Advertisement
১১ মে ২০২৪
BJP

Sukanta Majumdar: চার আসনের ভোট নয়, সুকান্তর প্রাথমিক লক্ষ্য জেলার সংগঠন চেনা, শুরু অক্টোবরেই

দিনহাটা, শান্তিপুর, খড়দহ এবং গোসাবা আসনের জন্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগেই ওই চার কেন্দ্রের নির্বাচন পরিচালনার কমিটি গড়ে দেন সুকান্ত।

অক্টোবরেই বঙ্গ সফর শুরু করছেন রাজ্য বিজেপি-র নতুন সভাপতি।

অক্টোবরেই বঙ্গ সফর শুরু করছেন রাজ্য বিজেপি-র নতুন সভাপতি। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২১ ২০:৪৪
Share: Save:

আগামী ৩০ অক্টোবর রাজ্যের চার বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন। তবে তার প্রচারে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেয়ে জেলায় জেলায় সাংগঠনিক ছবি চিনতে চাইছেন রাজ্য বিজেপি-র নতুন সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ২১ অক্টোবর শুরু হবে তাঁর সেই সফর। রাজ্যের দায়িত্ব পেয়েছেন সবে এক মাস। এর মধ্যে পুজোর সময়টায় সে ভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি নেওয়া যায়নি। গত ১ অক্টোবর রাজ্য বিজেপি-র তরফে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনার পরে নিজের লোকসভা এলাকায় ফিরে গিয়েছিলেন বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত। পুজোর মুখে ফের কলকাতায় এলেও কয়েকটি পুজো মণ্ডপে যাওয়া ছাড়া বিশেষ কোনও কর্মসূচি ছিল না। সেই সময়েই সুকান্ত জানিয়েছিলেন, পুজো মিটলেই পথে নামবেন তিনি। পথে নামবে বিজেপি।

পুজোর আবহ কাটার পর সোমবার সুকান্ত আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘এখনই কোনও বড় কর্মসূচি নয়। সামনে চার আসনের উপনির্বাচন রয়েছে। তার পরে করোনার বিধিনিষেধ শিথিল হলে কর্মসূচি ঠিক করা হবে।’’ তিনিও কি চার আসনের প্রচারে ঝাঁপাচ্ছেন? উত্তরে সুকান্ত বলেন, ‘‘সে ভাবে নয়। তবে ২১ অক্টোবর থেকেই আমার দক্ষিণবঙ্গ সফর শুরু হবে। দফায় দফায় সব জেলায় যাব। শুরু হবে বীরভূম থেকে। সেই সফরের মধ্যেই যখন যেমন সুযোগ পাব, তেমন চলে যাব উপনির্বাচনের প্রচারে। আর আমি তো আগেই ভোটপর্ব পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে কমিটি তৈরি করে দিয়েছি। তাঁরাই সব দেখবেন।’’

প্রসঙ্গত, দিনহাটা, শান্তিপুর, খড়দহ এবং গোসাবা আসনের জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রার্থীদের নাম ঘোষণার আগেই ওই চার কেন্দ্রের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গড়ে দেন সুকান্ত। ৭ অক্টোবর দিল্লি থেকে জানানো হয়, উত্তর ২৪ পরগনার খড়দায় জয় সাহা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা আসনে পলাশ রাণা প্রার্থী হচ্ছেন। ওই দু’টি আসনে গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল জয় পেয়েছিল। একই সঙ্গে বিজেপি-র জেতা নদিয়ার শান্তিপুর বিধানসভায় নিরঞ্জন বিশ্বাস ও কোচবিহারের দিনহাটা আসনে অশোক মণ্ডলের নাম ঘোষণা করে বিজেপি। তার দু’দিন আগেই কমিটি গড়েন সুকান্ত। শান্তিপুর ও দিনহাটা বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী দুই সাংসদ জগন্নাথ সরকার এবং বর্তমানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককে ভোটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও খড়দহের কমিটির মাথায় রয়েছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ এবং গোসাবায় পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো।

রাজ্য বিজেপি ইতিমধ্যেই ওই চার আসনের ভোটের জন্য ২০ জন তারকা প্রচারকের যে তালিকা নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছে, তাতে সকলের উপরেই রয়েছে সুকান্তর নাম। এর পর রয়েছেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে এখনও পর্যন্ত যা কর্মসূচি, তাতে ‘তারকা প্রচারক’ হিসেবে চারটি আসনে ঘুরছেন না সুকান্ত। গত বিধানসভা নির্বাচন তো বটেই, তার আগে উপনির্বাচনেও প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপকে প্রতিটি কেন্দ্রে রোড শো এবং সভা করতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু সেই পথে হাঁটছেন না সুকান্ত। তাঁর ঘনিষ্ঠ রাজ্য বিজেপি-র এক নেতা বলেন, ‘‘সুকান্তদা, নিজেকে ‘কাঠখোট্টা’ বলতে ভালবাসেন। আসলে উনি কাজের বাইরে কিছু বোঝেন না। যেখানে গেলে কাজ হবে, সেখানেই যেতে ভালবাসেন।’’ তবে কি এই উপনির্বাচনের ফল ভাল হবে না আভাস পেয়েই নিজেকে ‘গুটিয়ে’ রাখছেন সুকান্ত? জবাবে রাজ্য বিজেপি-র ওই নেতা বলেন, ‘‘না, সেটা নয়। দিনহাটা ও শান্তিপুর আমাদের জেতা আসন। এ বারেও সহজ জয় মিলবে। বাকি দুই কেন্দ্রেও সর্বশক্তি দিয়ে লড়বে বিজেপি। কিন্তু সুকান্ত’দা কাজের ভাগ করে দেওয়ায় বিশ্বাস করেন। তিনি যাঁদের যোগ্য মনে করে দায়িত্ব দিয়েছেন তাঁরাই সামলাবেন। তিনি নাক গলাতে চান না। তাঁরা যদি প্রচারে সুকান্তদাকে ডাকেন তবে তিনি অবশ্যই যাবেন বলে জানিয়েছেন।’’

২০১৯ সালে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগদানের পরে পরেই লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হন সুকান্ত। জিতে সাংসদও হন। তবে সে ভাবে দলের কোনও সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেননি। জেলার বাইরে হাতেকলমে সাংগঠনিক কাজও করেননি তিনি। বিজেপি সূত্রে খবর, নিজের এই ‘সীমাবদ্ধতা’ মাথায় রেখেই সুকান্ত চাইছেন আগে তিনি সংগঠনকে চিনবেন। তার পরেই বড় কোনও কর্মসূচি নেবেন। ইতিমধ্যেই তিনি ভার্চুয়াল মাধ্যমে সব জেলার নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন। কিন্তু এ বার ঘুরে ঘুরে সব জেলায় যাবেন। প্রতিটি জেলা সফরেই স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলবেন রাজ্য সভাপতি। কোথাও কোথাও একাধিক সাংগঠনিক জেলার নেতাকে একসঙ্গে ডেকে বৈঠক করবেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে আশানুরূপ ফল না হওয়ায় জেলায় জেলায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। প্রার্থী বাছাই ঠিক না হওয়াতেই এমন ফল বলে অভিযোগ তুলে অনেক জায়গায় ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপকে। সেই মুষড়ে-পড়া জেলা নেতৃত্বকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি সাংগঠনিক দুর্বলতা, অভাব, অভিযোগও শুনতে চান সুকান্ত। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি কয়েক দফায় সব জেলায় যাবেন সুকান্ত। কোথাও কোনও সাংগঠনিক রদবদল দরকার কি না, তা-ও ওই সময়েই খতিয়ে দেখবেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Sukanta Majumder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE