Advertisement
E-Paper

রক্ত ঝরছে গলা থেকে, ছুট যুবকের

প্রতিদিনের মতোই চা, চপ ও ফুচকার পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন যুবক। সন্ধেবেলা দোকানে ক্রেতার বিশেষ দেখা নেই। হঠাৎই গলায় দু’হাত চেপে ভিতর থেকে বেরিয়ে আসেন দোকানদার বিজয় সাউ। আশপাশের লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই দৌড়তে শুরু করেন খানিক দূরে বাড়ির দিকে। গলা থেকে রক্ত ঝরছিল গলগল করে।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১০
এই বাড়িতে থাকত বিজয়ের পরিবার।ছবি:ওমপ্রকাশ সিংহ

এই বাড়িতে থাকত বিজয়ের পরিবার।ছবি:ওমপ্রকাশ সিংহ

প্রতিদিনের মতোই চা, চপ ও ফুচকার পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন যুবক। সন্ধেবেলা দোকানে ক্রেতার বিশেষ দেখা নেই। হঠাৎই গলায় দু’হাত চেপে ভিতর থেকে বেরিয়ে আসেন দোকানদার বিজয় সাউ। আশপাশের লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই দৌড়তে শুরু করেন খানিক দূরে বাড়ির দিকে। গলা থেকে রক্ত ঝরছিল গলগল করে।

বাড়িতে পৌঁছতেই বছর পঁচিশের বিজয়কে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে পরিবারের লোকজন চিৎকার-চেঁচামেচি জুড়ে দেন। ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। তড়িঘড়ি গাড়ি ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। কিন্তু রাস্তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়ে দেন ডাক্তারেরা।

২০০৫ সালের ২৯ এপ্রিল জামুড়িয়ার চাকদোলা মোড়ে কৃষ্ণনগর কোলিয়ারি এলাকায় এই খুনের ঘটনায় বিজয়ের বাবা শিব সাউ প্রতিবেশী যুবক সঞ্জয় রাম ও সত্যনারায়ণ সিংহের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেন। সঞ্জয়কে পুলিশ পর দিন গ্রেফতার করলেও সত্যনারায়ণ রয়ে গিয়েছে অধরাই। বছরখানেক পরে পুলিশ আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। মামলার নিষ্পত্তি হয়নি এখনও।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিজয়ের পরিবারের লোকজন এখন আর কেউ এখানে থাকেন না। ঘটনার কিছু দিন পরেই তাঁরা বিহারে নিজেদের আদি বাড়িতে ফিরে যান। এলাকার মানুষজনের দাবি, পরিবার জানিয়েছিল, কী ঘটেছে মৃত্যুর আগে তা তাঁদের বলে গিয়েছেন বিজয়। সেই বয়ান অনুযায়ী, ওই সন্ধ্যায় হঠাৎই বিজয়ের ফাঁকা দোকানে আসে সঞ্জয় ও সত্যনারায়ণ। এক জন বিজয়কে চেপে ধরে, অন্য জন গলায় খুর চালিয়ে দেয়। তার পরে দ্রুত এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। প্রতিবেশীদের দাবি, গ্রেফতার হওয়ার কিছু দিন পরে সঞ্জয় জামিনে ছাড়া পাওয়ায় ও সত্যনারায়ণ ধরাই না পড়ায় তারা আতঙ্কে ভুগছিল বলে বিজয়ের পরিবার দাবি করেছিল। সে কারণেই পরে তারা পাকাপাকি ভাবে এখান থেকে চলে যায়।

• জামুড়িয়ার কৃষ্ণনগর কোলিয়ারি এলাকায় ২০০৫-এর ২৯ এপ্রিল দোকানে ঢুকে বিজয় সাউয়ের (২৫) গলায় খুর চালায় দুষ্কৃতীরা।

• নিহতের পরিবার প্রতিবেশী দুই যুবকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগ দায়ের করে।

• পর দিনই এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অন্য জন ধরা পড়েনি প্রায় বারো বছর পরেও।

• বছরখানেক পরে চার্জশিট জমা পুলিশের। মামলা বিচারাধীন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিহতের এক আত্মীয় ফোনে বলেন, ‘‘বিজয় বা তাঁকে খুনে অভিযুক্ত দু’জন, সবাই এলাকায় ভাল ছেলে বলে পরিচিত ছিল। ঠিক কী কারণে এমন ঘটল, আমদের মাথায় ঢোকেনি!’’ তবে এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে বিবাদেই এই খুন।

সঞ্জয় ও তার পরিবার এখন এলাকায় থাকে না বলে পড়শিরা জানান। তার খুড়তুতো দাদা মনোজ রাম দাবি করেন, ‘‘সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। যে সময় ঘটনাটি ঘটে তখন সঞ্জয় বাড়িতে ছিল।” সত্যনারায়ণ পুলিশের খাতায় ফেরার। তাঁর বাবা-মা এখনও কৃষ্ণনগর কোলিয়ারির কর্মী আবাসনে থাকেন। তার মা উমাদেবী বলেন, ‘‘সত্যনারায়ণ বউকে নিয়ে আলাদা থাকত। বউমা আত্মঘাতী হয়েছে বলে খবর পেয়েছিলাম। কী ভাবে ঘটেছিল, তা আমরা জানি না। তবে তার পর থেকে ছেলে আর এলাকায় ছিল না। এর মাস দেড়েক পরেই বিজয় খুন হয়। ভাল ছেলে ছিল বিজয়। কারও সঙ্গে গোলমাল ছিল বলে শুনিনি। আমার ছেলের নামে কেন মামলা হল তা-ও বুঝতে পারিনি!’’ সত্যনারায়ণের বাবা বাল্মিকীপ্রসাদ সিংহ আবার বলেন, ‘‘আমার ছেলের কোনও হদিস নেই। ও ফিরে এলে আমি নিজে পুলিশের হাতে তুলে দিতাম।’’

২০০৬-এর ১৮ মে পুলিশ আসানসোল আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। তাতে দু’জনকেই খুনে অভিযুক্ত করা হয়। এই আদালতের আইনজীবী মুকুল ঘটক বলেন, “পুলিশের ফেরার অভিযুক্তের আত্মীয়-পরিজনের কাছে খোঁজ করে তাকে ধরে নিয়ে আসা উচিত। তা হলেই এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া সম্ভব।”

Death Murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy