E-Paper

সরকার কিন্তু থাকবে, ফের বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর, পাল্টা বিরোধী নেতারও

কোচবিহারের রবীন্দ্র ভবনে সোমবার প্রশাসনিক সভায় এসআইআর প্রসঙ্গ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি বলেছেন, ‘‘আমি জানি, বিডিও-দের উপরে চাপ পড়ছে। এসডিও-দের উপরে চাপ পড়ছে। এবং বিশেষ করে বিএলও-দের উপরে চাপ পড়ছে।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:২৭
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজে বুথ লেভল অফিসার (বিএলও)-সহ সরকারি কর্মী ও আধিকারিকদের উপরে চাপ পড়ছে বলে ফের সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গেই সরকারি কর্মীদের আবার তিনি মনে করিয়ে দিলেন, এখন নির্বাচন কমিশনের কাজ করলেও সরকার কিন্তু থেকে যাবে! একই দিনে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পাল্টা অভিযোগ, শাসক দল ও তাদের ভোট-কৌশলী সংস্থার ‘চাপে’ অনেক বিএলও গণনা-পত্র পূরণ করে দিয়েছেন। শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি, কমিশনের ‘সদিচ্ছা’ থাকলে এঁদের কী পরিণতি হবে, তাঁরাও জানেন না!

কোচবিহারের রবীন্দ্র ভবনে সোমবার প্রশাসনিক সভায় এসআইআর প্রসঙ্গ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি বলেছেন, ‘‘আমি জানি, বিডিও-দের উপরে চাপ পড়ছে। এসডিও-দের উপরে চাপ পড়ছে। এবং বিশেষ করে বিএলও-দের উপরে চাপ পড়ছে। বিএলএ-দের (বুথ লেভল এজেন্ট) উপরেও চাপ পড়ছে। আপনারা দেখবেন, ওই কাজটাও করতে হবে, সরকারের উন্নয়নের কাজও করতে হবে। ইচ্ছে করে এমন একটা সময় পছন্দ করা হয়েছে, যাতে উন্নয়নের কাজটা বন্ধ থাকে। কিন্তু উন্নয়নের কাজটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কোনও কাজেই যেন গাফিলতি না হয়।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘বিএলও-দের সবাই সাহায্য করবেন। বিএলএ-দেরও। এবং ডিএম-দের বলব, অনেক সময়ে সার্ভার কাজ করে না। ঠিক মতো উঠছে না। এক-এক জায়গায় আর এক জনের নাম উঠে যাচ্ছে, এ রকমও অনেক ঘটনা রয়েছে। ধরুন, বিয়ে হয়েছে একটা মেয়ের, সে শ্বশুরবাড়ি চলে গিয়েছে, তার নামটা তোলার জন্য ফর্ম দেওয়া হচ্ছে না। বিহারের অনেক নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। যারা বিহারের নির্বাচনে ভোট দেয়নি তাদের তো এখানে ভোট দেওয়ার অধিকার আছে। তাদের নাম কেন বাদ যাবে?’’

কমিশন এবং বিজেপির নাম না-করে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘এসআইআর অপরিকল্পিত। সার্ভার কাজ করছে না। বিএলও-দের রাত ১০টার পরে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিডিও-দের, এসডিওদের ঘুমোতে দেওয়া হচ্ছে না। চাপের উপরে চাপ! বাংলায় প্রায় ৪১ জন মারা গিয়েছেন। তিন জন বিএলও মারা গিয়েছেন। ১৫ জন হাসপাতালে। তিন জন আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল, এটা মাথায় রাখবেন।’’ এই সূত্রেই মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘‘আমি শুনেছি, কাউকে কাউকে আগে বলা হয়েছিল, হয় জেলে পাঠাবে, নয় চাকরি খেয়ে নেবে। কত সব চাকরি খাওয়ার মালিক! নির্বাচন আসে চলে যায়। সরকার কিন্তু থেকে যায়। এটা মাথায় রাখবেন!’’

ঘটনাচক্রে, পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা থানার পোক্তাপোল এলাকায় একটি ডাম্পারের সঙ্গে বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দিনই মৃত্যু হয়েছে অরবিন্দ মিশ্র (৩২) নামে এক বিলও-র। নারায়ণগড় ব্লকের কুনারপুর পঞ্চায়েতের ২২৫ নম্বর সাইকা মাধবচক বুথের বিএলও ছিলেন তিনি। বাইকে যাওয়ার সময়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক ওই বিএলও-র মৃত্যুর সঙ্গে এসআইআরের ‘চাপ’কে যুক্ত করে সরব হয়েছে তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন। একই অভিযোগ করেছে মৃতের পরিবারও। নারায়ণগড়ের বিডিও কৌশিক প্রামাণিক অবশ্য বলেন, ‘‘কাজ তো এমনিতেই প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। চাপ কিছু নেই।’’

বিধাননগরের বিজেপি দফতরে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী ও শাসক দলকে পাল্টা নিশানা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভে্ন্দু। তাঁর দাবি, “বাংলাদেশি, মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারখানা থেকে যতই দু’নম্বরি কাগজ বার করুন, তা কমিশনের নির্দেশিকার সঙ্গে মিলবে না। তৃণমূলের ভোট-কৌশলী সংস্থার চাপে বিএলও-রা কোনও মৃত ভোটারের নাম তুলে দিলে, বিজেপি তা কাটাবে। আমরা ১৩ লক্ষ ২৫ হাজার ‘ডাবল এন্ট্রি’ জমা দিয়েছিলাম। সাড়ে ৬ লক্ষ বাদ গিয়েছে। অনেক বিএলও জানেনই না, তাঁদের ফর্ম কে পূরণ করেছেন। তৃণমূলের ভোট-কৌশলী সংস্থা পূরণ করেছে।’’ শুভেন্দুর সংযোজন, ‘‘তর তর করে মৃত, ভুয়ো, স্থানান্তরিত ভোটারের সংখ্যা বাড়ছে। নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা থাকলে এঁদের শুধু চাকরি যাবে না, সংবিধানকে মান্যতা দেওয়া হলে, কী পরিণতি হবে নিজেরাই জানে না!” একই সঙ্গে তিনি ফের বলেছেন, “তৃণমূল, বিজেপি, হিন্দু-মুসলিম, যিনিই হন না কেন, বৈধ ভোটার হলে আবেদন জানাবেন। কোনও সমস্যা নেই।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee Special Intensive Revision BLO West Bengal government TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy