Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coal Mine

আরও সচেতনতার দাবি কর্মীদের পরিবারের

রবিবার দুর্ঘটনার কথা জেনে বাবলুর ছেলে রাজা, আরশিলের ছেলে মিঠু এবং পরিমলের ছেলে গোপালরা জানান, তাঁরা তিন জনই সংস্থায় চাকরি পেয়েছেন ঠিকই।

সাতগ্রাম ইনক্লাইনে দুর্ঘটনার পরে। নিজস্ব চিত্র

সাতগ্রাম ইনক্লাইনে দুর্ঘটনার পরে। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৪৭
Share: Save:

দেশের সব থেকে পুরনো কয়লা খনি ক্ষেত্র ‘রানিগঞ্জ কোলফিল্ড’। বেসরকারি আমল পেরিয়ে রাষ্ট্রায়ত্তকরণ ঘটেছে অনেক দিন আগেই। কিন্তু খনি-দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার খামতি নেই। ফের আরও একটি দুর্ঘটনা সাতগ্রামে। সাম্প্রতিক অতীতে ঘটে যাওয়া খনি দুর্ঘটনায় মৃত শ্রমিক, আধিকারিকদের পরিবারগুলি প্রশ্ন তুলছে, এই ধরনের ঘটনার শেষ কবে হবে। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিয়ে আরও সচেতন হওয়ার দাবিও জানাচ্ছেন তাঁরা।

ইসিএলের প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবর্ষে যথাক্রমে পাঁচটি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনায় ছ’জন এবং ছ’টি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনায় সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি, ওই দুই অর্থবর্ষে যথাক্রমে ১৫টি গুরুতর দুর্ঘটনায় ১৭ জন এবং আটটি দুর্ঘটনায় ন’জন গুরুতর জখম হন। ঘটনাচক্রে, এই তথ্য প্রকাশ করে ইসিএল জানাচ্ছে, তাদের লক্ষ্য, কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু বা জখম হওয়ার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনা।

কিন্তু এখনও যে সে লক্ষ্যে পৌঁছনো যায়নি, তা ওই পরিসংখ্যানেই দেখা যাচ্ছে। ২০০৯-এর ২৭ সেপ্টেম্বর সাতগ্রাম প্রজেক্টে পরিমল খাওয়াস, আরশিলা বিসাই, ২০২১-এর ১৬ অগস্ট ধেমোমেন কোলিয়ারিতে সঞ্জয় মাজি, ২০২২-এর ১৭ জুন জেকে নগর প্রজেক্টে বাবুল হাড়ি খনি-দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। সঞ্জয় ‘মাইনিং ওভারম্যান’ এবং অন্য তিন জন ‘ড্রিলার’ পদেকাজ করতেন।

রবিবার দুর্ঘটনার কথা জেনে বাবলুর ছেলে রাজা, আরশিলের ছেলে মিঠু এবং পরিমলের ছেলে গোপালরা জানান, তাঁরা তিন জনই সংস্থায় চাকরি পেয়েছেন ঠিকই। তবে তাঁদের বক্তব্য, “শ্রমিকের মৃত্যু যাতে না ঘটে, সে দিকে কর্তৃপক্ষকে আরও সচেতন ভাবে নজর দিতে হবে।” তাঁদের আরও অভিযোগ, দুর্ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগে তদন্ত করার প্রাথমিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ঠিকই। কিন্তু শাস্তি হয় না। পাশাপাশি, নিকটাত্মীয়কে চাকরিতে নিয়োগ বা ক্ষতিপূরণ দিলেই মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায় না পরিবারগুলি।

একই কথা বলছেন সঞ্জয়ের বাবা কীরীটভূষণ মাজিও। সঞ্জয়ের ছেলেও ইসিএলে চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু তার পরেও, সঞ্জয়ের বাবার বক্তব্য, “প্রতিটা মৃত্যুর খবরে ছেলের মুখটা মনে পড়ে। এমন ঘটনায় পরিবারের অনেকে মানসিক সমস্যায় ভুগতে পারেন। বার বার এই ধরনের ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে, রক্ষণাবেক্ষণ, পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে কোথাও সমস্যা থাকছে। এ ভাবে মৃত্যুর শেষ কোথায়?”

বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলিও। আইএনটিইউসি নেতা বাবলু সিংহ, সিটু নেতা কলিমুদ্দিন আনসারি, বিএমএস নেতা সৈকত চট্টোপাধ্যায়দের ক্ষোভ, “শ্রমিক-সুরক্ষার নামে প্রতি বছর কোটি-কোটি টাকা খরচ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে কর্তৃপক্ষের যেদিকে নজর দেওয়া দরকার, তা দেওয়া হয় না।”

বিষয়টি নিয়ে ইসিএলের জেনারেল ম্যানেজার (সুরক্ষা) এনকে সাহা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিকের বক্তব্য, “রক্ষণাবেক্ষণের কোনও গাফিলতি নেই। তেমনটা হলে প্রচুর সংখ্যায় দুর্ঘটনা ঘটত। সুরক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় বলেই অনেক কমদুর্ঘটনা ঘটে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coal Mine Raniganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE