Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
robbery

ডাকাতি, সঙ্গে নুডলস খাওয়া সাবস্টেশনে

সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে যায় কাঁকসা থানার পুলিশকর্মীরা এবং বিদ্যুৎ সংস্থাটির আধিকারিকেরা।

ডাকাতির পরে লন্ডভন্ড সাবস্টেশন।

ডাকাতির পরে লন্ডভন্ড সাবস্টেশন। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২১ ০৬:৫০
Share: Save:

রক্ষীদের অস্ত্র কেড়ে সবাইকে এক ঘরে আটকে রাখা হল। এমনকি, রীতিমতো নুডলস বানিয়ে খাওয়াদাওয়াও চলল! রবিবার দুর্গাপুরে বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার ভিতরে থাকা রাজ্য বিদ্যুৎ পরিবহণ সংস্থার (ডব্লিউবিএসইটিসিএল) অধীন ডিপিএল-এর বিদ্যুতের সাবস্টেশনে প্রায় সারা রাত ধরে এ ভাবেই ডাকাতি করার অভিযোগ উঠল এক দল দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। শেষে, ট্রাকে করে যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে তারা চম্পট দেয় বলে অভিযোগ।

বন্ধ কারখানা এইচএফসিএল-এর ভিতরে চার দিক জঙ্গলে ঘেরা সাবস্টেশনটি রয়েছে। সেটির গেটে এক জন বন্দুকধারী ও দু’জন লাঠিধারী বেসরকারি রক্ষী রাত পাহারার কাজ করেন। ব্যারাকে আরও রক্ষী থাকেন।

নিরাপত্তারক্ষী সমীর হালদার পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেন, ‘‘রবিবার রাত পৌনে ১২টায় এক দল দুষ্কৃতী আসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওরা আমাদের আটকে, বন্দুক-লাঠি কেড়ে নিয়ে একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে বাইরে থেকে আটকে দেয়। সাবস্টেশনের অন্য কর্মীদেরও সেখানে আটকে রাখা হয়। এর পরে ওরা কপারের প্লেট, আলমারি ভেঙে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, আমাদের মোবাইল, মানিব্যাগও লুট করে ওরা।’’ পাশাপাশি, তাঁর সংযোজন: ‘‘দুষ্কৃতীরা রান্না করে নুডলস খায়। ভোরে ওরা যাওয়ার পরে আমরা কোনও রকমে বেরিয়ে আসি।’’ শেখ কাওসার আলি জানান, ব্যারাকে বিশ্রাম নেওয়ার সময়ে আচমকা দশ-বারো জন এসে তাঁর বন্দুক কেড়ে নেয়। প্রত্যেকের মুখ ঢাকা ছিল এবং তারা বাংলাতেই কথা বলছিল, জানান শেখ রাজু নামে আরও এক রক্ষী। রক্ষীরা জানান, প্রাথমিক ভাবে তিনটি বন্দুক লুট করলেও, শেষ পর্যন্ত দু’টি যাওয়ার আগে ফেলে দিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ ট্রাকে করে সাবস্টেশনের জিনিসপত্র চাপিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতী দলটি।

এই ঘটনার পরে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে কর্মী মহলে। নিরাপত্তার দাবিতে সোমবার সাবস্টেশনের সামনে বিক্ষোভ দেখায় আইএনটিটিইউসি। সংগঠনের অভিযোগ, আগেও এক বার চুরি হয়েছে এখানে। তার পরে কিছু দিন পুলিশি টহল থাকলেও, এখন সে সব বন্ধ। আইএনটিটিইউসি নেতা শ্যামল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ঘণ্টার পরে ঘণ্টা লুটপাট চালাল দুষ্কৃতীরা। এই পরিস্থিতিতে কর্মীরা নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন।’’ সাবস্টেশনের কর্মী সর্বেশ্বর মাজি বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে এখানে বন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষী বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছি আমরা। এ দিনের ঘটনার পরে, নিরাপত্তারক্ষীরা আতঙ্কে আর কাজ করবেন না বলে জানাচ্ছেন। সব সামগ্রী নিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ন’ডিহা, নারায়ণপুর, রায়ডাঙা, বামুনাড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’ ডিপিএল-এর আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাস বলেন, ‘‘ডিপিএলে স্থায়ী নিরাপত্তারক্ষীদের পদে নিয়োগ হয়নি দীর্ঘদিন। ভরসা শুধু বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীরা। এমনটা চলতে থাকলে আবার যে এই ঘটনা ঘটবে না, কে বলতে পারে।’’

সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে যায় কাঁকসা থানার পুলিশকর্মীরা এবং বিদ্যুৎ সংস্থাটির আধিকারিকেরা। সংস্থার ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার অভিজিৎ মণ্ডল জানান, কাঠের বদলে লোহার গেট লাগানো, ভাঙা পাঁচিল মেরামত করা, নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর মতো বিষয় নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে। পুলিশকেও বলা হবে নিয়মিত টহল দিতে।

পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়ার পরে এ দিন কর্মীরা ফের কাজ শুরু করেন। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তের আশ্বাস, ‘‘রাতে ওই এলাকায় নিয়মিত টহলদারি চালানো হবে। দুষ্কৃতীরা দ্রুত ধরা পড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

WBSEDCL Durgapur robbery dpl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE