Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ক্লাসঘরের ট্রেনে এগোচ্ছে পড়ুয়ারা

পুরনো ভবনকে আকর্ষণীয় করে তোলার পর থেকে পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়েছে, দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের।

মেমারির সেই স্কুলের ক্লাসঘরের নকশা। —নিজস্ব চিত্র।

মেমারির সেই স্কুলের ক্লাসঘরের নকশা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেমারি শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৪০
Share: Save:

দরজা দিয়ে উঁকি মারছে কয়েকজন পড়ুয়া। কখনও বা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে গল্প করছেন শিক্ষিকারা। এক ঝলক দেখলে মনে হবে কোনও ট্রেনের কামরার দৃশ্য। কিন্তু এ কামরা ট্রেনের নয়, স্কুলের।

পূর্ব বর্ধমানের মেমারি শহরের বিদ্যাসাগর স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের (ইউনিট ১) পুরনো ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাসঘরের দেওয়ালকে ঘিরেই দূরপাল্লার ট্রেনের আদলে ছবি আঁকা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিদ্যাসাগর এক্সপ্রেস’।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক কেশবকুমার ঘোষাল বলেন, “গত ১০ বছরে মাধ্যমিক পরীক্ষায় আমাদের স্কুলের আট জন পড়ুয়া রাজ্যের মধ্যে স্থান পেয়েছে। প্রতি বছর ৯০ শতাংশের বেশি পড়ুয়া উত্তীর্ণ হয়। এই গতি যাতে বন্ধ না হয়, সে জন্যই পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়াদের ঘর দু’টিকে ট্রেনের আদলে সাজানো হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, যাঁর হাত ধরে বাঙালি সমাজ পড়াশোনায় গতি পেয়েছে, তাঁর নামেই ট্রেনটির নাম রাখা হয়েছে। ঘটনাচক্রে, স্কুলের নামও বিদ্যাসাগরের নামেই।

স্কুল সূত্রে জানা যায়, এই স্কুলের পড়ুয়া রয়েছে ১,৫৬৯ জন। এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণিতে রয়েছে ১৮৬ জন ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে ২০৭ জন। পুরনো ভবনকে আকর্ষণীয় করে তোলার পর থেকে পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়েছে, দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের। পড়ুয়ারাও বলে, ‘‘ট্রেনের কামরায় বসে ক্লাস করতে ভাল লাগে। স্কুলে না এলেই বরং মন খারাপ করে।’’ তৌফিক হাসান, শুভজিৎ চক্রবর্তীদের কথায়, “পুরনো ঘরে স্কুলে আসতে ভাল লাগত না। এখন ক্লাসে ঢুকলে মনে হয় ট্রেনে করি কোথাও যাচ্ছি।’’

চার জন পার্শ্বশিক্ষক নিয়ে মোট ৩৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন স্কুলে। তাঁরা জানান, বছর দু’য়েক আগেও এই স্কুলের শতাধিক বছরের পুরনো ভবনগুলির একাংশের ভগ্নপ্রায় দশা ছিল। ঘরের চাঙড় ভেঙে এক ছাত্র জখমও হয়। তারপর থেকে সকাল ও দুপুর—দু’টি ভাগে ক্লাস নিতে হত। স্কুল সূত্রে জানা যায়, পুরসভার তরফেও স্কুলের একটি ভবনকে ‘বিপজ্জনক’ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে ভবনটি ভেঙেও দেওয়া হয়।

গত ১৪ জানুয়ারি ওই স্কুলের ভবন তৈরি ও সংস্কারের জন্য স্কুল শিক্ষা দফতর ৪৪ লক্ষ ৯৩ হাজার ৯৬৫ টাকা বরাদ্দ করে। নতুন ভবন খুলে দেওয়া হয় গত সেপ্টেম্বরে। দোতলা ওই ভবনটি ৯টি ব্লকে ভাগ করে বিভিন্ন মণীষীদের নাম দেওয়া হয়েছে। পূর্বস্থলীর চুপিতে জন্ম নেওয়া অক্ষয়কুমার দত্ত, কাটোয়ার করুইগ্রামের কালিদাস রায়ের নামেও ‘ব্লক’ রয়েছে। তেমনই এই স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, মেমারির বাসিন্দা শৈলবালা ঘোষজায়াও রয়েছেন। প্রধান শিক্ষক বলেন, “শৈলবালা ঘোষজায়া বিখ্যাত ‘প্রবাসী’ পত্রিকার নিয়মিত লেখিকা ছিলেন। নারী স্বাধীনতা চেয়ে সরবও ছিলেন তিনি। আমরা ঠিক করেছি, ওই সব মান্যজনদের জীবনী সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের মাধ্যমে পড়ুয়াদের সামনে তুলে ধরা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE