Advertisement
E-Paper

যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে যুদ্ধই, হুঁশিয়ারি বিমান-শ্যামলের

সদ্যই ‘নবান্ন অভিযান’ তাদের মনোবল বাড়িয়েছে। সেই বলে বলীয়ান হয়েই এ বার বুধবারের সাধারণ ধর্মঘট সফল করার জন্য কোমর বেঁধে নামছে বামেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০০

সদ্যই ‘নবান্ন অভিযান’ তাদের মনোবল বাড়িয়েছে। সেই বলে বলীয়ান হয়েই এ বার বুধবারের সাধারণ ধর্মঘট সফল করার জন্য কোমর বেঁধে নামছে বামেরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’দিন আগেই মন্তব্য করেছেন, চাইলে বামেদের চ্যালেঞ্জ তিনি এক মিনিটেই বুঝে নিতে পারেন! ধর্মঘটকে ঘিরে বাম নেতারা এ বার পাল্টা জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ২ সেপ্টেম্বর যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে যুদ্ধই হবে! ধর্মঘটের দিন বাম নেতা-কর্মীদের রাস্তায় থাকতে হবে বলেও রবিবার নির্দেশ জারি করেছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু।

এক দিকে যেমন ধর্মঘটকে ঘিরে সংগঠনকে আরও চাঙ্গা করার চেষ্টা চলছে, তেমনই রাজনৈতিক ভাবেও নরেন্দ্র মোদী ও মমতাকে এক বন্ধনীতে ফেলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় বার্তা দিতে তৎপর হয়েছেন বাম নেতৃত্ব। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ট্রে়ড ইউনিয়নের ডাকে এ বারের ধর্মঘট কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে। কিন্তু আর পাঁচটা ধর্মঘটের মতো এই ধর্মঘটের মোকাবিলা করতেও মাঠে নামছে মমতার প্রশাসন ও শাসক দল। আর এই পরিস্থিতিতে বামেদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস। যে কারণে বাম-কংগ্রেস মিলিত ভাবে এখন মোদী-মমতার যুগলবন্দিকে নিশানা করতে পারছে।

ধর্মঘটের প্রস্তুতির জন্যই এ দিন আলিমুদ্দিনে বসেছিল বামফ্রন্টের বৈঠক। শুধু বামফ্রন্টের শরিকই নয়, ১৭টি বাম দলই ওই ধর্মঘটে সামিল হচ্ছে। বৈঠকের পরে বিমানবাবু বলেন, ‘‘ধর্মঘটের দিন বামপন্থী নেতা-কর্মীদের রাস্তায় থাকতে হবে। রাস্তাই রাস্তা, এই নীতি মেনে চলতে হবে।’’ নবান্ন অভিযানের দিন কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে রাস্তায় ছিলেন বাম নেতারাও। সেই ঘটনার ‘ইতিবাচক’ প্রভাব সংগঠনে পড়েছে দেখেই বিমানবাবুরা এমন নির্দেশ জারি করেছেন বলে বাম সূত্রের ব্যাখ্যা। সেই দিন কি তাঁরা নবান্ন অভিযানের পুনরাবৃত্তি (পুলিশ-বাম খণ্ডযুদ্ধ) আশা করছেন? বিমানবাবুর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে বলছি, আগুন নিয়ে খেলবেন না! ধর্মঘট করার জন্য যা যা করণীয়, বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠন তার ব্যবস্থা করবে। সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সবাইকে ঘরে ঢুকিয়ে দেবে, তা হবে না!’’

সাধারণ ধর্মঘটের জন্য সুর চ়ড়ানোর পাশাপাশিই এআইটিইউসি, ইউটিইউসি, টিইউসিসি, এআইইউটিইউসি, এআইসিসিটিইউ এবং আইএনটিইউসি-সহ ধর্মঘটী শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের পাশে নিয়ে সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী এ দিন বিঁধতে চেয়েছেন মোদী-মমতা বোঝাপড়াকে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের ধর্মঘট কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের সরকার জোর করে ধর্মঘট ভাঙতে এলে বুঝতে হবে, মোদীর সঙ্গে গভীর সেটিং হয়ে গিয়েছে!’’ ধর্মঘটকে সমর্থন করে ইতিমধ্যে বিবৃতি দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও বর্ষীয়ান নেতা মানস ভুঁইয়া। শ্যামলবাবু ১৭টি বাম দলের সঙ্গে সঙ্গেই অধীর ও মানসবাবুকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কংগ্রেসের অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন বিমানবাবুও। আর কংগ্রেসেরই প্রভাবিত আইএনটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি রমেন পাণ্ডে বলেছেন, ‘‘আশা করতে পারি, মোদী সরকারের শ্রমিক-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে মা-মাটি-মানুষের সরকার ধর্মঘট ভাঙার চেষ্টা করবে না!’’ ধর্মঘট এবং রাজ্য সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে অবহিত করতে আজ, সোমবার বিকালে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে যাচ্ছে শ্রমিক ইউনিয়নগুলি। তার পরে ওয়াই চ্যানেলে জমায়েত হয়ে তাদের মিছিল। নবান্ন অভিযানে পুলিশি আক্রমণের প্রতিবাদে আজ দিল্লিতে বঙ্গ ভবনের সামনেও বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছে বামেরা।

পথে নামছে শাসক দলও। তৃণমূলের নানা সংগঠনের তরফে ধর্মঘট-বিরোধী প্রচার এ দিন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। কলকাতায় সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত ধর্মঘটের প্রতিবাদে আজ কেন্দ্রীয় মিছিল করবে আইএনটিটিইউসি। সংগঠনের প্রবীণ নেতা এবং রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেছেন, ‘‘সিপিএম তো আগে গুন্ডামি করে ইতিহাস তৈরি করেছে। আবার করতে চাইছে! চার বছর আগে থাপ্পড় খেয়েছে। আবার খাবে!’’ তিনি ফের বুঝিয়ে দিয়েছেন, যারা কাজ করতে চায়, তাদের পাশে সরকার থাকবে। ধর্মঘট মোকাবিলায় সরকার তৈরি আছে। কিন্তু বিরোধী থাকার সময়ে তাঁরাও তো প্রচুর ধর্মঘট করেছেন? সুব্রতবাবুর জবাব, ‘‘কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সাধারণ মানুষ বন্‌ধ পছন্দ করে না।’’

এই তপ্ত তরজার জেরে ধর্মঘটও কি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে? শ্যামলবাবুর মন্তব্য, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ ধর্মঘট চাই। কিন্তু ধর্মঘট শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ হবে, না অশান্তিপূর্ণ হবে, তা নির্ভর করছে রাজ্য সরকারের উপরে। যদি আগুনে হাত দিতে আসেন, তা হলে হাত পুড়বে! যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে যুদ্ধ হবে!’’

2nd september 2nd september strike general strike shyamal chakraborty biman basu war message state government tmc vs cpm anti strike campaign
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy