মাদক আইনে গ্রেফতার হওয়া এক ব্যক্তির জামিনের মামলার শুনানিতে নিম্ন আদালতের দুই বিচারকের কর্তব্যে গাফিলতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করল কলকাতা হাই কোর্ট। সম্প্রতি হাই কোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের ওই মামলায় উঠে এসেছিল যে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের সময় কোনও নিয়ম মানেনি পুলিশ। নিম্ন আদালত সেই গাফিলতির দিকে নজর দেয়নি। উপরন্তু ধৃতকে আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আইনি সহায়তা বা লিগাল এডের আইনজীবী দেয়নি কোর্ট। তাই প্রায় এক বছর জেল খাটলেও অভিযুক্তের কোনও বক্তব্য শোনা যায়নি। এর পরেই বিচারপতি কৃষ্ণ রাও আলিপুরদুয়ারের জেলা ও দায়রা বিচারক (মাদক মামলা) এবং মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার জন্য এই মামলার নথি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়েছেন। অভিযুক্তকে শর্তাধীন জামিনও দিয়েছেন।
বিচারপতি রাওয়ের পর্যবেক্ষণ, এই মামলায় অভিযুক্ত সুধার মঙ্গরকে গ্রেফতারের সময় তাঁর পরিবারের লোককে গ্রেফতারের কারণ জানানো হয়নি। কেস ডায়েরিতে পরিবারকে জানানোর কথা পুলিশ লিখলেও নিম্ন আদালতে কোনও নথি দেয়নি। ধৃতকে কোর্টে পেশ করার নথি (ফরওয়ার্ডিং লেটার) সুধারকে দেওয়া হয়নি। ধৃতকে লিগাল এডের তরফে কোনও আইনজীবী দেয়নি নিম্ন আদালত। সুধারকে গ্রেফতার করার পদ্ধতি সংবিধানের বিরোধী বলেও উল্লেখ করেছেন বিচারপতি রাও।
আদালতের খবর, ২০২৪ সালের ২৮ মার্চ রাতে আলিপুরদুয়ারের জয়গাঁওয়ের বাসিন্দা সুধার মঙ্গরের বাড়িতে হানা দিয়েছিল স্থানীয় থানার পুলিশ। কোর্টে পেশ করা নথিতে পুলিশ দাবি করেছে যে সুধারের বাড়িতে তল্লাশি করে একটি প্লাস্টিকের বস্তার ভিতরে ৪০ বোতল নিষিদ্ধ কাশির ওষুধ পাওয়া গিয়েছিল। তারপরেই সুধারকে পাকড়াও করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং মামলা রুজু করা হয়। সুধারের আইনজীবী অর্জুন চৌধুরী কোর্টে দাবি করেন যে গ্রেফতারের সময়ে পুলিশ আইন অনুযায়ী গ্রেফতারের কারণ অভিযুক্তকে জানায়নি। তাই এই গ্রেফতার বেআইনি। যদিও সরকারি কৌঁসুলি দাবি করেন যে ধৃতকে লিখিত ভাবে গ্রেফতারের কথা জানাতে হবে, সে কথা আইনে স্পষ্ট বলা নেই। ধৃতকে গ্রেফতারের কারণ বলা হয়েছিল বলেও তিনি দাবি করেন।
দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারপতি রাওয়ের পর্যবেক্ষণ, গ্রেফতারের নথিতে (অ্যারেস্ট মেমো) ধৃত এবং তাঁর পরিবারের সদস্যের সই থাকলেও গ্রেফতারের কারণ নথিতে লেখা নেই। মাদক মামলার বিচারকের সামনে পেশ করা নথিতে পুলিশ ‘গ্রেফতারের কারণ’ দর্শানোর দাবি করলেও তার সপক্ষে কোনও প্রমাণ দেয়নি। সুধারকে গ্রেফতারের পরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। সুধারকে জামিন দিলেও বিচারপতি এ-ও জানিয়েছেন যে নিম্ন আদালতের প্রতি শুনানিতে উপস্থিত থাকতে হবে অভিযুক্তকে এবং নিম্ন আদালতের অনুমতি ছাড়া জয়গাঁও থানা এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না তিনি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)