গ্রামে দলীয় কার্যালয় খুলতে চেয়ে গোলমাল বাধে দলেরই আরেক গোষ্ঠীর সঙ্গে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এতটাই বাড়ে যে ঘর ছাড়তে হয় তৃণমূলের ২৬ জনকে। রবিবার খণ্ডঘোষে তৃণমূলের ওই ২৬ জনকেই ঘরে ফেরাল পুলিশ। খণ্ডঘোষ থানার ওসি বক্তিয়ার হোসেন বলেন, “মাসখানের আগে রাজনৈতিক গোলমালে গ্রামের কিছু লোক গ্রামছাড়া হয়েছিলেন। ঘরে ফেরার জন্য আমাদের কাছে বারবার আবেদন করছিলেন তাঁরা। তাঁদেরই গ্রামে ফেরানো হয়েছে।” জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “জেলায় রাজনৈতিক গোলমালে গ্রাম ছাড়া হয়েছেন যাঁরা তাঁদের ধীরে ধীরে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”
এ দিন গ্রামে এসেছিলেন রাজ্য তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের সহ-সভাপতি সুরমান আলি মণ্ডল। তিনিও বলেন, “এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা আমাদের কাছে গ্রাম ছাড়া হওয়ার ঘটনার কথা জানিয়েছিলেন। তাঁদের আবেদন পেয়ে ব্লকের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারপরে যোগাযোগ করি পুলিশের সঙ্গে। সকলের সহযোগিতায় শেষে ওই ঘরছাড়াদের ফেরানো হয়েছে। আশা করি গ্রামে শান্তি বজায় থাকবে।” তবে ওই তৃণমূল সমর্থকদের গ্রামছাড়া হতে হয়েছিল কেন তা স্পষ্ট বলতে চাননি তিনি। যদিও ওই ঘরছাড়াদের দাবি, স্থানীয় প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন মনির অনুগামী তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, দলের আরেক গোষ্ঠীর নেতা ও বর্তমান ব্লক সভাপতি অলোক মাঝির অনুগামীরাই মাসখানের আগে তাঁদের গ্রামছাড়া করেছিলেন।
ঘরছাড়াদের কয়েকজন শেখ ফিরোজ, শেখ মোজাম্মেল, মইদুল ইসলামেরা বলেন, “গ্রামে দলের কোনও অফিস নেই। তাই আমরা নওহাট গ্রামে একটি দলীয় কার্যালয় তৈরির সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু বর্তমান ব্লক সভাপতি অলোক মাঝির অনুগামীরা বলেন উখরিদে যে দলীয় কার্যালয় রয়েছে, সেটিতেই দলের সমস্ত কাজ চলবে। নতুন করে নওহাটে অফিস খোলা যাবে না।” এ নিয়েই প্রথমে বচসা, পরে একটানা সংঘর্ষ চলতে থাকে নওহাট গ্রামে। তারই জেরে গ্রামছাড়া হতে হয় বলে তাঁদের দাবি। তবে এ দিন মোয়াজ্জেম সাহেবের অনুগামীরা ঘরে ফেরার সময়ে অলোকবাবুর কোনও প্রতিনিধি হাজির না থাকায় আশঙ্কা পুরোপুরি মেটেনি বলে গ্রামেরই শেখ পিয়ারের দাবি। তিনি বলেন, “গ্রামে ফিরে আমরা খুশি ঠিকই। কিন্তু কতদিন শান্তিতে বসবাস করতে পারব জানিনা।”
খণ্ডঘোষের তৃণমূল ব্লক সভাপতি অলোক মাঝি অবশ্য কবুল করেছেন গ্রামছাড়া সকলেই তৃণমূল সমর্থক। তাঁর দাবি, “সামান্য গোলমালে ওঁদের গ্রাম থেকে চলে যেতে হয়েছিল। তবে ওঁরা ফিরে এসেছেন।” কিন্তু ফের গোলমালে আবারও ঘর হারা হতে হবে না তো? অলোকবাবু বলেন, “তা যাতে যেতে না হয় তার দায়িত্ব তো আমরা নিয়েছি। আশা করি গোলমাল আর হবে না।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, শুধু নওহাটেই নয়, উখরিদেও মোয়াজ্জমে হোসেন মনির অনুগামীরা নতুন কার্যালয় খুলেছেন। অশান্তি এড়াতে আপাতত সব কটি কার্যালয়ই সমান ভাবে চলবে বলে ঠিক হয়েছে।