Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পঞ্চায়েত: নবান্নের দেওয়া নিরাপত্তা পরিকল্পনায় ‘সন্তুষ্ট’ নয় কমিশন

গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ মিলিয়ে প্রায় ১১ হাজার বুথে ভোট হচ্ছে না। ফলে এই সব বুথে ভোটকর্মী বা নিরাপত্তারক্ষী মোতায়নের প্রয়োজন নেই।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা পরিষদ জেতা বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও বাঁকুড়ার গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রাপ্তি যথাক্রমে ৮৭%, ৬৪% ও ৬৩%।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা পরিষদ জেতা বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও বাঁকুড়ার গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রাপ্তি যথাক্রমে ৮৭%, ৬৪% ও ৬৩%।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৮ ০৪:১৩
Share: Save:

এ রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটে ২০ হাজারের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন শাসক দল তৃণমূলের প্রার্থীরা। তার মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ মিলিয়ে প্রায় ১১ হাজার বুথে ভোট হচ্ছে না। ফলে এই সব বুথে ভোটকর্মী বা নিরাপত্তারক্ষী মোতায়নের প্রয়োজন নেই।

কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও পঞ্চায়েত ভোটে নবান্নের দেওয়া নিরাপত্তা-পরিকল্পনায় পুরোপুরি ‘সন্তুষ্ট’ হতে পারল না রাজ্য নির্বাচন কমিশন।

নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে সোমবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য, রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ এবং এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা। তাঁদের মধ্যে মিনিট পঁচিশ কথাবার্তা হয়েছে।

সূত্রের খবর, কমিশনের পক্ষ থেকে ঘুরিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার প্রসঙ্গ তোলা হয়। যদিও রাজ্যের তরফে এ ব্যাপারে ইতিবাচক কোনও মনোভাব দেখানো হয়নি। পাশাপাশি, এ দিনের বৈঠকে ভিন্‌ রাজ্য থেকে পুলিশ আনার প্রসঙ্গও ওঠে। কিন্তু কত সংখ্যক বাহিনী, কবে থেকে পাওয়া যাবে, সে ব্যাপারেও রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা কমিশনকে স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি বলেই ওই সূত্রটির দাবি।

অতি স্পর্শকাতর, স্পর্শকাতর এবং সাধারণ— এই বৈশিষ্ট্যে বুথ বাছাই করে ভোট করাতে চাইছে কমিশন। তারা চায় অতি স্পর্শকাতর বুথে চার জন, স্পর্শকাতর বুথে দু’জন এবং সাধারণ বুথে এক জন করে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হোক।

কিন্তু কমিশনের এই সূত্র মানতে রাজ্য নারাজ। তাদের বক্তব্য, ভোটকেন্দ্র (প্রেমিসেস) পিছু নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হোক। সে ক্ষেত্রে একটি ভোটকেন্দ্রে একাধিক বুথ থাকলে সব ক’টিকেই একটি গোত্রে ফেলতে চাইছে তারা। কিন্তু ভোটকেন্দ্র-পিছু কত করে সশস্ত্র পুলিশ দেওয়া হবে, সে সম্পর্কে রাজ্য স্পষ্ট করে এখনও কিছু জানায়নি বলে কমিশনের একটি মহলের দাবি। কমিশনের প্রশ্ন, একটি ভোটকেন্দ্রে যদি একাধিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত বুথ থাকে, তা হলে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েনের সূত্র কী হবে?

আবার যে ১১ হাজার বুথে ভোট নেওয়ার দরকার হবে না, সেগুলির চরিত্রও মিশ্র। কিন্তু বুথপিছু বা ভোটকেন্দ্র-পিছু কত সশস্ত্র বাহিনী দেওয়া হবে তা চূড়ান্ত না হওয়ায় এ ক্ষেত্রে কত কম বাহিনী লাগবে তা জানা যাচ্ছে না। তা ছাড়া, বুথের চরিত্র নির্ধারণের প্রশ্নেও কমিশনের সঙ্গে সরকারের মনোভাবের ফারাক আছে।

শেষ পর্যন্ত ভিন্‌ রাজ্যের বাহিনী না এলে ভোটকেন্দ্র-পিছু বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনাও ততটা কাজ করবে, তা নিয়ে ধন্দে কমিশন কর্তারা। কারণ, রাজ্যের হাতে রয়েছে ৪৬ হাজার সশস্ত্র রাজ্য পুলিশ, প্রায় ১২ হাজার কলকাতা পুলিশ, আবগারি, কারা এবং বনরক্ষী মিলিয়ে রয়েছেন আরও প্রায় দু’হাজার রক্ষী। সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে ফের এই হিসাব দিয়েছে রাজ্য। কিন্তু বুথ বা ভোটকেন্দ্রে মোতায়েন করা ছাড়াও ভোটকর্মী ও ভোট-সরঞ্জামের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তাও রয়েছে। তা ছাড়া, এলাকা সুরক্ষিত রাখা, হঠাৎ গোলমাল থামানোর জন্য মোবাইল ইউনিট-সহ একাধিক কাজে সশস্ত্র পুলিশকেই ব্যবহার করতে হবে। সে ক্ষেত্রে কী হবে, সেই প্রশ্নও তুলেছিল কমিশন।

অন্য দিকে, নিরাপত্তার কী কী ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আগামী শুক্রবার জমা দিতে কমিশন এবং রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। যদিও সব বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপের আশ্বাস কমিশনকে এ দিন দিয়েছেন রাজ্যের প্রতিনিধিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE