Advertisement
E-Paper

পঞ্চায়েতে প্রার্থী পেতে বিয়ে দিল বিজেপি, প্রার্থী হলেন লাজুক বধূ

পাশের গ্রাম ছাগলগাছির দিকে নজর যেতেই মনে পড়ে গেল শাহেনা খাতুনের কথা। সেই রাতেই শাহেনার বাড়ি গিয়ে হাজির বিজেপি নেতারা। শাহেনা স্নাতক। সকলে চেনেন। তাঁকে এমনিতেই দাঁড় করানো যেত। কিন্তু শাহাজানের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া দরকার। তা হলেই শাহাজানের জনপ্রিয়তাকে বেশি করে কাজে লাগানো যাবে।

মেহেদি হেদেয়াতুল্লা

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:১৬

গ্রামের পঞ্চায়েত আসনটি মহিলা সংরক্ষিত। বিজেপির মহিলা প্রার্থীও ঠিক করা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই মহিলা বেঁকে বসলেন।

বিপাকে পড়ে শনিবার রাতেই উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘির রসাখাওয়াতে বসল সভা। সেখানে হাজির গ্রামের ছেলে শাহাজান আলমও। কথায় কথায় কথা উঠল, শাহাজান যদি দাঁড়াতেন, নির্ঘাৎ জিততেন। কিন্তু মহিলা সংরক্ষিত আসনে শাহাজান দাঁড়াবেন কী করে? আবার হাসি-মস্করার মধ্যেই কথা উঠল, শাহাজানের যদি বিয়ে হত, তাঁর স্ত্রীকে দাঁড় করানো যেত। শাহাজান প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের বলেন, ‘‘বিয়ে ইয়ার্কি নাকি! চাইলাম আর বিয়ে করে নিলাম?’’ সভার সবাই তখন বলছেন, ‘‘বিয়ে আমরা দেব। তারপর তোমার বৌকে প্রার্থী করব।’’ শাহাজানও মজার ছলে বলে দেন, ‘‘ঠিক আছে, মেয়ে দেখুন।’’

তাতেই ইতিকর্তব্য স্থির করে ফেলেন বিজেপি নেতা মহম্মদ জলিল—সত্যিই শাহাজানের জলদি বিয়ে দিতে হবে।

কিন্তু সময় বড় অল্প। পাত্রী কী করে পাওয়া যাবে?

গ্রামে তেমন কেউ নেই। কিন্তু পাশের গ্রাম ছাগলগাছির দিকে নজর যেতেই মনে পড়ে গেল শাহেনা খাতুনের কথা। সেই রাতেই শাহেনার বাড়ি গিয়ে হাজির বিজেপি নেতারা। শাহেনা স্নাতক। সকলে চেনেন। তাঁকে এমনিতেই দাঁড় করানো যেত। কিন্তু শাহাজানের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া দরকার। তা হলেই শাহাজানের জনপ্রিয়তাকে বেশি করে কাজে লাগানো যাবে।

শাহেনার পরিবারও দেখেন, শাহাজান সুপাত্র। পাড়ায় মুদির দোকান। সকলের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক। শাহেনা প্রথমে প্রস্তাব শুনে অবাক হলেও পরে হেসে ফেলেন। সেই সলজ্জ হাসিতেই উত্তরটা লুকোনো ছিল। সকলে হইহই করে ওঠেন।

আরও পড়ুন: সন্ত্রাসে ‘লাভ’ হয় না, এটাই অতীতের শিক্ষা

ঠিক হয়, রবিবারই বিয়ে হয়ে যাবে। হলও তাই। আর সোমবারই রসাখাওয়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে মনোনয়নপত্র জমা দেন শাহেনা। বুধবার জানা যায়, তাঁর মনোনয়ন গ্রাহ্যও হয়েছে। শাহাজান জানালেন, ‘‘আমি কোনও দিন ভাবতে পারিনি এ ভাবে আমার বিয়ে হবে। সত্যি সবটাই ভাগ্য।’’

সদ্য বিয়ে। ভোটে প্রার্থী। শাহেনারও যেন ঘোর কাটে না। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির পাড়ায় এসে খুশি। বললেন, ‘‘খুব ভাল লাগছে। জয়ী হলে আরও ভাল লাগবে। সবার আশীর্বাদ আছে। নিশ্চয়ই জয়ী হব।’’ কিন্তু দুম করে বিয়ের কথা রাজি হলেন কেন? শাহেনার বক্তব্য, ‘‘পরিবারের সকলে মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমারও কোনও আপত্তি ছিল না।’’

বিয়ের অনুষ্ঠান যে তাড়াহুড়োয় খুব ছোট করে হয়েছে, তা নিয়ে খেদ নেই? শাহাজান জানিয়ে দিলেন, ‘‘ভোটের পর বিয়ের প্রীতিভোজ হবে। আর শাহেনা জিতলে আয়োজন তো অনেক বড় করে করতেই
হবে।’’ তবে বিজেপি ধর্মের নামে রাজনীতি করে বলে অনেক দলই যে অভিযোগ করে? শাহাজান বলেন, ‘‘আমাদের সেটা মনে হচ্ছে না। কোনও অসুবিধাও হচ্ছে না। সবাই গুরুত্ব দিচ্ছে।’’

শুধু মুশকিল একটাই। যে বাড়িতেই নবদম্পতি প্রচারে যাচ্ছেন, ভরপেট খাইয়ে দিচ্ছে।

West Bengal Panchayat Elections 2018 Marriage BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy