Advertisement
E-Paper

বাংলার রসগোল্লা, তকমা জোটার এক বছর পরেও লোগোহীন

তাঁর কথায়, ‘‘জি আই-লাভের আনন্দে মিষ্টিমুখ তো হয়েই চলেছে। কিন্তু ওড়িশাকে টেক্কা দেওয়ার তৃপ্তিটুকু ছাড়া এক বছরে এগোলামটা কোথায়!’’ 

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:৪৪
বাংলার জন্য জিআই লোগো।

বাংলার জন্য জিআই লোগো।

ব্যাপারটা মোটেও মিষ্টি লাগছে না আর! অন্তত ‘রসগোল্লার কলম্বাস’ বলে খ্যাত নবীন দাশের নাতির নাতি ধীমান দাশের তেমনই মনে হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘জি আই-লাভের আনন্দে মিষ্টিমুখ তো হয়েই চলেছে। কিন্তু ওড়িশাকে টেক্কা দেওয়ার তৃপ্তিটুকু ছাড়া এক বছরে এগোলামটা কোথায়!’’

আর এক রসগোল্লা-হেভিওয়েট চিত্তরঞ্জন সুইটসের নিতাই ঘোষও হতবাক্! কোনও লাভের লাভ দেখছে না তারাও ‘‘বাংলার রসগোল্লা জিআই লাভের আগেও রসগোল্লার বিক্রি ছিল। এখনও আছে। এই তকমা নিয়ে তা হলে করবটা কী?’’

বিস্তর প্রমাণ দাখিল করে দু’বছর ধরে শুনানির শেষে এক বছর আগে গত ১৪ নভেম্বর জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন-তকমা আদায় করেছিল ‘বাংলার রসগোল্লা’! সেই যুদ্ধজয়ের আবহে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নানা উদ্‌যাপন চললেও প্রশ্নের কাঁটা কিন্তু খুঁচিয়েই চলেছে। সরকারি সূত্রের খবর, জিআই-তকমার দরুন একটি নির্দিষ্ট লোগো ব্যবহার করতে পারবেন রাজ্যের রসগোল্লা-নির্মাতারা। রাজ্যের বাইরে বা বিদেশে রসগোল্লাকে মেলে ধরতে হলেও এই লোগো তথা ‘বাংলার রসগোল্লা’ ব্র্যান্ডিং একটা সদর্থক ভাবমূর্তি গড়ে বিপণনে কাজে আসবে।

কিন্তু এক বছরে লোগো বিলি দূরে থাক, সেটি কী, তাই বেশির ভাগ মিষ্টি-স্রষ্টার কাছে স্পষ্ট নয়। রসগোল্লা-র জিআই আদায়ের জন্য গড়া পশ্চিমবঙ্গ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানচর্চা উন্নয়ন নিগম বা কর্পোরেশনের কাছে নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে লোগোর জন্য আবেদন করার কথা। তা হলে চেন্নাইয়ে জিআই নথিভুক্তিকরণ দফতরে সেই আবেদন চলে যাবে। তারাই লোগো দেবে। কিন্তু এক বছরে কয়েক জন মিষ্টি-স্রষ্টার সঙ্গে শুধু বার দুয়েক বৈঠক করেছে কর্পোরেশন। আর বার কয়েক দিল্লির ট্রেডফেয়ারে নিজস্ব ইউনিট নিয়ে গিয়েছে রসগোল্লার কর্পোরেশন। আজ বুধবার, বিশ্ব ডায়াবিটিস দিবসেই হিডকো-র উদ্যোগে রসগোল্লা দিবস পালন করছে বাংলা। মিষ্টি-স্রষ্টারা অনেকে সেখানে গেলেও লোগোর বিষয়টা তাঁদের অনেকেরই জানা নেই।

নামী মিষ্টি-স্রষ্টারা কেউ কেউ মনে করছেন, তাঁরা এমনিতেই ব্র্যান্ড হিসেবে জনপ্রিয়। আলাদা তকমার দরকার নেই। আবার মিষ্টি-স্রষ্টাদের পারস্পরিক আকচাআকচি নিয়েও কথা উঠছে। কেসি দাশ-এর বাবা নবীন দাশের ইতিহাসকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া কোনও কোনও মিষ্টি-স্রষ্টার পছন্দ নয় বলেও অভিযোগ।

একটি বেসরকারি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে কেসি দাশ পরিবারের বাড়ি ‘রসগোল্লা ভবনে’ যেতেও কারও নাকি ঘোর অনীহা। কেসি দাশ পরিবারও কিছুটা অভিমানাহত, ‘‘জিআই-তকমা আদায়ের সময়ে গবেষণা ও রসগোল্লার মাপকাঠির খুঁটিনাটি শেখাতে আমরাই সাহায্য করেছি। এখন আমাদেরই লোগোর জন্য আবেদন জানাতে বলা হচ্ছে!’’ কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী রসগোল্লা-স্রষ্টার কটাক্ষ, ‘‘আমাদের রসগোল্লা জাতে আলাদা। মুড়ি-মিছরির সঙ্গে মিশে জিআই লোগো-র গয়নায় খামোখা জাত খোয়াতে যাব কেন?’’

বাস্তবিক, কৃষ্ট আর খ্রিষ্টের মতো রসগোল্লায়-রসগোল্লায় বিস্তর প্রভেদ। কিন্তু এ নিয়ে সরকারি কর্তাদের মত, ‘‘অপেক্ষাকৃত কম চেনা দোকান ‘বাংলার রসগোল্লা’ ব্র্যান্ডিংসুদ্ধ টিন রসগোল্লা বিক্রি শুরু করলে নতুন সুযোগ খোলার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ কী ভাবে দ্রুত সে-কাজ সারা যাবে, আপাতত অবশ্য তার রূপরেখা নেই কারও হাতেই। নিউটাউনের মিষ্টি হাবে তবু এক দিনের আনন্দ অনুষ্ঠান! হাতে এই রসগোল্লাটুকুই সম্বল।

rasgulla GI GI logo রসগোল্লা জিআই
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy