এসএসসি (স্কুল সার্ভিস কমিশন)-র ইন্টারভিউয়ে ডাক পাওয়া প্রার্থীদের তালিকায় দাগি কারা? এসএসসি-কে সেই দাগিদের খুঁজতে বললেন বিচারপতি অমৃতা সিংহ। তাঁর নির্দেশ, ২০১৬ সালের নিয়োগ পরীক্ষায় পাশ করে চাকরি করা দাগিদের বিস্তারিত তথ্য-সহ তালিকা প্রকাশ করতে হবে এসএসসি-কে। দাগিদের ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) প্রকাশ করারও নির্দেশ দেন বিচারপতি। আদালত জানায়, দাগিদের নাম, অভিভাবক অথবা বাবার নাম-সহ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। সেই তালিকা থেকেই স্পষ্ট হবে দাগিদের তথ্য। আগামী ৩ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের অভিযোগ ছিল, পুরো নম্বর পেয়েও নতুন পরীক্ষার্থীদের অনেকে ইন্টারভিউয়ে ডাক পাননি। কেউ কেউ আবার প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা দেখিয়ে অতিরিক্ত ১০ নম্বর পেয়ে গিয়েছেন। পার্শ্বশিক্ষকদের অতিরিক্ত ১০ নম্বর দেওয়া নিয়ে এসএসসির বক্তব্য জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। মামলাকারীদের আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারির সওয়াল, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অভিজ্ঞতার জন্য অতিরিক্ত ১০ নম্বর দেওয়ার কথা জানিয়েছিল এসএসসি। পার্শ্বশিক্ষকেরাও ওই সুবিধা পাবেন কি না, এসএসসির কাছে জানতে চাওয়া হয়। তারা জানায়, অতিরিক্ত ১০ নম্বর পার্শ্বশিক্ষকদের জন্য প্রযোজ্য নয়। অথচ ফলপ্রকাশের পরে জানা যায়, অতিরিক্ত নম্বর দু’জন পার্শ্বশিক্ষককে দেওয়া হয়েছে। এসএসসির আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগ সত্যি হলে ওই দু’জনের চাকরি চলে যাওয়া উচিত। বিচারপতি সিংহ জানান, ওই বিষয়টি খতিয়ে দেখে আদালতকে জানাক এসএসসি। আগামী ২ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
অন্য দিকে, উত্তরপত্র বদলের অভিযোগ তুলে মামলা করেন একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। তাঁদের আইনজীবী শুভ্রপ্রকাশ লাহিড়ির সওয়াল, এসএসসি প্রথমে প্রাথমিক উত্তরপত্র দেয়। পরে তারা চূড়ান্ত উত্তরপত্র প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, কিছু প্রশ্নে দু’টি উত্তরকেই সঠিক বলা হয়েছে। ভুল উত্তর দিলেও নম্বর দেওয়ার কথা জানিয়েছে এসএসসি। এর ফলে যাঁরা সঠিক উত্তর দিয়েছেন এবং যাঁরা ভুল উত্তর দিয়েছেন, দু’জনই একই নম্বর পাবেন। চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের যুক্তি, এসএসসির এমন অবস্থানের ফলে প্রতিযোগিতার ভারসাম্য নষ্ট হবে। এই বিষয়েও রিপোর্ট চেয়েছে আদালত। এসএসসিকে বিচারপতি সিংহের নির্দেশ, মামলাকারীদের অভিযোগ বিবেচনা করতে হবে। কোন প্রশ্নে এবং কেন দু’টি উত্তরের জন্য নম্বর দেওয়া হল, তা জানাতে হবে এসএসসি-কে। আগামী ১ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
এসএসসির একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় যাঁরা ইন্টারভিউয়ের ডাক পেয়েছেন, তাঁদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তার পরেই তৈরি হয় বিতর্ক। শিক্ষকদের একাংশ এসএসসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, এসএসসির নিয়োগ পরীক্ষার ইন্টারভিউয়ের তালিকায় নাম রয়েছে ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাঁদের পরীক্ষায় বসায় কথা নয়। পুরো নম্বর পেয়েও নতুন পরীক্ষার্থীদের অনেকে ইন্টারভিউয়ে ডাক পাননি। অথচ কেউ কেউ আবার প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা দেখিয়ে অতিরিক্ত ১০ নম্বর পেয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে কী ভাবে তাঁদের এই সুযোগ দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাকিরা। আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের দাবি, আংশিক সময়ের জন্য কাজ করতেন এমন কর্মীরাও তাঁদের কাজের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে একই সুবিধা নিয়েছেন। এই নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন শিক্ষকেরা।
এসএসসির একাদশ-দ্বাদশের ইন্টারভিউয়ের তালিকায় ২০ হাজার জনের নাম থাকলেও যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করেছেন, তাঁদের অনেকেরই নাম নেই। অভিযোগ, নতুন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে ৬০-এ ৬০ পেয়েও ইন্টারভিউয়ে ডাক পাননি। ক্ষুব্ধ তাঁরাও। যদিও এসএসসি-র দাবি, সব কিছু নিয়ম মেনেই হয়েছে। এ বছর একাদশ-দ্বাদশে শূন্যপদ ছিল ১২,৪৪৫টি। লিখিত পরীক্ষার পর ২০ হাজার পরীক্ষার্থীর নামের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এই ২০ হাজার চাকরিপ্রার্থীকে প্রথমে নথি যাচাইকরণ এবং পরে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হবে। অর্থাৎ, ইন্টারভিউয়ে প্রতিটি শূন্যপদের জন্য ডাকা হয়েছে ১৬ জনকে।