বিজেপির টিকিটে জিতেও তৃণমূলে ফেরেন বিশ্বজিৎ। ফাইল চিত্র
খাতায়কলমে তিনি বিজেপির বিধায়ক। গত বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা আসন থেকে বিজেপির টিকিটে জিতেছিলেন। কিন্তু বিজেপির জয়ী বিধায়ক বর্তমানে ইডি হেফাজতে থাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা নেন পরে। বিশ্বজিতের পুরনো দল অবশ্য তৃণমূলই। ঘাসফুলের টিকিটে দু’বার বিধায়ক হয়েছেন। কিন্তু দলের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে চলে যান বিজেপিতে। সোমবার তৃণমূলের সাংগঠনিক যে রদবদল হয়েছে, তাতে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হয়েছেন বিশ্বজিৎ। কিছু দিন আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রানি রাসমণির তুলনা করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি।
তৃণমূলে ফেরা কৃষ্ণনগর উত্তরের বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায়কে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি)-র চেয়ারম্যান করা নিয়ে বিতর্ক আদালতে গড়ায়। কিন্তু বিজেপি কিছুই করতে পারেনি খাতায়কলমে মুকুল বিজেপি বিধায়ক থাকায়। এর পরে আরও এক বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী পিএসি চেয়ারম্যান হয়েছেন। কিন্তু কোনও বিজেপি বিধায়ককে দলের জেলা সভাপতি করার নজির এই প্রথম।
তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে বনগাঁর বিশ্বজিৎ সেই শিবিরের সঙ্গেই ছিলেন। তার আগে ছিলেন কংগ্রেসে। বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ হয়েছিলেন। ২০১১ সালে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বিধানসভা ভোটে দলীয় টিকিট দেন। প্রথম বারেই বনগাঁ উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন বিশ্বজিৎ। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটেও একই আসনে তৃণমূলের টিকিটে জেতেন। মমতার সঙ্গে বরাবর সুসম্পর্ক থাকলেও একটা সময়ে তিনি মুকুল-ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন। ২০১৯ সালে দলের সঙ্গে কিছু বিষয়ে মতানৈক্য হতেই মুকুলের হাত ধরে বিজেপিতে যান। দিল্লিতে গিয়ে যোগদান করেন। রাজ্যে ফেরেন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে।
তবে বিজেপিতে থাকার সময়েও তাঁকে নিয়ে নানা সময় নানা জল্পনা তৈরি হয়। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে তিনি তৃণমূলে ফিরে যেতে পারেন বলে জল্পনা তৈরি হয়। ২০২১ সালের বাজেট অধিবেশনের সময় বিধানসভা চত্বরে মুখ্যমন্ত্রীর পায়ে হাত দিয়ে বিশ্বজিৎ প্রণাম করতেই সতর্ক হয়ে যায় বিজেপি। তাঁকে ডেকে মুকুল ও কৈলাস বিজয়বর্গীয় (রাজ্যে বিজেপির পর্যবেক্ষক) বৈঠক করেন। এর পরে বিজেপি প্রার্থীও করে তাঁকে। জেতার পর থেকেই বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করেন তিনি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মধ্যমগ্রামে জেলা তৃণমূলের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁকে বৈঠক করতেও দেখা যায়। যদিও সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, “বিজেপি-র টিকিটে জিতেছি। আমি বিজেপি-র বিধায়ক। বিজেপিতেই আছি।” যদিও তার অনেক আগেই গত বছরের ৩১ অগস্ট তৃণমূলে ফেরেন বিশ্বজিৎ।
সম্প্রতি আরও একটি কারণে বিশ্বজিৎ খবরের শিরোনামে আসেন। বিশ্বজিতের একটি ভিডিয়ো বার্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। আনন্দবাজার অনলাইন সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই না করলেও সেটা যে তাঁরই বক্তব্য তা অস্বীকার করেননি বিশ্বজিৎ। বনগাঁ শহরে তৃণমূলকর্মীদের এক সভায় তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে আমি রানি রাসমণির ছায়া খুঁজে পাচ্ছি। আগামী ১০০ বছর পরেও মানুষের স্মৃতির মণিকোঠায় থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেমন রয়েছেন রানি রাসমণি।’’ বিশ্বজিতের যুক্তি ছিল, রানি রাসমণি সমাজের পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছিলেন। রাসমণির নানা কৃতিত্ব উল্লেখ করে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন রাসমণির মতোই।’’ সেই বক্তব্য নিয়ে বিরোধীরা বিতর্কও তৈরি করেছিল। তৃণমূল অবশ্য সেই সময়ে বিতর্কে খুব একটা অংশ নেয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy