প্রতীকী ছবি।
খুচরো বাজারে আলুর দাম ২৫ টাকা রাখতে চাইছে রাজ্য সরকার। দাম না কমলে সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে। অথচ, শিক্ষা দফতর থেকে মিড-ডে মিলে দেওয়ার জন্য প্রতি কেজি আলু ৩০ টাকায় কেনার কথা বলা হয়েছে।
শুক্রবার পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন (শিক্ষা) মিড-ডে মিলে আলু কেনার দর বেঁধে একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ৩০ টাকা কেজি দরে আলু কেনা যাবে। সেপ্টেম্বর মাসের জন্য এই দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশ যে দিন জারি হয়েছে, সে দিনই আবার সরকারের তরফে সাত দিনের মধ্যে আলুর দাম না কমলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘দিন দশেক আগে ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আমাদের নজরে আসতেই তা তুলে নেওয়া হয়েছে। জেলাশাসকদের খোলা বাজারে সব চেয়ে কম দামে আলু কেনার কথা বলা হয়েছে। তার পরেও পূর্ব বর্ধমানে কী ভাবে পুরনো নির্দেশিকা অনুযায়ী আলু কিনতে বলা হল, খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
আলুর দাম কমানোর বিষয়ে জুলাই থেকেই বার্তা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। ২৪ জুলাই নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠক করে কেজি প্রতি আলুর পাইকারি দাম ২২ টাকা ও খুচরো বাজারে ২৫ টাকা দর বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ৭ অগস্ট ফের নবান্নে বৈঠক করে দাম কামনোর প্রক্রিয়া শুরু করতে বলা হয়। জেলার শিক্ষকদের একাংশের দাবি, অগস্টেও মিড-ডে মিলের জন্য আলুর দাম কেজি প্রতি ২৮ টাকায় কেনার কথা বলেছিল শিক্ষা দফতর। এ বার তা দু’টাকা বাড়ানো হয়েছে।
প্রদীপবাবুর ধারণা, স্থানীয় ভাবে খুচরো বাজারে ভাল আলু ৩০ টাকার কম দরে মিলছে না বলে জেলা প্রশাসন আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে এই নির্দেশিকা জারি করে থাকতে পারে। জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, বারবার বৈঠক করেও সরকারি নির্দেশ কার্যকর করা যায়নি। শুক্রবার ফের নবান্নে বৈঠক করে চলতি সপ্তাহের মধ্যে আলুর দামে লাগাম পরানোর কথা বলা হয়েছে। তা না হলে পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ করার কথা বলেছে রাজ্য সরকার।
বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, মিড-ডে মিলের জন্য প্রয়োজনীয় আলু সরকার নির্ধারিত দরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে তাঁরা কেনেন। চলতি মাসে খোলা বাজারে আলুর দাম ২৮-৩০ টাকা কেজি দরেই ঘোরাফেরা করছে। পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির আলুর প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ১,২৫০-১,২৭০ টাকা দামে। অথচ, সরকার পাইকারি বাজারে প্যাকেট প্রতি আলুর দাম ১,১০০ টাকা রাখতে বলেছে। অনেক শিক্ষক মনে করছেন, খোলা বাজারে দামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই জেলা প্রশাসন দর ঠিক করেছে।
যদিও নির্দেশিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। জেলা টাস্ক ফোর্সের এক সদস্যের কথায়, ‘‘খুচরো বাজারে যখন আলুর দাম ২৫ টাকা রাখার জন্য প্রচার চালানো হচ্ছে, তখন সরকারি স্তরে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করার সুযোগ পেয়ে যাবেন ব্যবসায়ীরা। এর পরে সাধারণ ক্রেতারা কী ভাবে খুচরো বাজারে কম দামে আলু পাবেন?’’ ‘পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি’র রাজ্যের নেতা সুনীল ঘোষ দাবি করেন, ‘‘প্রতি মাসে সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর আলু কিনছে। তা খোলা বাজারের দরেই। সে জন্যই আলুর দাম কমছে না।’’
জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিড-ডে মিল দেওয়া হবে পড়ুয়ার অভিভাবকদের হাতে। গত মাসের মতোই পড়ুয়া পিছু এক কেজি আলু, এক কেজি ছোলা ও একটি করে নামী সংস্থার ১০ টাকা দামের সাবান মিলবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) হুমায়ুন বিশ্বাস বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, আমরাও নির্দেশিকা জারি করে স্কুলগুলিকে পাঠিয়েছি। সরকার আলুর দাম কমিয়ে নির্দেশিকা পাঠালে, স্কুলগুলিকে তা কার্যকর করতে বলা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy