Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Fraud Case

টাকার নেশাই ফাঁদ, অ্যাপে প্রতারণা নিয়ে ধোঁয়াশায় পুলিশ

তদন্তকারীদের দাবি, অ্যাপ্লিকেশনটি একটি সংস্থার নামে চালানো হত। কিন্তু সেটি কোন এলাকার, তা বোঝা যাচ্ছে না। সামাজিক মাধ্যম নির্ভর হওয়ায় দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ অ্যাকাউন্টও ভুয়ো।

An image of Cyber Crime

—প্রতীকী চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৪৪
Share: Save:

এজেন্টের মাধ্যমে মোবাইলে লিঙ্ক পাঠিয়ে একটি অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করানো হত। ফুল, ফল, পাখির মতো বিভিন্ন ছবি থাকত সেখানে। এক একটা ছবি পিছু নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করা যেত। সেই টাকা দ্বিগুণ হয়ে ঢুকত অ্যাকাউন্টে। ধীরে ধীরে বিনিয়োগের মাত্রা বাড়িয়ে হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যেত অ্যাপটি। প্রযুক্তির ফাঁদে ফেলে এমন প্রতারণায় দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পূর্বস্থলী থানা। তবে চক্রের মাথার হদিস মেলেনি। পুলিশের দাবি, পুরোটাই যেহেতু অনলাইন, ফলে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও সব প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।

তদন্তকারীদের দাবি, অ্যাপ্লিকেশনটি একটি সংস্থার নামে চালানো হত। কিন্তু সেটি কোন এলাকার, তা বোঝা যাচ্ছে না। সামাজিক মাধ্যম নির্ভর হওয়ায় দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ অ্যাকাউন্টও ভুয়ো। সাইবার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছে পুলিশ।

সম্প্রতি পূর্ব আটপাড়া এলাকার বাসিন্দা রফিক মণ্ডল থানায় লিখিত অভিযোগ করে জানান, তামাঘাটার বাসিন্দা সন্দীপ সেন-সহ ১৯ জন এলাকার বহু মানুষকে অল্প দিনে টাকা দ্বিগুণ করার লোভ দেখান। ওই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন তিনি। কিছু টাকা ফেরত দেওয়ার পরে সংস্থাটির অ্যাপ অচল হয়ে যায়। এলাকার বহু মানুষ প্রতারিত হয়েছেন এ ভাবে। তদন্ত নেমে পুলিশ জানতে পারে, প্রতারকেরা পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া, হুগলির গ্রামেগঞ্জে জাল বিছিয়েছিল। এজেন্টদের মাধ্যমে অ্যাপটির লিঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাতে ক্লিক করলে ফল, বাঁশের মতো নানা জিনিসের ছবি দেখানো হত। এক একটি পণ্য পিছু দাম বাবদ টাকা বিনিয়োগ করা হত। প্রতিদিনই বিনিয়োগ কারীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্টে পৌঁছত টাকা। এক প্রতারিতের দাবি, তিনি হয়তো ৫০০ টাকা দামের বাঁশ কিনেছেন ৫০টি। বিনিয়োগ করা ২৫ হাজার টাকা মাসের শেষে ৫০ হাজার হয়ে ঢুকত তাঁর অ্যাকাউন্টে। এজেন্টরা ব্যবসা পিছু কমিশন পেতেন। কালনার এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী বলেন, ‘‘শুরুতে দু-পাঁচ হাজারের মতো ছোট অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে দ্বিগুণ ফেরত পাচ্ছিলাম। এক সময় বলা হয়, ১৫ দিনে টাকা দ্বিগুণ হবে। এক লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। আর কিছু ফেরত পাইনি।’’ পুলিশের দাবি, টাকার নেশাটাই ফাঁদ এখানে।

পুলিশ প্রথমে সুকান্ত নস্কর, পরে সন্দীপকে ধরে। পুলিশের দাবি, দু’জনেই সংস্থার এজেন্ট হিসাবে কাজ করতেন। সন্দীপের ব্যাঙ্কের তথ্য ঘেঁটে পুলিশ দেখেছে, ৪০ লক্ষ টাকা কমিশন বাবদ রোজগার করেছেন তিনি। পুলিশের দাবি, সন্দীপের নীচে ছিলেন আরও একশো জন এজেন্ট। এক মহিলা তাঁদের নানা কোম্পানির অফার জানাতেন। এজেন্টদের একটি হোয়াটস গ্রুপ ছিল। একটি বিদেশি সংস্থা পুরোটা পরিচালনা করত বলেও ধৃতদের দাবি। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘সন্দীপের সব কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। অ্যাপটির অনুমোদন কেন্দ্রীয় যে সংস্থা দিয়েছিল বলে ও দাবি করেছে, সেই নামে কোনও সংস্থার অস্তিত্ব নেই। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে যে ভাবে মাস তিনেকের মধ্যে প্রচুর টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে, তার তদন্তে উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োজন।’’ টাকা বিদেশে গিয়েছে কি না, তা জানতে সাইবার বিষেশজ্ঞদের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধ্রুব দাস বলেন, ‘‘যে দু’জন গ্রেফতার হয়েছে, তাঁদের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fraud Case police investigation Kalna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE