’’ মহকুমার অন্যতম সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষও বলেন, ‘‘পূর্ণ সময় শীত না পেলে রোগপোকার হামলা হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। এ বার পেঁয়াজ নিয়ে সর্তক থাকতে হবে চাষিদের।’’

তা হলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলেই কি দাম চড়বে লাগামহীন ভাবে? কৃষি কর্তারা জানান, এ রাজ্য নাসিকের পেঁয়াজের উপরে নির্ভরশীল। এ বার মহারাষ্ট্রে ভারী বন্যা হওয়ায় পরিস্থিতি প্রতিকূল হয়। আর পেঁয়াজ বেশি দিন সংরক্ষণের কাঠামোও নেই এ রাজ্যে। তবুও চাষিরা এ বারের পরিস্থিতি দেখে সতর্ক হলে পেঁয়াজ মাস ছ’য়েক সংরক্ষণ করা যেতে পারে। বর্ষা আর শীত—দুই মরসুমে আলাদা ভাবে চাষও করা যেতে পারে, দাবি তাঁর। সে ক্ষেত্রে মজুত ফসল থেকে লাভ পাওয়ারও আশা থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hoogly Burdwan Onion Crops Winter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE