Advertisement
E-Paper

‘সঙ্গী’ সাইকেল বেচে উঠতে হল বাড়ির বাসে

বহু অনুনয়ের পরেও সে রাজ্যের পুলিশ ঝাড়খণ্ডে ঢোকার অনুমতি না দেওয়ায় এ দিন সকাল ১০টা-সাড়ে ১০টা থেকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ওই শ্রমিকেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২০ ০৫:৪৬
ফেলে যেতে হল সাইকেল। বাসে করে বাড়ি ফিরছেন ‘পরিযায়ী’ শ্রমিকেরা। পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানার ডুবুরডিহিতে শুক্রবার। ছবি: পাপন চৌধুরী 

ফেলে যেতে হল সাইকেল। বাসে করে বাড়ি ফিরছেন ‘পরিযায়ী’ শ্রমিকেরা। পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানার ডুবুরডিহিতে শুক্রবার। ছবি: পাপন চৌধুরী 

বিক্ষোভের পরে বাস মিলল ঠিকই। কিন্তু বহু কষ্টে কেনা সাইকেলকে বাসের মাথায় চাপিয়ে বাড়ি ফেরার অনুমতি মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানায় পশ্চিম বর্ধমানের ডুবুরডিহি সীমানায় বিহার, ঝাড়খণ্ডের প্রায় চারশো ‘পরিযায়ী’ শ্রমিক ফের বিক্ষোভ দেখালেন।

বিক্ষোভকারীরা জানান, তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় মূলত দিনমজুরির কাজের সঙ্গে যুক্ত। গত চার-পাঁচ দিন ধরে তাঁরা রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে সাইকেল চালিয়ে অথবা হেঁটে সীমানায় পৌঁছেছেন। তাঁরা জানান, সীমানায় ঝাড়খণ্ড পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। বহু অনুনয়ের পরেও সে রাজ্যের পুলিশ ঝাড়খণ্ডে ঢোকার অনুমতি না দেওয়ায় এ দিন সকাল ১০টা-সাড়ে ১০টা থেকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ওই শ্রমিকেরা।

এই পরিস্থিতিতে পশ্চিম বর্ধমানের কুলটি থানা ও চৌরঙ্গি ফাঁড়ির পুলিশ পরিস্থিতির সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ওই শ্রমিকদের দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার (এসবিএসটিসি) বাসে করে ঝাড়খণ্ড-বিহার সীমানা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। সহযোগিতা করে ঝাড়খণ্ড পুলিশও।

কিন্তু বাসে ওঠার মুখে ফের জটিলতা তৈরি হয়। কুলটি থানার পুলিশ জানায়, সঙ্গে থাকা সাইকেল নিয়ে ওঠা যাবে না বাসে। কিন্তু ওই শ্রমিকদের একাংশ ফের বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা দাবি করেন, বাসের মাথায় সাইকেল চাপিয়ে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে।

কেন এমন দাবি? উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি থেকে সাইকেল চালিয়ে আসা হরিজন রাম বলেন, “আমি সমস্তিপুর যাব। ধার করে সাইকেল কিনেছি। এখন কোথায় রাখব সাইকেল?” হাওড়া থেকে ঝাড়খণ্ডের পলামৌয় ফিরবেন বলে সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছিলেন বটুক রাম। তিনিও বলেন, “বাস থেকে নেমে সাইকেল চালিয়ে সহজেই বাড়ি ফিরতে পারব। কিন্তু পুলিশ সাইকেল নিতে দিচ্ছে না।” ভদ্রেশ্বর থেকে বিহারের ছাপরা যাওয়ার জন্য ধার করে নতুন সাইকেল কিনে পথে নেমেছিলেন লোকনাথ মাহাতো। তিনি বলেন, “একেই টাকার অভাব। তার উপরে নতুন কেনা সাইকেল ফেলতে পারব না।”

ওই শ্রমিকেরা জানান, কেউ ধার করে, কেউ বা শেষ সম্বলটুকু দিয়ে বাড়ি ফিরবেন বলে তিন-চার হাজার টাকায় সাইকেল কিনেছিলেন। শেষমেশ, সেই সাইকেল অবশ্য আশপাশের গ্রামের মানুষজনকে কার্যত জলের দরে (চার-পাঁচশো টাকায়) বিক্রি করে দেন শ্রমিকেরা। তবে, পুলিশের তরফে প্রস্তাব পেয়ে অনেকেই আবার চৌরঙ্গি ফাঁড়িতেও সাইকেল জমা রাখেন।

পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস বলেন, “শ্রমিকদের বাসে করে বিহার সীমানায় ছাড়া হবে। প্রত্যেককে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করিয়ে বাসে চাপানো হয়েছে।” দুপুর ২টো নাগাদ প্রথম বাসটি রওনা দেয়। তবে বাস ছাড়ার মুহূর্তেও অনেক শ্রমিকের গলাতেই তখন সাইকেল-বিচ্ছেদের কষ্ট। বলেন, “এতটা পথ সাইকেলে করেই এলাম। টাকাও খরচ হল। সাইকেলটা সঙ্গে থাকলে ভাল হত।”

Migrant Labourer West Bengal Lockdown Cycle
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy