জাতীয় হোক কিংবা রাজ্য সড়ক, নাকা তল্লাশি করার সময়ে গাড়ির চালক বা যাত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। আবার পুলিশের বিরুদ্ধেও হামেশাই অভিযোগ ওঠে, নাকা তল্লাশির সময়ে নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহারের। ভবিষ্যতে এই ধরনের অভিযোগ উঠলে প্রকৃত ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, তার জন্য সিসি ক্যামেরা রয়েছে, এমন জায়গায় নাকা তল্লাশি করতে হবে বলে জেলা পুলিশ এবং কমিশনারেটগুলিকে নির্দেশ দিল ভবানী ভবন। এডিজি (লিগ্যাল)-এর তরফে গত সপ্তাহে এই সংক্রান্ত এক গুচ্ছ নির্দেশিকা জেলা পুলিশের সমস্ত থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ডে পাঠানো হয়েছে।
সূত্রের খবর, ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নাকা তল্লাশির সময়ে পুলিশ অফিসারদের দেহ-ক্যামেরাও ব্যবহার করতে হবে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, জেলা বা কমিশনারেট এলাকার কোথায় কোথায় এই নাকা তল্লাশি হবে, তা কন্ট্রোল রুম ঠিক করে থানা, ট্র্যাফিক গার্ড এবং উচ্চপদস্থ কর্তাদের জানিয়ে দেবে। কোনও মতেই থানাগুলি নিজেরা নাকা তল্লাশির জায়গা ঠিক করবে না। সেই সঙ্গেই নাকা তল্লাশির সময়ে গাড়িতে থাকা যাত্রীদের তল্লাশির কারণ জানাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, চালক এবং যাত্রীদের সঙ্গে নম্র ভাবে কথা বলতে বলা হয়েছে পুলিশকর্মীদের। এ ছাড়া, যে গাড়ির তল্লাশি করা হবে, সেই গাড়ি এবং সেটির চালকের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য লিখিত আকারে রেকর্ড করতে বলা হয়েছে। যাতে পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন পড়লে সহজেই চালকের বা গাড়ির খোঁজ মেলে।
রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, চার-পাঁচ জন পুলিশকর্মী এবং অফিসার থাকবেন নাকা তল্লাশির সময়ে। তার মধ্যে এক জন হবেন সুপারভাইজ়ার অফিসার। যাঁকে ওই নাকা তল্লাশির সময়ে সেখানে থাকতে হবে। তাঁর কাছে থাকবে দেহ ক্যামেরা। এ ছাড়া, সেখানে উপস্থিত পুলিশকর্মীদের সকলের
উর্দিতে তাঁদের নাম এবং পদ এমন ভাবে থাকবে, যেন সহজেই তা চোখে পড়ে। নাকা তল্লাশি সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন জায়গায় করা হয়। পুলিশের একাংশের দাবি, এই তল্লাশি সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে হলে পুলিশকর্মীদের উপরে নজর রাখা যায়। এ ছাড়া, সিসি ক্যামেরা এবং দেহ ক্যামেরা থাকার ফলে নাকা তল্লাশির প্রক্রিয়া এবং যানবাহনের গতিবিধি রেকর্ড হয়ে থাকবে। যা পরে কাজে লাগতে পারে বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা। প্রসঙ্গত, কলকাতা পুলিশ এলাকায় নাকা তল্লাশি দীর্ঘদিন ধরেই সিসি ক্যামেরার অধীনে হয়ে থাকে।
পুলিশ সূত্রের খবর, নাকা তল্লাশির সময়ে ঘটনাস্থলেই অপরাধী ডেটাবেস খতিয়ে দেখার জন্য বলা হয়েছে। যাতে কোনও দাগি দুষ্কৃতী সহজে নাকা তল্লাশি এড়িয়ে পালিয়ে যেতে না পারে।
এ ছাড়া, পুলিশ জানিয়েছে, নির্দেশিকা অনুযায়ী, নাকা তল্লাশিতে সন্দেহজনক গাড়ি আটকানোর সময়ে সেখানে থাকা দু’জন পুলিশকর্মীকে সব সময়ে সতর্ক থাকতে হবে। একাধিক পুলিশকর্তা থেকে সাধারণ পুলিশকর্মীরা জানিয়েছেন, ওই নির্দেশিকা মেনে চলার জন্য বলা হলেও বাস্তবে তা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। নির্দেশিকায় সিনিয়র পুলিশকর্তাদের নাকা তল্লাশির সময়ে সেখানে যেতে বলা হয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)