থানার তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ক্ষুব্ধ কলকাতা হাই কোর্ট। এ সংক্রান্ত একটি মামলায় বুধবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘পুলিশ ঘুষ নেবে এটা কি সরকারি নীতি? ঘুষ নিলে কেন পুলিশকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না? পুলিশের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ না করলে মানুষ কী ভাবে ভরসা পাবে?’’
অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে রাজ্যের কাছে নতুন করে রিপোর্ট চেয়েছে আদালত। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি। আদালত সূত্রের খবর, হুগলি জেলার তারকেশ্বরে বিল্টু হাজরা নামে এক ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে প্রতিবেশীর গন্ডগোল হয়। বিল্টু তারকেশ্বর থানায় অভিযোগ জানান। তাঁর দাবি, অভিযোগ পেয়েও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। উল্টে বিল্টুকেই মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়। তিনি জানতে পারেন, এর পিছনে পুলিশের হাত রয়েছে। পরে থানার তদন্তকারী অফিসারের একটি অডিয়ো রেকর্ড প্রকাশ্যে আসে (আনন্দবাজার ডট কম যার সত্যতা স্বীকার করেনি)। সেখানে শোনা যাচ্ছে, তারকেশ্বর থানার মহিলা অফিসার মোটা অঙ্কের ঘুষ নেওয়ার কথা জানাচ্ছেন।
এর পরে ওই ঘটনায় হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন ইঞ্জিনিয়ার। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের সিঙ্গল বেঞ্চে প্রথমে মামলাটি ওঠে। সেই রায়ে সন্তুষ্ট না হয়ে মামলাকারী ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন। বুধবার ওই মামলার শুনানিতে বিচারপতি বসাক এবং বিচারপতি রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় রাজ্য। রিপোর্টে ঘুষ চাওয়ার কথা জানানো হয়। একই সঙ্গে রাজ্যের বক্তব্য, ওই মহিলা পুলিশ অফিসার ঘুষ নেওয়ার কথা বলেছিলেন তা সত্য। কিন্তু তিনি কারও কাছ থেকে টাকা নেননি। রাজ্য জানায়, তারকেশ্বর থানার ওই মহিলা পুলিশ অফিসারকে সতর্ক করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন:
রাজ্যের দেওয়া ওই রিপোর্ট দেখে বিচারপতি বসাকের মন্তব্য, ‘‘অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় তদন্ত? কেন তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না? ওই অফিসারের এখনই চাকরি চলে যাওয়া উচিত। এমনটা হলে মানুষ পুলিশের উপর ভরসা রাখবে কী ভাবে?’’ বিচারপতির আরও মন্তব্য, ‘‘যে পুলিশ অফিসার ঘুষ চান, তিনি কী তদন্ত করবেন আদালতের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। পুলিশ টাকা চাইবে এটা কি সরকারের নীতি?’’ আদালত জানায়, পরবর্তী শুনানির দিন ওই ঘটনায় নতুন করে রাজ্যকে রিপোর্ট দিতে হবে। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের পুলিশের ঘুষের দাবি সংক্রান্ত একটি মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ দোষী সাব-ইনস্পেক্টরকে সাসপেন্ড করার জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজিকে নির্দেশ দিয়েছিল।