‘পোস্টিং’ বিতর্কে জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠনের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে চলেছে বিজেপি। স্পষ্ট হয়ে গেল রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সাংবাদিক বৈঠকে। অনিকেত মাহাতো, দেবাশিস হালদার, আসফাকুল্লা নাইয়ার বিরুদ্ধে তৃণমূল ‘প্রতিহিংসা’ চরিতার্থ করছে বলে যে অভিযোগ ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর’স ফ্রন্ট’ (ডব্লিউবিজেডিএফ) তুলছে, শুভেন্দু তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন না। তবে ওই সংগঠনের কারণেই আরজি কর আন্দোলন ‘খতম’ হয়ে গিয়েছে বলে বিরোধী দলনেতা শুক্রবার আক্ষেপের সুরে মন্তব্য করছেন। দেবাশিস, আসফাকুল্লাদের আইনি লড়াই প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘বাকিটা ওরা করবে।’’
যে তিন জনের পোস্টিং নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অনিকেত নির্ধারিত পোস্টিংয়ে যোগ দিচ্ছেন না। সেই কারণে তিনি বেতনও নেবেন না বলে জানিয়েছেন। দেবাশিস এবং আসফাকুল্লা নির্ধারিত পোস্টিংয়েই যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু এর পাশাপাশিই তাঁরা দু’জন শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে শুভেন্দু শুক্রবার বলেন, ‘‘প্রতিহিংসার রাজনীতি। বাকিটা ওরা করবে।’’ শুভেন্দুর গলায় ছিল কটাক্ষের সুর। তিনি বলেন, ‘‘ওরা আদর্শগত ভাবে খুব শক্তিশালী। ওরা খুব বিচারধারার উপরে থাকে। ভুল রাজনীতির জন্য একটা আন্দোলন তো খতম হয়েছে। অভয়ার আন্দোলন (আরজি কর-কাণ্ড)। তবে এই অর্ডারটা প্রতিহিংসার জন্য করেছে, এটা ঘটনা।’’ আরজি কর আন্দোলন তুঙ্গে থাকাকালীন একাধিক কর্মসূচিতে বিজেপি নেতাদের দেখে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। একাধিক বার এ ধরনের ঘটনার মুখে পড়ে বিজেপি নেতৃত্ব জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান স্থলগুলি থেকে দূরে থাকতেই শুরু করেছিলেন। সেই ঘটনাপ্রবাহের কথা যে তিনি ভোলেননি, শুভেন্দুর সাংবাদিক বৈঠকে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে। শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘এই প্রতিহিংসা থেকে বাঁচতে গেলে ‘নো ভোট টু মমতা’ আগে করতে হবে। প্রধান বিরোধী দল বিজেপিকে ঢুকতে দেব না, বিজেপির এমপি-এমএলএ গেলে ‘গো ব্যাক’ করব। তার সুযোগই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিচ্ছেন।’’ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে জুনিয়র ডাক্তারদের যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনেও শুভেন্দু কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আপনারাই তো সন্ধেবেলা বৃষ্টির মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়েছিলেন। অভয়ার মা-বাবাকে জিজ্ঞাসা না করে গিয়েছিলেন। কখনও ভাব, কখনও ঝগড়া। হয় না। লড়াইটা করতে গেলে চোখে চোখ রেখে করতে হয়। এবং নো সেটিং লড়াই করতে হয়।’’
আরও পড়ুন:
জুনিয়র ডাক্তারদের এই সংগঠন এসইউসিআই দ্বারা প্রভাবিত বলে শুভেন্দু মন্তব্য করেন শুক্রবার। সেই এসইউসিআই-কেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। মমতাকে ক্ষমতায় আনার দায় যদি তাঁর মাথার উপরে থেকে থাকে, তা হলে এসইউসিআইয়ের মাথাতেও সেই একই দায় রয়েছে বলে শুভেন্দু মন্তব্য করেন। কারণ হিসাবে সে সময়ে তৃণমূলের সঙ্গে এসইউসিআইও জোটে ছিল বলে শুভেন্দু মনে করিয়ে দেন। বিরোধী দলনেতার কথায়, ‘‘দেবাশিস হালদারবাবু, আপনার বক্তৃতা আমি শুনেছি। আপনি যে দল করেন, সেই দলও তো এই সরকার আনার পিছনে ছিল। জয়নগর, কুলতলিতে তো আমি গিয়ে আপনাদের জন্য প্রচার করেছি।’’
যে ভাবে বিজেপি নেতা-নেত্রীদের বার বার ‘গো ব্যাক’ বলা হচ্ছিল, যে ভাবে তৃণমূলের সরকারকে আক্রমণের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারকেও দেবাশিসরা নিজেদের ভাষণে আক্রমণ করছিলেন, তা যে বিজেপি ভোলেনি, সে কথা শুভেন্দু শুক্রবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তাই দেবাশিস, অনিকেত, আসফাকুল্লাদের পোস্টিংকে ‘প্রতিহিংসা’ বলে আখ্যা দিয়েও আইনি লড়াইয়ে পাশে থাকার কোনও আশ্বাস শুভেন্দুর মুখ থেকে শোনা যায়নি।