E-Paper

খোলা বাজারে দর চড়েছে আলুর, দুশ্চিন্তা

গত বছরও আলু কিনতে নাজেহাল হতে হয় সাধারণ মানুষকে। রাজ্য সরকার হিমঘর থেকে আলু ২৫-২৬ টাকা কেজি দরে বিক্রির নির্দেশ দেয়।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৫ ০৮:২৪
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

মাঠ থেকে ৫০ কেজি আলুর বস্তা বিক্রি হয়েছিল গড়ে ৪৫০-৫০০ টাকায়। হিমঘরে সংরক্ষণ করতে লাগে আরও ৫০-৬০ টাকা। যার অর্থ, প্রতি কেজি আলুতে গড় খরচ হয়েছে সাড়ে ১০-১১ টাকা। গত ২ মে হিমঘর খুলেছে। সেই থেকেই আলুর দাম চড়া। খোলা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮-২০ টাকা প্রতি কেজি দরে। অথচ জেলা প্রশাসন মনে করছে, আলুর দাম এই মুহূর্তে ১৬-১৭ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। ভারত-পাক যুদ্ধের আবহে আলু, ডিম, মুরগির মাংসের দাম যাতে নাগালের বাইরে চলে না যায়, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই সবাইকে সতর্ক করেছেন। জেলাশাসক আয়েষা রানি এ শুক্রবার দুপুরে কৃষি বিপণন দফতর ও টাস্কফোর্সকে বাজারগুলিতে অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

গত বছরও আলু কিনতে নাজেহাল হতে হয় সাধারণ মানুষকে। রাজ্য সরকার হিমঘর থেকে আলু ২৫-২৬ টাকা কেজি দরে বিক্রির নির্দেশ দেয়। যদিও বেশির ভাগ হিমঘর থেকেই বিক্রি হয়েছিল ২৮ টাকা কেজি দরে। বাজারে সেই আলু বিক্রি হয় ৩৩-৩৫ টাকা কেজিতে। রাজ্য সরকার ভিন্‌ রাজ্যে আলু পাঠানো বন্ধ করায় দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রশাসন জানাচ্ছে, গত বছর মাঠ থেকে ১৬-১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল আলু। এ বারও দাম বাড়ার আশঙ্কা করে মুখ্যমন্ত্রী ভিন্‌ রাজ্যে আলু পাঠানোয় আপত্তি জানিয়েছেন। চাষি ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, এ বছর হিমঘরে ঢোকাতে প্রতি কেজি আলুতে গড়ে ১১ টাকা খরচ হয়েছে। হিমঘর খোলার পরে ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি করছেন ১৪-১৫ টাকা প্রতি কেজিতে। সেই আলুই খুচরো বাজারে ২০ টাকা দরে পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১০৪টি হিমঘর রয়েছে। তার মধ্যে আলু রাখা হচ্ছে ৯৮টিতে। সব মিলিয়ে জেলায় আলু সংরক্ষণের ক্ষমতা ১৬ লক্ষ টনের মতো। ২০২৩-এ জেলায় আলু হিমঘরে ঢুকেছিল ১১ লক্ষ ৩০ হাজার টন। ২০২৪-এ ৯ লক্ষ ৪৪ হাজার টন আলু মজুত হয়েছিল। ওই দুই বছরে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে আলুচাষ মূল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেকটাই কম হয়েছিল। পরে ফের শিলাবৃষ্টির কারণে চাষে ক্ষতি হয়। গুণমানও খারাপ হয়। এ বছর প্রকৃতি অনুকূল হওয়ায় গত বছরের চেয়ে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আলুচাষ হয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলায় ৭১,৮০০ হেক্টর জমিতে আলুর উৎপাদন হয়েছে ১৮ লক্ষ টনের মতো। আর হিমঘরে আলু ঢুকেছে ১১ লক্ষ ৮৮ হাজার টন। গত তিন বছরের মধ্যে আলুর উৎপাদন ও হিমঘরে আলুর রাখার পরিমাণ এ বছর বেশি। তার পরেও মরসুমের শুরুতে আলুর দাম ২০ টাকায় পৌঁছেছে। পুজোর সময়ে আলু কিনতে গেলে মধ্যবিত্তের হাতে ছেঁকা লাগবে।

ক্রেতারা মনে করছেন, যুদ্ধ পরিস্থতিতে এখন থেকেই টাস্ক ফোর্স অভিযান না চালালে আলুর দামের সঙ্গে পেঁয়াজ-রসুন-আদার দামও বাড়তে শুরু করবে। মাছ, ডিম, মুরগির মাংসের দামও চড়া হবে। পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়বে পটল, ঢ্যাঁড়শ-সহ নানা আনাজের দাম। কালোবাজারি এক বার শুরু হয়ে গেলে, আটাকানো মুশকিল বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে প্রশাসনের শীর্ষস্তরের এক আধুকারিক বলেন, “দাম বাড়ার সঙ্গে আলু ব্যবসায়ীদের যোগ নেই। মূলত চাষির হাতে থাকা আলু বাজারে আসছে। চাষিরাই বাড়তি দাম পাচ্ছেন। হিমঘর পুরোপুরি খুলে গেলে আলুর দাম বাড়বে না বলে আমার ধারণা। হয় স্থিতাবস্থা থাকবে, না হয় দাম কমবে।”

কৃষি বিপণনমন্ত্রী বেচারাম মান্নার দাবি, জেলায় জেলায় টাস্ক ফোর্স রয়েছে। সর্বত্র নজরদারি চলছে। কোথাও কালোবাজারি হচ্ছে না। হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy