এক সময় বর্ধমান রাজপরিবারের গ্রীষ্মকালীন আবাস ছিল কালনা শহরের হাওয়া মহল। নানা ইতিহাসের সাক্ষী এই প্রাচীন ভবনটি আজ ধ্বংসের মুখে। দেওয়ালে লম্বা ফাটল, কোথাও গজিয়েছে অশ্বত্থ গাছ। যে কোনও সময় দেওয়ালগুলি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে পারে। আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন আশপাশের বাসিন্দারা। তাঁদের ক্ষোভ, প্রশাসনিক কর্তারা ভবনটি দেখে গেলেও কোনও সংস্কার বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কালনা শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত এই হাওয়া মহল এক সময় রাজপরিবারের বিলাসবহুল বিশ্রামকেন্দ্র ছিল। জনশ্রুতি, রাজরানি এখান থেকে গঙ্গাস্নানে যেতেন, চুল শুকোতেন জানালায় বসে। এখনও সেখানে রয়েছে বেশ কিছু কুলুঙ্গি। সেখানে থাকত রানির পছন্দের আঁচার ও নানা খাবার।
পরে বহু বছর মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অফিস হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে ভবনটি। চার বছর আগে সেই দফতর অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়। তার পর থেকেই ভবনটি অবহেলায় পড়ে। বাসিন্দাদের দাবি, ভবনটি ঘিরে পর্যটক আবাস গড়ার দাবি উঠলেও কাজের কাজকিছু হয়নি।
এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, প্রায় ৪০ ফুট লম্বা দেওয়ালে গভীর ফাটল, খসে পড়ছে চাঙড়। বিভিন্ন জায়গায় লম্বা লম্বা অশ্বত্ব গাছ। তার শিকড় ছড়িয়েছে বড় এলাকা জুড়ে। দেওয়ালের একটি বড় অংশ ইতিমধ্যেই ঝুঁকে পড়েছে রাস্তার দিকে। এলাকাবাসী জানান, বছর দুয়েক আগে সে দিকে দেওয়ালের একাংশ ভেঙেও পড়েছিল। সে সময় রাস্তায় লোক না থাকায় বড় বিপদ হয়নি। এ বার টানা বৃষ্টিতে দেওয়ালের অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়েছে। এমনকি দুর্ঘটনার আশঙ্কায় দুর্যোগ চলাকালীন বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কাছাকাছি স্কুলে।
বিপজ্জনক ওই দেওয়াটির ঠিক পাশেই বাস করেন জয়শ্রী দাস নন্দী। আতঙ্কিত কণ্ঠে তিনি বলেন, “সম্প্রতি আরও একটি চাঙড় ভেঙে পরেছে। রাতে ঘুমোতে পারি না। ভয় লাগে এই বুঝি দেওয়ালটা ধসে পড়বে। বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেলে প্রশাসনের হুস ফিরবে।” কয়েক হাত দূরেই রয়েছে কালনা মহিষমর্দিনী ইনস্টিটিউশন। প্রায় ৫৬০ পড়ুয়া সেখানে। হাওয়া মহলের পাশ দিয়েই যাতায়াত করে তারা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য জানান, “বিপজ্জনক দেওয়ালটির বিষয়ে মহকুমাশাসক ও পুরপ্রধানকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। তবে এখনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
কালনার মহকুমাশাসক শুভম আগরওয়াল জানিয়েছেন, “প্রাচীন ভবনটি জেলার তহবিলের অর্থে সংস্কার করা হবে। একটি পরিকল্পনা তৈরির জন্য দ্রুত হেরিটেজ কমিশনের সদস্য এবং পূর্ত দফতরের প্রতিনিধিরা ভবনটি পরিদর্শন করবেন। ভবনটি সংস্কারের পরে পর্যটন উন্নয়নের কথাও ভাবা হবে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)