Advertisement
E-Paper

ইট-বালির স্তূপ সরাতেই দেখা যায় পা

আমগাছের তলায় ইট আর বালির স্তূপ সরাতেই নজরে এসেছিল পা-টা বেরিয়ে রয়েছে। একাদশ শ্রেণির ছাত্রী বলে উঠেছিল, ‘‘ওটা দাদার। আর ফিরবে না দাদা!’’

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৬ ০২:৫৫

•ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে খুন

•অভিযুক্তের বাড়িতে হামলা এলাকাবাসীর

•খুনের কারণ স্পষ্ট নয় চার বছরেও

•মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ

আমগাছের তলায় ইট আর বালির স্তূপ সরাতেই নজরে এসেছিল পা-টা বেরিয়ে রয়েছে। একাদশ শ্রেণির ছাত্রী বলে উঠেছিল, ‘‘ওটা দাদার। আর ফিরবে না দাদা!’’

ভ্যালেনটাইন্স ডে-র পার্টিতে গিয়েছিলেন চৈতক মুখোপাধ্যায়। গেলেন বটে, কিন্তু আর ফেরেননি ২৬ বছরের এই যুবক।

দু’দিন পরে পড়শির বাড়িতে তল্লাশি করতে গিয়ে প্রথমে দেখা যায়, তাঁর পায়ের অংশ। দেহ উদ্ধারের পরে কোতুলপুর থানায় দায়ের হয় কেস নাম্বার ৩৩/১২। চৈতক-হত্যার তদন্তে নামে পুলিশ।

২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ্যে আসা ওই খুনের ঘটনা খেপিয়ে দিয়েছিল বাঁকুড়ার কোতুলপুরের গাঁতি গ্রামকে, যেখানে বাড়ি চৈতকের। ক্ষিপ্ত জনতা অভিযুক্ত শ্রীমন্ত দাসের বাড়িতে আগুন লাগায়। জনতার হাত থেকে অভিযুক্তকে বাঁচাতে সে দিন র‌্যাফ নামাতে হয়।

মাঝে চারটি বছর পার হয়ে গিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, কোতুলপুরের রামকৃষ্ণপল্লির বাসিন্দা শ্রীমন্ত, তাঁর মা ঝর্নাদেবী, শ্রীমন্তর দুই ভাই— তাপস ও অনুপ এবং শ্রীমন্তর বন্ধু নবকুমার অধিকারীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়। পাঁচ জনই গ্রেফতার হলেও বর্তমানে শ্রীমন্ত ছাড়া বাকিরা জামিনে মুক্ত। বিষ্ণুপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী গুরুপদ ভট্টাচার্য জানান, মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ হয়ে গিয়েছে। যে কোনও দিন রায় জানাবে আদালত।

কিন্তু কেন খুন হতে হয়েছিল চৈতককে সে প্রশ্নের উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়। খুনের পরে এলাকাবাসীর একাংশ দাবি করেছিলেন, শ্রীমন্ত কিডনি-পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। চৈতক কম্পিউটার সফ‌্টওয়্যারের কাজ জানতেন। শ্রীমন্তের খারাপ হয়ে যাওয়া কম্পিউটার সারাতে গিয়ে সে সংক্রান্ত কিছু তথ্য জেনে ফেলাতেই ছক কষে খুন করা হয় চৈতককে।

তদন্তে নেমে পুলিশ অবশ্য কিডনি-পাচার চক্রের হদিস পায়নি। প্রমাণ হয়নি তেমন কোনও চক্রের সঙ্গে শ্রীমন্তর জড়িত থাকার অভিযোগও। তা হলে খুনের কারণ কী? পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, “শ্রীমন্ত বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে লোক ঠকানো ব্যবসা করতেন বলে খবর পেয়েছিলাম। আর সেই চক্রের কথা চৈতক জেনে ফেলাতেই খুন করা হয় বলে অনুমান করা হচ্ছিল।”

কিন্তু খোদ সরকারি কৌঁসুলি গুরুপদবাবু জানাচ্ছেন, পুলিশ চার্জশিটে খুনের কারণের স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘গোপন কিছু জেনে ফেলার জন্যই যে চৈতককে খুন হতে হয়েছে, সেটা নিশ্চিত।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, ভ্যালেনটাইন্স ডে-তে (১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১২) পার্টির নাম করে বাড়িতে ডেকে গুলি করে চৈতককে খুন করার অভিযোগ রয়েছে শ্রীমন্তর বিরুদ্ধে। প্রমাণ লোপাটের জন্য তাঁর দেহ পুঁতে ফেলা হয়। চৈতক খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটিও শ্রীমন্তের বাড়ির চিলেকোঠা থেকে মিলেছে বলে পুলিশের দাবি। খুনের পর থেকে চৈতকের মোটরবাইকটি পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে সেটিও পুলিশ উদ্ধার করে। ১২ মে, ২০১২ পুলিশ আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। পরে শ্রীমন্ত ছাড়া অন্যেরা জামিন পান।

অভিযুক্তদের পক্ষে শ্রীমন্তর ভাই তাপস দাস ফোনে দাবি করেন, “খুনের সঙ্গে আমরা জড়িত নই। পুলিশ মনে করে, আমার দাদা খুন করেছে। এর বেশি বলতে চাই না।” সরকারি কৌঁসুলি অবশ্য বলেন, “খুনের কথা জেনেও তাপসবাবুরা পুলিশকে ঘটনাটি জানাননি। তাই বিচারকের কাছে সবার জন্যই চরম শাস্তির আর্জি জানিয়েছি।”

কোতুলপুর বাজারে ছোটখাটো স্টেশনারি দোকান থেকে দিন চলে চৈতকের বাবা স্বপন মুখোপাধ্যায়ের। বৃদ্ধ বলেন, “স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে ছেলে ও মেয়েকে নিয়েই ছিল আমার সংসার। কিন্তু আমার ছেলেকে মেরে ফেলল ওরা। কেন মারল, বুঝিনি!”

দাদার দেহ যখন শনাক্ত করেছিলেন, তখন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী শিল্পা। এখন নাট্যকর্মী এই তরুণী আজও ভুলতে পারেননি সে দিনের কথা। তাঁর কথায়, “যখন বাড়ি থেকে বেরোচ্ছিল, জানতাম না দাদা কোথায় যাচ্ছে। কেন আমার দাদাকে মরতে হল, সেটাও জানি না!’’

body bricks sand found
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy