গ্রামের স্কুলে পড়া ছেড়ে ১৩ বছর বয়সে গয়নার কাজ শিখতে গুজরাটের রাজকোটে গিয়েছিল কালনা ১ ব্লকের জঙ্গলপাড়ার শুভম হাঁসদা। সেই প্রায় সাত বছর আগে। বছর খানেক পর থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরিজনেদের অভিযোগ, খোঁজ করলেই দোকান মালিক অজিত মোল্লা ওরফে হাপাল জানাত, তারাও শুভমের খোঁজ করছে। সম্প্রতি ওই ব্লকের সুলতানপুর পঞ্চায়েতের উপলতি গ্রামের এক কিশোরকে রাজকোটে কাজে নিয়ে গিয়ে নৃশংস ভাবে মারধরের অভিযোগে হাপালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরায় জানা গিয়েছে শুভমকে খুন করে দেহ লোপাট করার জন্য নদীকে ফেলে দিয়েছে হাপালই।
কালনা থানার দাবি, স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করে খুনের বিবরণ আদালতকে দেওয়া হয়েছে। শুভমের মা পূর্ণিমা হাঁসদা এখনও ছেলের মৃত্যুর কথা জানেন না। তিনি বলেন, ‘‘ছেলের সম্পর্কে পুলিশ আমাকে কিছুই জানায়নি। কবে খোঁজ পাব জানি না।’’
সম্প্রতি উপলতি গ্রামের কিশোর মারে ক্ষতবিক্ষত শরীর নিয়ে ঘরে ফেলে। ওই পরিবার জানায়, অনটনের কারণে ছেলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়া শেষ হতেই তাঁরা রাজকোটে গয়নার কাজে পাঠিয়ে দেন। হাপালের কাছেই কাজ করত সে। হাপাল কমবয়সী ছেলেদের দিয়ে কাজ করাত, একটুও খুঁত দেখলেই বেধড়ক মারধর করা হত বলে অভিযোগ। পুলিশ তদন্তে নেমে নাবালকদের অল্প টাকায় কাজে নিয়ে যাওয়ার চক্রেরও খোঁজ পায়। এই ঘটনা জানাজানি হতেই অভিযোগ করেন জঙ্গলপাড়ার বিনোদ হাঁসদার। সাত বছর আগে যে নাবালক ছেলেকে কাজে পাঠিয়েছিলেন, তার কোনও খোঁজ নেই বলে জানান তিনি।
পুলিশ রাজকোটে তদন্তে গিয়ে জানতে পারে হাপাল পকসো-সহ নানা মামলায় অভিযুক্ত। তাঁকে গ্রেফতার করে এনে আদালতে তোলা হয়। শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। পুলিশের দাবি, হাপাল তাঁদের জানায়, ধাক্কাধাক্কিতে ২০১৯ সালের মাঘ মাসে মৃত্যু হয় শুভমের। প্রমাণ লোপাটের জন্য শুভমের দেহ দু’টুকরো করে কেচরা নদীতে ফেলেও দেয় সে। কালনা ১ ব্লকের আকন্দপুকুর এবং কেশবপুর গ্রামের দুই নাবালকও সেই সময় হাপালের কাছে কাজ করত। বর্তমানে সাবালক ওই দু’জনের কাছ থেকেও কিছু তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
২ জুলাই এই মামলার তদন্তকারী অফিসার পার্থসারথী চৌধুরী কালনার এসিজেএম আদালতে হাপালের বিরুদ্ধে খুন এবং প্রমাণ লোপাটের ধারা যুক্ত করার আবেদন জানায়। আদালত তা মঞ্জুর করে। পুলিশের দাবি, কাজ ঠিকঠাক না করলেই নাবালক ছেলেদের মারধর করত হাপাল। সেই কারণেই শুভম অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে বাড়িতেই ফেলে রাখা হয়। মৃত্যুর পরে তিন দিন বাড়ির শৌচাগারের পাশে দেহ লুকিয়ে রেখে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা এবং ধড় আলাদা করে আবর্জনা ভরা নদীতে ফেলে দেওয়া হয় বলে পুলিশের দাবি। যারা দেখেছিল, তাদের হুমকি দিয়ে চুপ করিয়ে রাখা হয় বলে অভিযোগ।
কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘নৃশংস ব্যাপার।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ঘটনাটি যেহেতু রাজকোটে ঘটেছে, তাই তদন্ত রিপোর্ট সেখানে পাঠানো হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)