কোথাও সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় কর্মসূচিই কার্যত দেখা যায়নি বলে পর্যবেক্ষণ এলাকাবাসীর একাংশ। কোথাও আবার কার্যলয় বন্ধ পড়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এবং পঞ্চায়েত ভোটের আগে পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা ব্লকে বিজেপির সাংগঠনিক পরিস্থিতি কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও, বিজেপির একটি সূত্রের অভিযোগ, তৃণমূলের সন্ত্রাসের কারণেই কিছু সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে এই ব্লকে। যদিও তৃণমূল অভিযোগে আমল দেয়নি।
কাঁকসা ব্লক সাতটি পঞ্চায়েত নিয়ে তৈরি। স্থানীয় সূত্রে পর্যবেক্ষণ: ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির ক্ষমতা এই ব্লকে অনেকটাই বেড়েছিল। কাঁকসা ও গোপালপুরে দু’টি করে এবং ত্রিলোকচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতে একটি আসনে জেতে বিজেপি। পরে গোপালপুর পঞ্চায়েতের এক সদস্য অবশ্য তৃণমূলে যোগ দেন। ওই ভোটের পরে থেকেই এবং ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের পরে ব্লকে বিজেপির সংগঠন ভাল জায়গায় ছিল বলে দাবি। এর ‘সুফল’ ২০১৯-এর লোকসভা ও ২০২১-এর বিধানসভা ভোটেও বিজেপি পেয়েছিল বলে দাবি। কাঁকসা ব্লক দু’টি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত। পূর্ব বর্ধমানের গলসি বিধানসভার মধ্যে রয়েছে কাঁকসা, ত্রিলোকচন্দ্রপুর, বনকাটি ও বিদবিহার পঞ্চায়েত। এই চারটি পঞ্চায়েতেই ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে লিড পান বিজেপি প্রার্থী। এ দিকে, মলানদিঘি, গোপালপুর ও আমলাজোড়া পঞ্চায়েতের মধ্যে একমাত্র গোপালপুর পঞ্চায়েত থেকে লিড পান দুর্গাপুর পূর্বেরবিজেপি প্রার্থী।
কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের পরে থেকে ছবিটা দ্রুত বদলাতে থাকে বলে দাবি। বিজেপির সূত্রে অভিযোগ, বিধানসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পরে লাগাতার সন্ত্রাস চালিয়েছে তৃণমূল। অনেক কর্মী ঘরছাড়াও হয়েছিলেন। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। এই মুহূর্তে অবশ্য তেমন কেউ নেই। তবে, বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের পর্যবেক্ষণ: বনকাটি, আমলাজোড়া পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপির সক্রিয় কর্মীদের অনেকেই বসে গিয়েছেন। এলাকাবাসীর একাংশের এ-ও দাবি, বিদবিহার পঞ্চায়েত এলাকায় গত কয়েক মাসে কোনও সাংগঠনিক কর্মসূচি দেখা যায়নি। এ দিকে, গোটা ব্লকে বিজেপির গণ-সংগঠনগুলিরও সে ভাবে কোনও তৎপরতা নেই বলেই দাবি। শুধুমাত্র ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার কিছুটা সক্রিয়তা রয়েছে পানাগড় বাজার এলাকায়। সে সঙ্গে, মলানদিঘি ও গোপালপুর পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপির দলীয় কার্যালয়ও বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে দাবি।
এই পরিস্থিতিতে দুয়ারে পঞ্চায়েত ভোট। এমন ‘নড়বড়ে’ সংগঠন নিয়ে ব্লকে তৃণমূলের সঙ্গে কতটা টেক্কা দিতে পারবে বিজেপি, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মধ্যে। যদিও, এ সব জল্পনা বা তথ্যে আমল দেননি বিজেপির পশ্চিম বর্ধমান জেলার পঞ্চায়েতের আহ্বায়ক অনিরুদ্ধ বাজপেয়ী। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই প্রতিটি পঞ্চায়েতে বুথ স্বশক্তিকরণ যাত্রা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বাড়ি-বাড়ি জনসংযোগ করা হচ্ছে। প্রতিটি বুথে দলীয় সদস্যদের নিয়ে বৈঠক হচ্ছে। সংগঠন করতে গিয়ে কী সমস্যা হচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অনিরুদ্ধের দাবি, “কাঁকসার তিনটি পঞ্চায়েত এলাকায় আমাদের সংগঠন মজবুত। ভোটে লড়ার জন্য অনেকে আর্জিও জানাচ্ছেন।” একই ভাবে কাঁকসার ত্রিলোকচন্দ্রপুর, কাঁকসা, বনকাটি ও বিদবিহার এলাকাতেও বৈঠক করছে বিজেপি। পঞ্চায়েতের দুর্নীতি নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়া হচ্ছে। বিজেপির বর্ধমান (সদর) সহ-সভাপতি রমন শর্মা বলেন, “আমরা প্রতিটি গ্রামে বৈঠক করছি। সংগঠন এখনও শক্তিশালী।”
যদিও, বিজেপির এ সব বক্তব্যে যদিও আমল দেননি তৃণমূলের কাঁকসা ব্লক সভাপতি ভবানী ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “এখানে বিজেপির নিজস্ব কোনও সংগঠন নেই। বাম ভোটে এখানে বিজেপির শ্রীবৃদ্ধি হয়েছিল। এখন আর সে সবও নেই বলে, নিজেদের টিকিয়ে রাখতে সন্ত্রাসের মিথ্যা অভিযোগ করছে বিজেপি।” যদিও, সিপিএম ও বিজেপি, দু’পক্ষই এ তত্ত্ব মানেনি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)