গ্রামের মহিলাদের সঙ্গে কথা বলছেন প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম।
গলায় গাঁদার মালা। সামনে বাজছে ঢাক-ঢোল। সঙ্গে রয়েছে কচিকাচা থেকে বয়স্ক সকলেই। কখনও হাত নেড়ে কখনও বা নমস্কার করতে করতে এগিয়ে চলেছেন বোলপুর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম।
তিন বছর পরে শুক্রবার রামচন্দ্র ডোমের হাত ধরেই কেতুগ্রামে প্রচারে নামল সিপিএম। বিদায়ী সাংসদের সঙ্গে দিনভর পা মেলালেন সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তমালচন্দ্র মাঝি থেকে কেতুগ্রাম ১ ব্লকের এক সময়ের সিপিএমের ‘দোর্দন্ডপ্রতাপ’ নেতা ফারুক মির্জা। ছিলেন কেতুগ্রাম ১ উত্তর লোকাল কমিটির সম্পাদক তপন কাজিও। এঁদের বেশিরভাগই বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকে এলাকা ছেড়ে কাটোয়া শহরে কিংবা মুর্শিদাবাদের সালারে থাকছেন।
বিধানসভা নির্বাচনে ১২টি গ্রামে পা পড়েনি সিপিএমের। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও কেতুগ্রাম ১ ব্লকে সিপিএম কোনও প্রার্থী দিতে পারেনি। জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচনে কয়েকটি আসনে প্রার্থী দিলেও বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি সিপিএম। কেতুগ্রাম ১ ব্লকে সিপিএমের উত্তর ও দক্ষিণ লোকাল কমিটির দু’টি দফতরই তালা বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তার মধ্যে আবার একটি লোকাল কমিটির অফিসের গায়ে তৃণমূলের প্রতীক চিহ্ন জ্বলজ্বল করছে। এ হেন ‘কঠিন’ জায়গায় তিন বছর পরে প্রচার শুরু করল সিপিএম। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে মুর্শিদাবাদ-বীরভূম সীমান্তে কেতুগ্রামের মোরগ্রাম থেকে প্রচার শুরু করে তারা। চাকটা-আনখোনা-আমগোড়িয়া-গোপালপুর-কোমরপুর-হাটমুরগ্রামে প্রচার শেষ হতে হতে বিকেল গড়িয়ে যায়। কার্যত নির্বিঘ্নেই এ দিন প্রচার সারেন বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী।
প্রচারে ঘুরে দেখা গেল, প্রায় প্রতিটি জায়গাতেই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের একটাই প্রশ্ন, নিজের ভোটটা নিজে দিতে পারব তো? পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ আসনে প্রার্থী থাকলেও সাধারণ মানুষ নিজেদের ভোট দিতে পারেননি বলে সিপিএম বারবার অভিযোগ জানিয়ে এসেছে।
গোপালপুর থেকে তপন কাজির সঙ্গে গাড়িতে কোমরপুর আসার সময়ে রামচন্দ্র ডোম বলেন, “মানুষ বিপ্লব করার জন্য মুখিয়ে আছে। নির্বাচন কমিশন দৃঢ়তার সঙ্গে মানুষকে নিজেদের ভোট নিজে দেওয়ার ব্যবস্থা করলে দেখবেন, পাশার দান উল্টে গিয়েছে।” ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের প্রবল হাওয়ার মধ্যেও বোলপুর লোকসভায় নিজেদের আসন টিকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য। তার আগে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন তিনি। সে কথা উল্লেখ করে এ দিন রামবাবু বলেন, “সত্তর দশকের লড়াই দেখেছি। কিন্তু এ বারেরটা আরও কঠিন। অসম লড়াই হচ্ছে। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে। অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝছি কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট ও নানুরের মানুষ শ্বাসরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি চাইছেন।”
কেতুগ্রাম ১ উত্তর লোকাল কমিটির বেশিরভাগ জায়গা ঘুরেও সেভাবে সিপিএমের দেওয়াল লিখন বা লাল পতাকা চোখে পড়ল না। কাটোয়া-বোলপুর রাস্তার ধারে কোমরপুরে সিপিএমের লোকাল কমিটির বন্ধ দফতরে তৃণমূলের প্রতীক ঘাসফুল চিহ্ন দেওয়াল লিখন রয়েছে। সিপিএমের লোকাল কমিটির সম্পাদক তপন কাজির দাবি, “এ নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছি।” গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে বন্ধ থাকা দফতর দুটি খোলার জন্য তাঁরা উদ্যোগী হচ্ছেন বলে জানান রামচন্দ্রবাবু। তাঁর কথায়, “দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। সামনে এগোনো ছাড়া আর পথ কোথায়?” তবে কেতুগ্রাম ১ সদর কান্দরাতে পা রাখার জন্য আধাসামরিক বাহিনীর আসার উপর প্রচারের দিন ঠিক করা হবে বলে সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে।
প্রার্থী ভোট চাইতে গ্রামের ভিতরে ঘুরছেন। দূর থেকে বাজনার আওয়াজ আসছে। একটু দূরে একা বসে রয়েছেন ভাগীরথী অজয় জোনাল কমিটির সদস্য ফারুক মির্জা। গ্রামের যাঁর সঙ্গে দেখা হচ্ছে কুশল বিনিময় করছেন। তিনি বলেন, “এই এলাকা আমার হাতের তালুর মতো চেনা। তিন বছর পরে সেখানে পা রাখলাম।”
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy