গোবিন্দভোগের জন্য ‘জিআই’ তকমার আর্জি।
সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত গোবিন্দভোগ চাল। এ বার ওই চাল ভারত সরকারের নথিতে ঠাঁই পাওয়ার অপেক্ষা করছে রাজ্য সরকার। ২০১৫-র ২৪ অগস্ট কৃষি দফতরের ওএসডি পরিতোষ ভট্টাচার্য ‘জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন রেজিস্ট্রি’র কাছে গোবিন্দভোগের জন্য ‘জিআই’ তকমার জন্য আর্জি জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়ে রাজ্যের এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও নরেন্দ্রপুরে রাজ্য কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও।
কিছু দিন আগে বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা এই তকমা পেয়েছে। রসগোল্লার জিআই তকমা নিয়ে কাজিয়া চলছে বাংলা ও ওড়িশার মধ্যে। তুলাইপাঞ্জি চালের জন্যও আবেদন করেছে রাজ্য সরকার। খাদ্যগুণ দেখে কোন্ পণ্য জিআই তকমা পাবে, তা ঠিক করে কেন্দ্রের ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অফ ইন্ডিয়া’-র অন্তর্গত সংস্থা ‘জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন রেজিস্ট্রি’। গোবিন্দভোগ ও তুলাইপঞ্জি চালের দাবি খতিয়ে দেখছে সেই সংস্থায়।
রাজ্যের দাবি, রাঢ় বঙ্গ ও গাঙ্গেয় উপত্যকায় তিন শতাব্দী ধরে চাষ হচ্ছে গোবিন্দভোগ চালের। কলকাতা শহরের পত্তন হচ্ছে যখন, তখন হুগলির চার বসাক ও এক শেঠ পরিবার গোবিন্দপুর গ্রামের (অধুনা কলকাতার গড়ের মাঠ) জঙ্গল পরিষ্কার করতে গিয়ে গোবিন্দ মন্দিরের খোঁজ পান। নদীর ধারেই তাঁরা শুরু করেন সুগন্ধী ধানের চাষ। গোবিন্দর উদ্দেশে ওই ধানের চাল ভোগ দেওয়া হত। তাই এর নাম হয় ‘গোবিন্দভোগ’। পায়েস, পোলাও, পিঠে মানেই যার প্রয়োজন হয় অবধারিত ভাবে।
বর্ধমান জেলায় দামোদরের দক্ষিণ পাড়ে খরিফ মরসুমে গোবিন্দভোগের চাষ খুব ভাল হয়। বর্ধমান ছাড়াও নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া ও উত্তর চব্বিশ পরগনার ৭৬ হাজার চাষি এই চাষে যুক্ত। কৃষি দফতরের দাবি, ১৮৭২-র পরে থেকে এই জেলাগুলির বহু চাষি আমন ধান হিসেবে শুধুমাত্র গোবিন্দ ভোগের চাষ করে। রাজ্য সরকারও চাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ওই ধান চাষে উৎসাহী করছে। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও নরেন্দ্রপুরে রাজ্য কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের তরফেই জানানো হয়েছে, বছরে ৩১১ কোটি টাকার গোবিন্দভোগ চাল বিক্রি হয়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, “গোবিন্দভোগ চালের জিআই তকমা পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তা পেলে বাইরের রাজ্যে এবং বিদেশেও ওই চাল পাঠাতে সুবিধা হবে।” বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট ডিন সঞ্জয় দত্ত রায় বলেন, “গোবিন্দভোগ দেশীয় চাল। রাসায়নিক সার সহ্য করার ক্ষমতা কম। জৈব সারেই গোবিন্দভোগের গুণগত মান বেশি থাকে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy