কুম্ভে যাওয়ার ট্রেন ধরার জন্য হুড়োহুড়িতে বিশৃঙ্খলার ঘটনার পরের দিন, সোমবার আসানসোল স্টেশনে যাত্রী নিরাপত্তায় বেশ কিছু পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। তবু যাত্রীদের আশঙ্কা কাটছে না। এ দিন এই স্টেশন থেকে প্রয়াগরাজ যাওয়ার বিশেষ ট্রেন ছাড়েনি। ফলে, ভিড় তেমন ছিল না। তবে আজ, মঙ্গলবার বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ একটি বিশেষ ট্রেন প্রয়াগরাজের উদ্দেশে রওনা হবে। রেল সূত্রের দাবি, তার ভিড় নিয়ন্ত্রণই এখন ‘মাথাব্যথার কারণ’ স্টেশন কর্তৃপক্ষের। আসানসোলের মতো ভিড় সামাল দেওয়া নিয়ে চিন্তা রয়েছে বর্ধমান স্টেশনেও। বেধেছে রাজনৈতিক তরজা।
রবিবার সকালে পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের কর্তারা আসানসোল স্টেশন পরিদর্শন করে ১৪ দফা সতর্কতা নেওয়ার কথা জানান। কিন্তু সন্ধ্যায় আসানসোল-মুম্বই এক্সপ্রেসে ওঠার জন্য যাত্রীদের হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়। এ দিন দুপুরে স্টেশন চত্বর পরিদর্শন করেন আসানসোলের এডিআরএম প্রবীণকুমার প্রেম। রেল সূত্রের খবর, রবিবার যাত্রীদের পার্সেল ভ্যানের রাস্তা ধরে প্ল্যাটফর্মে ঢোকানো হয়েছিল। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, স্টেশনের প্রধান গেট লাগোয়া সামনের অংশে অসংরক্ষিত কামরার যাত্রীদের জমায়েত করা হবে। সেখানে বাঁশ ও শালকাঠের খুঁটি দিয়ে অস্থায়ী ব্যারিকেড গড়ে আঁকাবাঁকা প্রবেশপথ তৈরি করা হবে। তা দিয়ে যাত্রীদের দফায় দফায় প্ল্যাটফর্মে ঢোকানো হবে। প্রতি দফায় সর্বোচ্চ দেড়শো যাত্রী ঢুকবেন। যাত্রীদের জন্য অস্থায়ী ছাউনি, জল ও বসার ব্যবস্থা রাখা হবে।
এডিআরএম জানান, হাওড়া, শিয়ালদহ বা কলকাতা থেকে যে সব ট্রেন প্রয়াগরাজে যাচ্ছে, সেগুলিতে চড়ার জন্য আসানসোলে তেমন ভিড় হচ্ছে না। কিন্তু আসানসোল থেকে যে বিশেষ ট্রেন দেওয়া হচ্ছে, তাতেই ভিড় বাড়ছে। আরও কিছু বিশেষ ট্রেন চাওয়া হয়েছে। আগামী দু’দিন আরপিএফ এবং রেলকর্মী বেশি রাখা হবে বলে জানান তিনি। তবে এডিআরএমের দাবি, “রবিবার সুষ্ঠু ভাবেই যাত্রীদের ট্রেনে তোলা হচ্ছিল। হঠাৎ কেউ কেউ দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। তেমন পরিস্থিতি যাতে আর না হয়, সে বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” প্রায় একই সুরে আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেছেন, “রেলের ব্যবস্থায় খামতি ছিল না।” যদিও পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, “কত পুণ্যার্থী যাবেন, রেল কর্তৃপক্ষের জানা উচিত ছিল।”
বর্ধমান স্টেশন দিয়ে প্রয়াগরাজের অনেক ট্রেন যাতায়াত করছে। বছর পাঁচেক আগে এই স্টেশনের ফুট ওভারব্রিজে ট্রেন ধরার হুড়োহুড়িতে জনা পনেরো যাত্রী জখম হন। বছর দেড়েক আগে প্ল্যাটফর্মের সিঁড়িতে পদপিষ্ট হয়ে দু’জন আহত হন। যাত্রীদের অনেকের অভিযোগ, বর্ধমান স্টেশনে ট্রেনের ঘোষণা সময় মতো হয় না। ট্রেন ছাড়ার ঠিক আগে ঘোষণা হলে হুড়োহুড়ি বেধে যায়।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্তের যদিও আশ্বাস, “বর্ধমান-সহ নানা বড় স্টেশনে আরপিএফের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে নজর রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)