Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Kalna

চাঁদমালার সঙ্গে মেয়েদের স্বপ্নও গাঁথেন মঞ্জু

বাংলাদেশের রাজশাহী জেলা থেকে ১৯৭১ সালে প্রতিমা শিল্পী স্বামী গোবিন্দ পালের হাত ধরে এপার বাংলায় আসেন মঞ্জু। নানা জায়গা ঘুরে ১৯৭৪ সালে তাঁরা পৌঁছন কালনা শহরে।

কাজে ব্যস্ত মঞ্জু পাল। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

কাজে ব্যস্ত মঞ্জু পাল। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:৫২
Share: Save:

বয়স ৬৫। ভোর থেকেই শুরু হয় কাজ। ক্লান্ত শরীরে ঘুম নামে রাত ১টার পর। শুধু নিজের জন্য নয়, আরও বহু মেয়ের জন্য কাজ করেন তিনি। বহু প্রতিমার চাঁদমালা, গলার মালা তৈরি করেন তাঁরা। নিজের সংসারের অভাব ঘুচিয়ে অন্যদেরও স্বনির্ভর হতে শেখান কালনা শহরের বারুইপাড়ার মঞ্জু পাল।

কাঠা চারেক জমির উপরে দোতলা বাড়ি। একতলা, দোতলার বেশির ভাগ ঘরেই ছড়ানো রয়েছে চাঁদমালা, গলার মালা। তার মধ্যেই একটা ঘরের মেঝেতে বসে এক মনে জরি, রাংতা, চুমকি, অভ্র দিয়ে চাঁদমালা তৈরি করছেন তিনি। পাশে বসে কাজ করছেন আরও দুই মহিলা। তাঁদের দাবি, চাঁদমালা, মালাতেও বাহার নিয়ে আসেন মঞ্জু। প্রতিবার একই রকম চাঁদমালা না করে নকশা বদলাতে থাকেন তিনি। তাঁর বাড়ি থেকে কাঁচামাল নিয়ে গিয়ে তাঁর নকশা অনুযায়ী চাঁদমালা, প্রতিমার গলার মালা তৈরি করেন আরও ৫০জন মহিলা। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও গত দু’বছর প্রায় ১৫ হাজার চাঁদমালা তৈরি করেছেন তিনি। এ বারও ২০ হাজার চাঁদমালা তৈরি করে ফেলেছেন। ৪৮ টাকা থেকে ছ’হাজার টাকা ডজন পর্যন্ত চাঁদমালা রয়েছে তাঁর কাছে। প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় পাট, রেশম, জরি, রাংতা এবং কাপড় দিয়ে মালা তৈরি করছেন তিনি। পাইকারি দরে ডজন প্রতি ৭২ টাকা থেকে ৫,৪০০ টাকাতেও বিকোচ্ছে মালা। মঞ্জুর বাড়ি থেকে চাঁদমালা, মালা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, হুগলির ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশের রাজশাহী জেলা থেকে ১৯৭১ সালে প্রতিমা শিল্পী স্বামী গোবিন্দ পালের হাত ধরে এপার বাংলায় আসেন মঞ্জু। নানা জায়গা ঘুরে ১৯৭৪ সালে তাঁরা পৌঁছন কালনা শহরে। প্রথমে একটি ভাড়া বাড়িতে ঠাকুর তৈরি করে সংসার চালাতেন পাল দম্পতি। ধীরে ধীরে শোলা দিয়ে প্রতিমার ডাকের সাজ তৈরি শুরু করেন তাঁরা। তবে শোলার জোগান কমে আসায় ১৪ বছর আগে নিজের চেষ্টায় মঞ্জু চাঁদমালা এবং মালা তৈরি শুরু করেন। বাড়তে থাকে ব্যবসা। চার কাঠা জমি কিনে প্রথমে একতলা, পরে দ্বিতল বাড়ি তৈরি করেন। তৈরি করা জিনিস নানা জেলায় পাঠাতে মাকে সাহায্য করেন তাঁর দুই ছেলে সুব্রত এবং সুবীর। সুব্রতর কথায়, ‘‘দুর্গাপুজোর পরে মাস খানেক মায়ের কিছুটা বিশ্রাম হয়। বাকি ১১ মাস ভোরে উঠে রাত ১টায় ঘুমোতে যায় মা। কাজে ফাঁকি দেওয়ার ইচ্ছে হলেও মাকে দেখে ফাঁকি দিতে পারি না। আমাদের মা-ই দশভুজা।’’

স্থানীয় মানুষজন জানান, দুর্গাপুজো ছাড়াও সরস্বতী, কার্তিক, বিশ্বকর্মা পুজোতেও আলাদা ভাবে চাঁদমালা তৈরি করেন মঞ্জু। প্রায় হাজার খানেক মহিলা তাঁর কাছ থেকে কাজ শিখে স্বনির্ভর হয়েছেন এত বছরে। সাত জন আলাদা করে ব্যবসাও শুরু করেছেন।

তবে মঞ্জু এ সব নিয়ে ভাবতে রাজি নন। তাঁর কথায়, ‘‘জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত এসেছে। পরিশ্রম আর নতুন ভাবনার পথ ছেড়ে বার হইনি কোনও দিন। শুধু নিজে নয়, সবাইকে নিয়ে ভাল থাকতে চেয়েছি বরাবর।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kalna Bardhaman festival Durga Puja 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE