প্রতীকী ছবি।
সন্তান-হারা পূর্ব বর্ধমানের দেবশালা পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামল বক্সীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। শ্যামলের ছেলে চঞ্চলকে খুনে দলের কেউ জড়িত থাকলে তাঁকে ‘গুলি করে মারা উচিত’— এমন মন্তব্য করেছিলেন অনুব্রত। ঘটনাচক্রে, ওই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ এলাকার চার পরিচিত তৃণমূল নেতা-সহ আট জনকে গ্রেফতার করে চার্জশিট জমা দিয়েছে আদালতে। কিন্তু ঘটনার পরে দু’মাসেরও বেশি কেটে গেলেও অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে এলাকায়। বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি।
ঘটনাচক্রে, সম্প্রতি শ্যামল নিরাপত্তা চেয়ে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। তিনি শনিবার বলেন, “অভিযুক্তদের গ্রেফতারির পরেই দলের কাছে আর্জি জানিয়েছিলাম, প্রকাশ্যে ধৃতদের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে ওঁদের বহিষ্কার করতে হবে। দল জানিয়েছিল, কালীপুজোর পরে পদক্ষেপ করা হবে। এখনও কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল, তা জানি না।” তাঁর সংযোজন: “আমার বিশ্বাস, ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।” দলের তরফে ওই এলাকা-সহ আউশগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনুব্রতও বলেন, “আজ, রবিবারই বৈঠক ডেকে ওঁদের (অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের) সরিয়ে দেওয়া হবে।”
পুলিশ জানায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর গেঁড়াই থেকে মোটরবাইকে করে দেবশালায় বাড়ি ফিরছিলেন শ্যামল ও তাঁর ছেলে চঞ্চল। ভাতকুণ্ডার আগে জঙ্গলে তাঁদের লক্ষ করে গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ চঞ্চলকে আউশগ্রাম ২ ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এই ঘটনায় মহম্মদ ইনতিয়াজ ওরফে পিণ্টু, আসানুল মণ্ডল, মনির হোসেন মোল্লা ওরফে মনি, বিশ্বরূপ মণ্ডল ওরফে মানু, আয়ুব খান ওরফে বুম্বা, মহম্মদ পাপ্পু, মহম্মদ ইমরান কুরেশি ও শের আলিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে আসানুল ও মনির দেবশালা পঞ্চায়েতেরই তৃণমূল সদস্য। বিশ্বরূপ এবং আয়ুব এলাকায় তৃণমূল নেতা হিসাবে পরিচিত।
পুলিশের দাবি, বাবা ও ছেলেকে খুনের পরিকল্পনা করেন আসানুল, বিশ্বরূপ, মনির ও আয়ুব। খুনের জন্য শের আলি ও ইমরান কুরেশিকে ‘সুপারি কিলার’ বাছা হয়। ছ’লক্ষ টাকার চুক্তি হয়। ঘটনাচক্রে, আসানুলের বিরুদ্ধে ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটের আগে শ্যামল ও চঞ্চলকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি, ২০১৯-এর ৩১ ডিসেম্বর দেবশালা পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজের সুপারভাইজ়ার নিয়োগকে কেন্দ্র করেও তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর অশান্তি হয় বলে অভিযোগ। সেখানেও নাম জড়ায় আসানুলের।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপির বর্ধমান সদর সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি রমন শর্মার কটাক্ষ, “কিছু ঘটলে প্রথমেই বিজেপির উপরে দোষ চাপায় তৃণমূল। অথচ, দলের লোকেরা দলেরই লোককে মারলেও ব্যবস্থা নিতে পারে না তৃণমূল, এই ঘটনা তার প্রমাণ। গোটা দলটাই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জীর্ণ।” যদিও বিজেপির তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের আউশগ্রাম ২ ব্লক সভাপতি রামকৃষ্ণ ঘোষ বলেন, “দলে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। আইন আইনের পথেই চলছে। দল অবশ্যই দ্রুত পদক্ষেপ করবে। অনুব্রত মণ্ডল পুরো বিষয়টি দেখছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy