Advertisement
E-Paper

উত্তরের দুর্যোগে বাম পদ্ধতিতে ত্রাণসংগ্রহ রাম-রাজনীতিকদের, ‘দেরিতে’ নেমে সিপিএম বলছে, ‘বিজেপি আগে ক্ষমা চেয়ে নিক’

এই অভিজ্ঞতা বাংলার বিজেপির কাছে নতুন। তবে বামেদের কাছে নতুন নয়। ক্ষমতায় থাকাকালীনও বামেরা এ ভাবে পথে নামতেন। বিমান বসু বরাবর পুরোভাগে থাকতেন। কংগ্রেস-তৃণমূল-বিজেপি, তিন দলই সে যুগে একে ‘কৌটো নাড়ানোর রাজনীতি’ বলে কটাক্ষও করত।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৫ ২০:৩৮
উত্তরবঙ্গের জন‍্য ত্রাণ সংগ্রহে বাক্স ও কৌটো হাতে রাস্তায় বিজেপির সুকান্ত মজুমদার ও সজল ঘোষ। বালতি হাতে নেমেছেন সিপিএমের বিমান বসু।

উত্তরবঙ্গের জন‍্য ত্রাণ সংগ্রহে বাক্স ও কৌটো হাতে রাস্তায় বিজেপির সুকান্ত মজুমদার ও সজল ঘোষ। বালতি হাতে নেমেছেন সিপিএমের বিমান বসু। ছবি: সংগৃহীত।

ত্রাণ সংগ্রহে রাস্তায় নেমে ‘বাঁদিক’ ঘেঁষে হাঁটছে বিজেপি। আক্ষরিক অর্থে ‘বাঁদিক’ নয়। বরং উৎসাহী মুখের ভিড় যখন যে দিকে থাকছে, অর্থসংগ্রহের বাক্স হাতে তখন সে দিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন বিজেপি নেতারা। সিপিএমের দাবি, বাক্স, কৌটো, বালতি, চাদর হাতে নিয়ে ত্রাণসংগ্রহের এই পথ ‘বামপন্থী পদ্ধতি’। দেরিতে হলেও বিজেপি সেই পদ্ধতিকেই আপন করতে বাধ্য হল বলে সিপিএম নেতারা কটাক্ষ করছেন। কিন্তু বিজেপি পাল্টা বলছে, দেরিতে হলেও সিপিএম নেতারা যে উত্তরবঙ্গের জন্য পথে নামলেন, তার কৃতিত্ব বিজেপির।

গত শুক্রবার বাক্স হাতে নিয়ে গড়িয়াহাট মোড়ে পথে নেমেছিলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। সব্জিপট্টি থেকে মাছ-মাংসের বাজার, সর্বত্র ঘোরেন তিনি। কর্মসূচিতে সাধারণ জনতার সাড়া দেখে সুকান্ত এতটাই উৎসাহিত হন যে, পরবর্তী দু’দিনও একই কর্মসূচি নিয়ে পথে নামেন। শনিবার বারাসতে। রবিবার নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র বালুরঘাটে।

দক্ষিণবঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুর এবং পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের নানা এলাকায় রাস্তায় নেমে ত্রাণের জন্য অর্থসংগ্রহের ছবি তুলে ধরা হয়েছে রাজ্য বিজেপির সমাজমাধ্যম পাতায়। উত্তরবঙ্গে গাজোলের বিধায়ক চিন্ময় দেববর্মণ, শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, কালচিনির বিধায়ক বিশাল লামাদেরও একই রকম ফ্রেমে দেখা গিয়েছে। উত্তর কলকাতায় কাউন্সিলর সজল ঘোষের নেতৃত্বে রবিবার সকাল থেকে রাস্তায় নেমে চলেছে অর্থসংগ্রহ। একই দিনে দক্ষিণ কলকাতার কসবা এলাকায় বিজেপি নেত্রী কেয়া ঘোষের নেতৃত্বে অর্থসংগ্রহ হয়েছে। এ ছাড়া কলকাতার অন্যান্য প্রান্তে বা জেলায় জেলায় সাধারণ বিজেপি কর্মীরা স্থানীয় উদ্যোগে অর্থসংগ্রহে নেমেছেন। সকলের হাতেই কৌটো, বাক্স বা চাদর এবং কাঁধে দলীয় পতাকা।

গড়িয়াহাটের কর্মসূচির অন্যতম আয়োজক তথা দক্ষিণ কলকাতা জেলা বিজেপির কার্যনির্বাহী সমিতির সদস্য উপমন্যু ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘রাস্তায় অর্থসংগ্রহ করতে নেমে এত ভাল সাড়া পাব, ভাবতে পারিনি। বাজারে বিক্রেতারা নিজেদের কাজ থামিয়ে এগিয়ে এসেছেন টাকা দিতে।’’ একই রকম দাবি কেয়ারও। তিনি বলছেন, ‘‘কারও যৎসামান্য সামর্থ্য। রাস্তায় আমাদের দেখে সসংকোচে জিজ্ঞাসা করছেন, ১০ টাকা দিলে আমরা নেব কি না। আমরা অভিভূত!’’

এই অভিজ্ঞতা বাংলার বিজেপির কাছে নতুন। তবে বামেদের কাছে নতুন নয়। ক্ষমতায় থাকাকালীনও রাজ্যে যে কোনও দুর্যোগের পরে ঠিক এই ভাবেই বামেরা পথে নামতেন। বিমান বসু বরাবর পুরোভাগে থাকতেন। কংগ্রেস-তৃণমূল-বিজেপি, তিন দলই সে যুগে একে ‘কৌটো নাড়ানোর রাজনীতি’ বলে কটাক্ষও করত। তাই এখন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘যা নিয়ে আমাদের ব্যঙ্গ করত, এখন নিজেরাও সেই পথই নিতে বাধ্য হল। সে কথা স্বীকার করে বিজেপির ক্ষমা চাওয়া উচিত।’’ সিপিএম যে এ বার ত্রাণসংগ্রহে পথে নামতে দেরি করে ফেলেছে, সে কথা সুজন মানতে চাইছেন না। বলছেন, ‘‘সারা বাংলায় আমাদের কর্মীরা ত্রাণসংগ্রহে নেমেছেন। ছবি তোলানোটা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। বিজেপির উদ্দেশ্য ছবি তোলানো। তাই নেতাদের সামনে এনে হইচই করছে। আমাদের কর্মীরা নীরবে কাজ করছেন।’’

সুজন জানাচ্ছেন যে, তিনি ইতিমধ্যে গড়িয়া, কামালগাজি, রাজপুর, হরিনাভির মতো এলাকায় রাস্তায় নেমে অর্থসংগ্রহ করেছেন। রবিবার বিমানও কলকাতার কাশীপুর-বেলগাছিয়া বিধানসভা এলাকায় বালতি হাতে নিয়ে অর্থসংগ্রহে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু বিজেপি নেতারা দৃশ্যতই কয়েক দিন আগে থেকে পেথে নেমে পড়েছেন। বিজেপির কর্মসূচিগুলিতে কর্মীদের সংখ্যাও অপেক্ষাকৃত বেশি থাকছে। বাম নেতারা প্রকাশ্যে সে কথা না মানলেও, সিপিএম সূত্র বলছে, কর্মীর অভাব রয়েছে বলেই অর্থসংগ্রহ কর্মসূচির ধাঁচ বদলাতে হয়েছে। আগে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে প্রত্যেক পাড়ায় পৌঁছে যেতেন সিপিএম কর্মীরা। এখন অত কর্মী নেই। তাই কোনও অঞ্চলের সব কর্মীকে একত্রে এনে এলাকার সবচেয়ে জনবহুল রাস্তাটিতে অর্থসংগ্রহ করা হয়।

সুকান্ত অবশ্য এই পথে অর্থসংগ্রহকে ‘বাম-পথ’ বলতে রাজি নন। তিনি বলছেন, ‘‘ভারতে যখনই কেউ কোনও বড় সামাজিক কাজ করেন, তখনই সমাজ সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। সাম্প্রতিকতম নিদর্শন রামমন্দির নির্মাণ। সরকারের কাছ থেকে এক পয়সাও নেওয়া হয়নি। সাধারণ মানুষের চাঁদায় হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে অনেকে এই পদ্ধতিকে বামেদের পথ হিসাবে চিনেছিলেন। কারণ ভারতীয় রীতিনীতিগুলিকে এমনিতে পছন্দ না করলেও, সমাজের সঙ্গে মেশার জন্য এর চেয়ে ভাল কোনও পন্থা বামেরা খুঁজে না পেয়ে এক সময়ে এটা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।’’ সে অভ্যস্ত পথে এ বার বামেদের নামতে দেরি হল কেন? সুকান্তের ব্যাখ্যা, ‘‘আগে বামেদের সংগঠন ছিল, লোকবল ছিল। এখন কিছুই নেই। ডাকলে কাউকে পাওয়া যায় না। কর্মসূচিতে লোক হয় না। তাই তাঁরা সে ভাবে নামতে পারেননি।’’

North Bengal Disaster BJP CPIM left parties Relief Aid West Bengal Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy