Advertisement
E-Paper

সহানুভূতি? না কি ভোটের ঘুঁটি? দুর্নীতির প্রশ্ন উঠলেই পার্থের সঙ্গে তৃণমূলকে জুড়ে দিচ্ছেন পদ্মনেতারা, নিশানায় মমতাও

রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে বিদ্ধ করার ভরপুর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বুধবার কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার তেমন আক্রমণাত্মক হননি পার্থের বিরুদ্ধে। সুকান্তের কথায়, ‘‘তিনি নিজে পুরোটা করেছেন, এটা হতে পারে না।’’

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:১১
Bengal BJP’s tone is down against Partha Chatterjee, Is there a larger plan in lotus camp to use Mamata’s former Minister against her

(বাঁ দিক থেকে) পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুকান্ত মজুমদার এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

জামিনে মুক্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী সম্পর্কে সুর ‘নরম’ বিজেপির। যে পার্থ গ্রেফতার হওয়ার পর বিজেপির তীক্ষ্ণ বাণ বার বার ধেয়ে গিয়েছিল তাঁর দিকে, সেই পার্থই জামিন পেয়ে বাড়ি ফেরার পর একটু ‘অন্যরকম’ ভূমিকা নিচ্ছেন রাজ্য বিজেপির নেতারা।

মঙ্গলবারই নাকতলার বাড়িতে ফিরেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় তিনি যা যা করেছেন, তা রাজনৈতিক শিবিরে অনেকের ভ্রূকুঞ্চন ঘটিয়েছে। কারণ দল থেকে নিজের নিলম্বন (সাসপেনশন) সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন তিনি। নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রের বাসিন্দাদের উদ্দেশে খোলা চিঠিও দিয়েছেন। জামিন পাওয়া মাত্রই এত তৎপরতা দেখা গেলে তা চোখে লাগা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তার চেয়েও বেশি নজর টানল বিজেপির অবস্থান। পার্থের দুর্নীতির প্রসঙ্গ উঠলেই বার বার তার সঙ্গে গোটা তৃণমূলকে জুড়ে দিচ্ছে বিজেপি। বার বার মুখ্যমন্ত্রীর দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে আক্রমণের তির। তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়াতে পার্থকে সামনে রেখে বিজেপি নতুন কোনও সমীকরণ সাজাতে চাইছে কি না, চর্চা শুরু হয়েছে তা নিয়ে।

রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে বিদ্ধ করার ভরপুর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বুধবার কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার তেমন আক্রমণাত্মক হননি পার্থের বিরুদ্ধে। বিধানসভার বাইরে এক সাংবাদিক বৈঠকে সুকান্ত বলেন, ‘‘পার্থবাবুর যে বক্তব্য এসেছে, মনে হচ্ছে তা হৃদয়ের ব্যথা থেকে তিনি বলছেন। কারণ তিনি এখন একটা কথাই বলতে পারেন— যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর।’’

পার্থকে অবশ্য সরাসরি ‘ক্লিনচিট্‌’ সুকান্ত দেননি। কিন্তু বার বারই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, সব দোষ পার্থের নয় বা নিয়োগ দুর্নীতির মূল পাণ্ডা পার্থ নন। সুকান্তের কথায়, ‘‘তিনি নিজে পুরোটা করেছেন, এটা হতে পারে না। আমরা তো জানি,পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির একজন মহিলার কাছ থেকে লিস্ট গিয়েছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের কোন মহিলা সদস্যের কাছ থেকে পার্থের কাছে নিয়োগের তালিকা গিয়েছিল, সে নাম অবশ্য তিনি বলবেন না বলে সুকান্ত জানান। বলেন, ‘‘আমি প্রমাণ করতে পারব না, তাই নামটা বলব না। কিন্তু যিনি চাক্ষুষ করেছেন, আমরা তাঁর কাছ থেকে শুনেছি।’’

‘কালীঘাটের কাকুর ফোনালাপের রেকর্ডিংয়ে’ যে টাকার লেনদেনের কথা রয়েছে অথবা পার্থের বান্ধবীর বাড়ি থেকে যে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে, সে কথা সুকান্ত মনে করিয়ে দিয়েছেন। পার্থের বান্ধবী অর্থাৎ অর্পিতা মুখোপাধ্যায় এমন কোনও বড় নায়িকা নন যে তিনি ছবি করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে অত টাকা পাবেন, এমন মন্তব্যও সুকান্ত করেছেন। কিন্তু তার পরে ফের বলেছেন, ‘‘আমি বার বারই বলছি, তিনি একা কিছু করেননি। এতে অনেকে আছেন। মুখ্যমন্ত্রী জড়িত।’’ সুকান্তের কথায়, ‘‘পার্থবাবু বলছেন, তাঁকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটাও হতে পারে যে, এ কথা বলে তিনি তৃণমূলেরই কারও দিকে ইঙ্গিত করার চেষ্টা করছেন।’’

পার্থ যদি বিজেপিতে শামিল হতে চান, দরজা কি খোলা? এমন প্রশ্নও ছিল সুকান্তের জন্য। সুকান্ত তিন বার সে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন। তিন বারই বলেছেন, ‘‘অনুমানভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর হয় না।’’ পার্থের মতো নেতার জন্য বিজেপির দরজা বন্ধ— এমন মন্তব্য বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিকে দিয়ে করাতে পারেননি উপস্থিত সাংবাদিকেরা।

শুধু সুকান্তেরই সুর নরম, এমন নয়। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্য বিজেপির অন্য কোনও নেতাকেও পার্থ সম্পর্কে কোনও ঝাঁঝালো মন্তব্য করতে শোনা যায়নি। জামিনের বিরোধিতা বা আবার হাজতে পাঠানোর হুঁশিয়ারি শোনা যায়নি। রাজনৈতিক শিবিরে জল্পনা বাড়িয়ে দিচ্ছে বিজেপির এই ‘নরম’ সুর। অনেকের অনুমান, পার্থকে তৃণমূল এবং মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘হাতিয়ার’ হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে বিজেপি। তাই পার্থের দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠলেই গোটা তৃণমূলকে সেই দোষে দুষ্ট হিসাবে দেখানোর চেষ্টা। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করার চেষ্টা।

তা হলে কি পার্থকে কাজে লাগিয়ে তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র বেহালা পশ্চিমে তৃণমূলকে বেকায়দায় ফেলার ছক কষছে বিজেপি? এমন প্রশ্ন নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। পার্থ ইতিমধ্যেই আকারে-ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, তিনি রাজনীতিতে থাকতে চান এবং বেহালা পশ্চিম নিয়েই ভাবতে চান। তৃণমূল আদৌ তাঁকে নিয়ে ভাবতে চায় কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে পার্থ স্ব-উদ্যোগেই ভোটের ময়দানে নেমে পড়বেন কি না, তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেকের অনুমান, পরিস্থিতি যদি সে দিকে গড়ায়, তা হলে পার্থকে মদত দিয়ে বেহালায় তৃণমূলের যাত্রাভঙ্গ করার কৌশল নিতে পারে বিজেপি। তাই আপাতত সুর ‘নরম’ রাখা।

SSC recruitment scam Teacher Recruitment Partha Chatterjee West Bengal Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy