Advertisement
E-Paper

রোমান হরফে বাংলা বই উস্কে দিল বিতর্ক

এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে দুই মলাটে বন্দি এক অভিনব প্রচেষ্টা। বাংলা ভাষায় ছোটদের জন্য লেখা বিভিন্ন প্রচলিত বই এ বার পাওয়া যাবে রোমান হরফে।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩০
রোমান হরফে আবোল-তাবোল। নিজস্ব চিত্র।

রোমান হরফে আবোল-তাবোল। নিজস্ব চিত্র।

কেউ বলছেন, ভাল উদ্যোগ। তবে সফল হবে কি না, সন্দেহ আছে। কেউ আবার স্পষ্টই বলছেন, বাংলা ভাষার পক্ষে এমন উদ্যোগ বিপজ্জনক। এতে আখেরে ক্ষতিই হবে শিশুদের।

এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে দুই মলাটে বন্দি এক অভিনব প্রচেষ্টা। বাংলা ভাষায় ছোটদের জন্য লেখা বিভিন্ন প্রচলিত বই এ বার পাওয়া যাবে রোমান হরফে। বাংলা হরফে স্বচ্ছন্দ নয় যে শিশুরা, এ উদ্যোগ মূলত তাদের কথা ভেবেই। কিন্তু বাংলা ভাষা নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের অনেকেরই মত, মাতৃভাষার প্রতি যে অনীহা শহরাঞ্চলের বাঙালিদের মধ্যে দেখা যায়, এই বই সেই আগুনেই ঘি ঢালবে। বাংলা হরফের সঙ্গে পরিচিতিটাও মুছে যাবে শিশুদের। অন্য পক্ষের বক্তব্য, রোমান হরফ হলেও ভাষাটা তো বাংলাই। ফলে আবোল-তাবোল থেকে হাসিখুশি বা সহজ পাঠ আর ব্রাত্য হয়ে থাকবে না বহু শিশুর কাছে।

বইমেলার আগে কলেজ স্ট্রিটের এক দোকানে দাঁড়িয়ে আবোল-তাবোলের সেই নতুন সংস্করণ হাতে নিয়েই চমকে উঠলেন মানিকতলার ঝর্না দাস। তাঁর সহাস্য মন্তব্য, ‘‘মোবাইলের মতো লেখা এ বার বইয়েও! দারুণ ব্যাপার! বড়দির মেয়ে টরন্টোয় থাকে। বাংলা পড়তে পারে না। ওকে দেব এই বই।’’

বইপাড়া সূত্রের খবর, রোমান হরফে আবোল-তাবোল, হাসিখুশি এবং সহজ পাঠের মোট ছ’টি খণ্ড প্রকাশ করেছে ‘মিত্র অ্যান্ড ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড’। প্রকাশকের দাবি, নতুন প্রজন্মের পাশাপাশি ভিন্ রাজ্য ও ভিন্ দেশের পাঠকদের কাছে বাংলা সাহিত্যকে তুলে ধরতেই তাঁদের এই প্রচেষ্টা। ওই প্রকাশনা সংস্থার প্রধান সম্পাদক সবিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘‘অনেক কিশোর-কিশোরী বাঙালি হয়েও বাংলা বই পড়তে পারে না। তা ছাড়া, বাংলার বাইরেও বাংলা সাহিত্যের প্রচুর পাঠক রয়েছেন। তাঁদের সকলের কাছেই আমাদের সাহিত্যকে নিয়ে যেতে চাই।’’

তবে রোমান হরফে বাংলা বই ছেপে নতুন প্রজন্মকে কতটা বইমুখী করে তোলা যাবে, তা নিয়ে সংশয়ী কবি-সাহিত্যিকদের একাংশ। এতে বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ বিপন্নও হতে পারে বলে মনে করেন তাঁদের কেউ কেউ। অনেকের মতে, এমন বই বেশি বেরোলে নতুন প্রজন্ম বাংলা পড়া থেকে আরও দূরে সরে যাবে।

এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েও সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা উদ্যোগ হিসেবে খারাপ নয়। তবে এতে কাজ কতটা হবে, বলতে পারি না। আজকাল ছেলেমেয়েরা অনেকেই বাংলা অক্ষর চেনে না। তাদের জন্য এটা ভাল। কিন্তু রোমান হরফে গল্প পড়ে তারা বাংলা ভাষা শিখে যাবে, এটা একটু কষ্টকল্পনা বলেই আমার মনে হয়।’’

কবি জয় গোস্বামী আবার মনে করেন, রোমান হরফে বই প্রকাশের উদ্যোগ জনপ্রিয় হলে বাংলা ভাষার স্থায়িত্ব নিয়েই ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘শুনে খুব অবাক লাগল, খুব উদ্ভট লাগল। এই উদ্যোগ সমর্থন পেলে বাংলা ভাষার স্থায়িত্ব নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ আছে বইকি।’’ সেই সঙ্গে জয়ের প্রশ্ন, ‘‘কোনও অভিভাবক যদি মনে করেন, তাঁর সন্তানকে বাংলা সাহিত্য পড়াবেন, তা হলে কি তিনি বাংলা অক্ষর পরিচয় করিয়ে বাংলা ভাষায় আবোল-তাবোল পড়াতে পারেন না?’’ ভাষাবিদ পবিত্র সরকারের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘বইগুলো না দেখে এখনই কিছু বলা উচিত হবে না।’’

প্রকাশকদের মধ্যে অবশ্য এ নিয়ে নানা মত রয়েছে। আনন্দ পাবলিশার্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুবীর মিত্রের বক্তব্য, ‘‘বাংলা সাহিত্যের কদর একেবারেই কমে যাচ্ছে না। আমরা কখনওই এই ধরনের বই প্রকাশ করব না।’’ দেব সাহিত্য কুটীরের কর্ণধার রূপা মজুমদার বলেন, ‘‘আমি এটা সমর্থন করতে পারব না। বাঙালি যদি ইংরেজি ও হিন্দি ভাষা শিখতে পারে, তা হলে মাতৃভাষাটাও শেখা সম্ভব।’’ শিশু সাহিত্য সংসদের ডিরেক্টর চন্দনা দত্তের মত, ‘‘বিষয়টি আমার কাছে নতুন। যদি ভাবে বাংলা পড়ানো যায়, তা হলে ব্যাপারটা ভাল। এতে বাংলা ভাষার মৃত্যু হবে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই।’’

Abol Tabol Roman font Child literature book
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy