Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
irrigation

নলকূপের বিদ্যুৎ ছিন্ন করতে যাওয়ায় ক্ষোভ

গত বছর তিনেকে ওই সমবায়ের বিদ্যুতের প্রায় ৩০ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা বিল বাকি রয়েছে। তার মধ্যে গত দু’টি মরসুমেই বিল বাকি প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা।

বিক্ষোভ চাষিদের। নিজস্ব চিত্র।

বিক্ষোভ চাষিদের। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেমারি শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:২৬
Share: Save:

সেচের জন্যে ব্যবহৃত গভীর নলকূপের বিদ্যুতের সংযোগ কাটার পরে, বিক্ষোভের মুখে পড়লেন মেমারির ‘গ্রুপ ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই’-এর ঠিকাদারের কর্মীরা। বৃহস্পতিবার মেমারির ঘোষগ্রামে তাঁদের গাড়ি আটকে রাখেন গ্রামবাসীর একংশ। খবর পেয়ে সমবায় সমিতির কর্তারা গ্রামে গেলে তাঁরাও বিক্ষোভের মুখে পড়েন। পুলিশের উপস্থিতিতে সমবায় কর্তারা সেচের জলকর বাবদ যাবতীয় হিসেব বুঝিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলে প্রায় চার ঘণ্টা পরে, কর্মীরা ছাড়া পান। তাঁরা বিদ্যুতের সংযোগ জুড়ে দেন। ওই সমবায়ের সম্পাদক সন্দীপ প্রামাণিক বলেন, ‘‘গ্রামবাসীর দাবিমতো, জলকরের সমস্ত হিসেব নিয়ে সোমবার আলোচনায় বসে সমস্যা মেটানো হবে।’’

বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, মেমারি ১ ব্লকে ‘গোপগন্তার ইউনিয়ন কো-অপারেটিভ এগ্রিকালচার ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড’ স্থানীয় ২৮টি গ্রামে সেচ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ৫৮টি গভীর নলকূপ বসিয়েছে। গত বছর তিনেকে ওই সমবায়ের বিদ্যুতের প্রায় ৩০ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা বিল বাকি রয়েছে। তার মধ্যে গত দু’টি মরসুমেই বিল বাকি প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা। সে কারণে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা আলু চাষের মরসুমে গভীর নলকূপগুলির বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বিদ্যুৎ দফতরের গাড়ি গ্রামে ঢুকে দক্ষিণপাড়ায় সংযোগ কাটার সময়ে গ্রামবাসীর চোখে পড়ে যায়। লোকজন জড়ো হয়ে ঘেরাও শুরু করেন। গাড়ি আটকে রেখে বিক্ষোভ চলে। গ্রামের যুবক মাধব রায়ের দাবি, ‘‘চাষিদের জলকর বাবদ কোনও টাকা বাকি নেই। তা হলে কেন আমাদের গ্রামের গভীর নলকূপের বিদ্যুৎ সংযোগ কাটা হবে? মরসুমের মাঝপথে বিদ্যুৎ কেটে দিলে চাষের বড় ক্ষতি হবে। আমরা সমিতির কাছ থেকে জলকরের সম্পূর্ণ হিসেব পেশ করতে বলেছি।’’ স্থানীয় বাসিন্দা মৃণালকান্তি সিংহের দাবি, ‘‘প্রতি বছর চাষের সময়ে বিদ্যুতের সংযোগ কাটতে আসে। এ বার তার বিহিত চাওয়া হয়েছে।’’ জলকর বাবদ বিঘা প্রতি সমবায় সমিতিকে ধানের মরসুমে ৭০০ টাকা ও আলুর মরসুমে এক হাজার টাকা করে দেন বলে জানান চাষিরা। তা অন্য নানা সমবায়ের চেয়ে বেশি বলেও দাবি চাষিদের একাংশের।

বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রের দাবি, সমবায় সমিতির বকেয়া বিলের মধ্যে দু’লক্ষ ৭০ হাজার টাকা পেলেই কোনও গ্রামে গভীর নলকূপের বিদ্যুৎ সংযোগ কাটা হবে না। সেই টাকা দিতেও সমিতি গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ। বারবার সময় নিয়েও টাকা জমা দিচ্ছে না। সে জন্যই সংযোগ কাটার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। স্থানীয় বিজেপি নেতা সুপ্রিয় ভাণ্ডারির অভিযোগ, ‘‘চাষিরা জলকর দিচ্ছেন। অথচ, বিদ্যুৎ দফতর পাচ্ছেন না। তৃণমূলের হাতে পড়ে সমবায় সমিতি কি দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠল?’’ মেমারি ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মধুসূদন ভট্টাচার্যের পাল্টা দাবি, ‘‘সমবায় সমিতি চাষিদের প্রাণ। অকারণে সমিতির দিকে আঙুল তোলা ঠিক নয়।’’

অভিযোগ মানতে চাননি সমবায় সমিতির কর্তারাও। সমিতির ম্যানেজার অমলকুমার ঘোষের দাবি, ‘‘গ্রামবাসীর কাছে জলকর বাবদ ধানের মরসুমের ৪০ শতাংশ টাকা ও আলুর মরসুমের পুরো টাকা বাকি রয়েছে। বেশ কয়েকবছর ধরে যে জলকর অনাদায়ী রয়েছে, তা আদায়ের দায়িত্ব নিয়েছে উপভোক্তা কমিটি। সোমবার এ নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

irrigation Memari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE