দুর্গাপুর নগর নিগম। — ফাইল চিত্র।
বছর ছয়েক আগে হিমঘরে চলে যাওয়া ফাইল বার করা হয়েছে। তাতে পুর-প্রশাসকের সইও রয়েছে। আর তার ফলেই, ‘কাজ না করা’ এক ঠিকাদারকে ১৫ লক্ষ টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন কাণ্ডই ঘটেছে দুর্গাপুর পুরসভায়, অভিযোগ বিরোধীদের। পুর-প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় জানান, তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে, বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী নেতৃত্ব।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬-য় এক ঠিকাদারকে জলের পাইপ সরবরাহের জন্য ১৫ লক্ষ টাকার বরাত দেওয়া হয়েছিল। পাইপ সরবরাহ করার আগেই পুরসভায় বিল জমা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই সে বিল আটকে দেওয়া হয়। কার্যত হিমঘরে চলে যায় বিলের ফাইল। বিরোধীদের অভিযোগ, সম্প্রতি সেই বিলে সই করেছেন প্রশাসকঅনিন্দিতা। বিলের টাকাও পেয়ে গিয়েছেন ঠিকাদার। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগকরা যায়নি।
প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে এই পুরবোর্ড। কাটমানি খেতে পাইপের বরাত দেওয়া হয়েছিল। তাই পাইপ কেনাও হয়নি। অথচ, এখন পুর-প্রশাসকের সই করিয়ে টাকা দিয়ে দেওয়া হল। এটা অবৈধ লেনদেন। এর নেপথ্যে কারা, তা খুঁজে বার করতে হবে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারেরও তোপ, “দুর্গাপুরের মানুষের টাকা নিয়ে নির্লজ্জ ভাবে নয়ছয় করা হচ্ছে। চরমদুর্নীতি চলছে।”
শুধু বিরোধীরাই নন, বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন প্রশাসক বোর্ডের একাধিক সদস্যও। বর্তমানে জল দফতরের দায়িত্বে আছেন প্রশাসক বোর্ডের সদস্য দীপঙ্কর লাহা। তিনি বলেন, “আমি বিষয়টি জানার পরে অবাক হয়ে গিয়েছি।” ভাইস চেয়ারম্যান অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, “কে কার নির্দেশে সে ফাইল বার করলেন, কার নির্দেশে ঠিকাদারকে টাকা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হল, সে বিষয়ে উপযুক্ত তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।” প্রাক্তন মেয়র দিলীপ অগস্তিরও দাবি, তিনি শুনেছিলেন, তাঁর আগের বোর্ডে জল দফতরে গোলমাল হয়েছিল। সে জন্য তৎকালীন জল দফতরের মেয়র পারিষদকে দফতরহীন করা হয়েছিল। কিন্তু সে বিল কেন এত দিনে পাশ করা হল, সেটা যিনি বা যাঁরা করেছেন তাঁরাই বলতে পারবেন, দাবি দিলীপের।
পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট মহলের এ-ও প্রশ্ন, পুর-প্রশাসকের সই ওই ফাইলে এল কী ভাবে। সই নিয়ে অনিন্দিতার অবশ্য ব্যাখ্যা, “বিভিন্ন টেবিল, কমিশনারের দফতর ঘুরে সব শেষে আমার কাছে ফাইল আসে। আগের সই দেখে পরের জন করেন। আমি সই করেছি কমিশনারের সই দেখে। তাই প্রথম দিকে যে বা যাঁরা সই করেছেন, তাঁরা কেন করেছেন সেটা খোঁজ নিতে হবে। তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” প্রতিক্রিয়ার জন্য চেষ্টা করেও বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত যোগাযোগ করা যায়নি দুর্গাপুরের পুর-কমিশনার ময়ূরীভাসুর সঙ্গে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy